করোনা সংকট মোকাবিলা করাই এখন মহারাজনীতি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৪১ এএম
করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবিলার একমাত্র উপায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে এবং ইতোমধ্যে এই ছুটি আরো বাড়িয়েছে। নিম্নবিত্ত মানুষের ঘরে ঘরে প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে। আপনারা শুধু ঘরে থাকুন। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করাই এখন মহারাজনীতি বললেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। গত বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) ভোরের কাগজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। সাক্ষাৎকারে জাতির এই ক্রান্তিকালে রাজনীতিবিদ হিসেবে তার ভ‚মিকা, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভূমিকা, ১৪ দলীয় জোটের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন নাসিম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে উদারতার মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মন্তব্য করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, করোনার কারণে শ্রমজীবী মানুষ এখন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি যারা বিত্তবান, যাদের সামর্থ্য আছে এমন বিভিন্ন পেশার মানুষ যদি শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যেকের নিজের গ্রাম বা শহরের আশপাশের গরিব-দুঃখী ও শ্রমজীবী মানুষের পাশে এভাবে দাঁড়াতে পারি, তাহলে এর চেয়ে বড় কাজ আর কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। এখন কর্মজীবী, শ্রমজীবী বেকার মানুষের, যাদের দৈনিক আয় করে খেতে হয়- তাদের পাশে দাঁড়ানোই রাজনৈতিক কর্মীদের বড় করণীয়। নাসিম বলেন, সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরসহ সব জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে মানবতার সেবায় এই মুহূর্তে নেমে পড়–ন। দেশের শ্রমজীবী মানুুষকে বাঁচাতে কোনো কালক্ষেপণ করা যাবে না।
করোনা প্রতিরোধে দেশে কার্যত এখন লকডাউন চলছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, করোনা থেকে বাঁচতে সব মানুষই এখন ঘরে বন্দি হয়ে আছে। যাদের আর্থিক সঙ্গতি আছে তারাই সাময়িকভাবে দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারছেন এবং পারবেন। কিন্তু যারা শ্রমজীবী মানুষ, যাদের দিনের আয়ের ওপর নিজ পরিবারের খাবার জোগাড় করতে হয়, তাদের সামনে এখন খুবই দুঃসময়।
নাসিম বলেন, মনে করি আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের সব নেতাকর্মীদের যার যার সাধ্য অনুযায়ী এই শ্রমজীবী মানুষ যেমন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, যারা গ্রামে ঝুপড়ি ঘরে বা শহরে বস্তিতে বসবাস করেন তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা যারা রাজনৈতিক কর্মী, তারা যদি নিজেরা নিজস্ব খরচে এলাকাভিত্তিক কয়েক বেলা বা কয়েকদিনের জন্য চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার তাদের জন্য সরবরাহ করতে পারি তাহলে এসব শ্রমজীবী, গরিব দুঃখী মানুষের পেটে খাবার যাবে।
এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নিবিড়ভাবে মানুষের পাশে থাকতে মুখপাত্র হিসেবে ১৪ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, প্রতিদিনই টেলিফোনে দেশের সব জেলা-উপজেলায় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। আর কেন্দ্রীয় নেতাদের ওই নির্দেশনা মেনে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। সংকট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ১৪ দল মানুষের পাশে থাকবে। দলীয়ভাবে অসহায়, দুঃস্থ ও শ্রমজীবী মানুষের তালিকা করে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি আমরা আমাদের জেলার বিভিন্ন উপজেলার সভাপতি ও জনপ্রতিনিধিদেরও মোবাইল ফোনে জানিয়ে দিয়েছি। এছাড়াও করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারি এবং দলীয় যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি, বিনামূল্যে মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবানসহ করোনা প্রতিরোধমূলক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে। মতলববাজ, গুজব সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনকে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ নাসিম জানান, করোনা ভাইরাসে জমায়েত এড়িয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এলাকাভিত্তিক সংসদ সদস্য ও নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে এখন মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চেয়েও বেশি প্রয়োজন খাবার। এজন্য প্রত্যেক নেতাকর্মীকে তাদের এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করার নির্দেশনা রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া আমার নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জেও আমার কর্মীদের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছি।