×

সাহিত্য

অদৃশ্য আতঙ্কে পার করছি নিষ্প্রাণ সময়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২০, ০৮:৪৭ পিএম

অদৃশ্য আতঙ্কে পার করছি নিষ্প্রাণ সময়

কবি আসাদ মান্নান

অদৃশ্য আতঙ্কে পার করছি নিষ্প্রাণ সময়

কবি আসাদ মান্নান

‘সুন্দর দক্ষিণে থাকে’, ‘হে অন্ধ জলের রাজা’, ‘সৈয়দ বংশের ফুল’ ‘ভালোবাসা আগুনের নদী’র মতো প্রসিদ্ধ কাব্যগ্রন্থের কবি আসাদ মান্নান। তিনি সত্তরের দশকের অন্যতম কবি। তার কবিতার ভাব-ভাষা স্বকীয়, যা বাংলা কবিতায় নতুন সংযোজন সময়ের কাছে সব জল হাওয়া তুলে দেয়া, শব্দকে বোধের সঞ্চয়ে রেখে নিজেকে আত্মার ভেতর বিমূর্ত করে তোলা কিংবা অনুষঙ্গ ও বিষয়কে প্রকৃতি, সমাজ ও ইতিহাসের পরিচ্ছন্নতায় নিয়ে আসা কবির কাজ। যে কাজটির জন্য কবিকে অপেক্ষা করতে হয়। তৈরি করতে হয় বিস্তৃত আকাশ, পরিশীলিত পথ। কবি আসাদ মান্নান তেমনই এক কবি। যিনি সময়ের যন্ত্রণাকে কবিতায় ধারণ করে যাচ্ছেন।

কবি আসাদ মান্নানের করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট এই কবি বললেন, মুহূর্তের সমবায়ে যে কাল বা সময় তা তো আমার একার নয়- সবাইকে নিয়েই তো আমার অস্তিত্ব ও অবস্থান। এও মানি একা কিন্তু মানুষ নয়- পুরো জগৎ-জীবন ও প্রকৃতির মধ্য দিয়ে মানুষের বেঁচে থাকা- দৈনন্দিন জীবনযাপন। কাজেই নিত্য বহমান স্বাভাবিক যাপনপ্রক্রিয়ায় যদি অস্বাভাবিক কিছুর প্রাদুর্ভাব ঘটে তা হলে যে বলতে হয় আমি ভালো নেই , আমরা ভালো নেই- পৃথিবীও ভালো নেই। এ অসুখ শুধু কি মানুষের ? না, সারা পৃথিবীর। মানুষ যদি ভালো না থাকে, সুস্থ না থাকে তা হলে পৃথিবী কী করে ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবে? পৃথিবীর এখন অসুখ। আমি জানি না কবে এ গ্রহণকাল শেষ হবে, পৃথিবী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে, মানুষ হাসবে, শিশুরা খেলবে, পাখিরা উড়বে, পশুরা চরবে। তো সব কিছু বিবেচনা করে বলতে পারি একটা দুর্বিসহ স্তব্ধতার ভেতর দিয়ে সময় কাটছে ঘড়ির কাটায়। অদৃশ্য আতঙ্কে পার করছি নিষ্প্রাণ সময়। তারপরও বলবো, আশা ছাড়িনি ; আশাই তো মানুষকে পথ দেখিয়েছে কালে কালে; এবারও মানুষ বেঁচে থাকার উপায় ও পথ খুঁজে নেবে।

[caption id="attachment_213895" align="alignleft" width="277"] কবি আসাদ মান্নান[/caption]

লিখতে পারছেন কি? না লিখলে কিভাবে সময় কাটছে? এর জবাবে তিনি বলেন, নিয়মিত লেখক বা কবি যে কোনো সময়ে লিখতে পারেন, আমাকে নিয়মিত বলা যাবে না। তা ছাড়া আমি কবিতা ছাড়া অন্য কিছু লিখি না। প্রতিদিন কবিতাকে ভাবনায় রাখি। কবিতা লেখার চেয়ে বেশি পড়ি। বলা যায় যেহেতু এখন অন্য কোনো তাড়া নেই রাতদিন কোন-না-কোনভাবে শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্র নিয়ে সময় পার করছি। একটি দীর্ঘ কবিতা লেখার কাজে হাত দিয়েছি। দেখা যাক কতদূর যেতে পারি।

এ অখণ্ড অবসরে নিশ্চয়ই কিছু পড়ছেন? কি পড়ছেন? পড়ায় মন বসাতে পারছেন কি? বললেন আসাদ মান্নান, যেখানে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজমান সেখানে তো অবসর কথাটা আসে না। ইচ্ছে হয় আক্রান্ত মানুষদের জন্য যদি কিছু করতে পারতাম! কিন্তু সে সুযোগ আমার নেই। একজন সৃজনমনস্ক মানুষ হিসেবে প্রতিদিন তো কিছু না কিছু পড়তে হয়। কিন্তু এ মুহূর্তে আমি কিছুই পড়তে পারছি না। কিছু বিদেশি চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিক নাটক দেখছি। করোনার আপডেট নিচ্ছি অনলাইনে, টেলিভিশনে।

আপনার কি মনে হয় এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ? এ থেকে উত্তরণের পথই বা কী? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মানবজাতিকে মানবসুলভ আচরণে ফিরে না আসলে বলতে পারি মানুষই একদিন নিজ হাতে তার বিনাশ ডেকে আনবে। তারই তো পূর্বাভাষ এই করোনাসংক্রান্তি। নামটাও দেখো কেমন সুন্দর- নভেল করোনা! কী নির্মম পরিহাস ! এ থেকে উত্তরনের পথ মানুষকেই বের করতে হবে। আশা করি পথ একটা বের হবে। একটা বড় ধরণের শিক্ষা দিয়েছে করোনা। নতুন করে উপায় ও পথ বের করতে হবে। একে নির্মূল করা যাবে বলে মনে হয় না। তবে দ্রুত প্রতিরোধ করবার অস্ত্র ও উপায় বের করতে হবে সর্বশক্তি দিয়ে। সব দেশের মানুষ ও সরকারকে এক হয়ে অভিন্ন লক্ষে কাজ না করার উপায় নেই। এক হতেই হবে। বাঁচতে যদি চায় মানুষ তবে তাকে সবাইকে নিয়ে বাঁচতে হবে। একা বাঁচার সুযোগ নেই।

মানুষ অদম্য, কথা শুনছে এ ব্যাপারে কোনো পরামর্শ আছে কী জানতে চাইলে এই কবি বলেন, ঘরে থাকুন, দূরে থাকুন। নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচান। মানুষকে বাঁচান। প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখান মানুষ হবার। প্রকৃতি বাঁচলে আপনি বাঁচবেন। আপনি বাঁচলে মানুষ বাঁচবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App