×

সাহিত্য

করোনার ধাক্কায় ভাবনা হয়ে যাচ্ছে এলোমেলো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২০, ১১:২০ এএম

করোনার ধাক্কায় ভাবনা হয়ে যাচ্ছে এলোমেলো

হাশেম খান

বরেণ্যে শিল্পী হাশেম খান। যিনি ছোট বড় সবারই মন রাঙিয়েছেন তার তুলির আঁচড়ে। ১৯৫২ সালে সেই স্কুলে পড়ার সময়ই ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে এসে তিনি যোগ দিয়েছিলেন রাজপথে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে। সেই যে রাজপথে নেমেছিলেন আর কোনোদিন ঘরে ফেরা হয়নি তার। তুলি আর কলম হাতে যুদ্ধ করেই যাচ্ছেন। কিন্তু করোনার নীল চোখের শাসানিতে অনেকটা গৃহবন্দিই আছেন এই শিল্পী। করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এক প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট এই শিল্পী বললেন, নাহ্, কিছুই হচ্ছে না। করোনার ধাক্কায় ভাবনাগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বারবার। ছবি আঁকতে পারছি না। লিখতে বসে ২/৪ পাতা লেখার পর আর লেখা এগুচ্ছে না। এতটাই মন খারাপ করা সময় আর কাটাইনি।

তিনি বলেন, বিশ্ব মানবতা এমন ধ্বংসের মুখে আর পড়েনি। পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হবে তা ভাবতেই পারিনি। অতীতে আর কখনো দেখা যায়নি এমন দুঃসময়। মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। এই মহামারি সমগ্র মানবতাকে এমন এক সময়ে গ্রাস করেছে, যে সময়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানুষ বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে এবং সমগ্র দুনিয়াকে ধ্বংস করতে সক্ষম এত বেশি! কিন্তু শক্তিমত্তার মধ্যেও ছোট্ট একটা ভাইরাসের কাছে মানুষ নতজানু হয়েছে! পৃথিবী ধ্বংস করার জন্য তো মারণাস্ত্রের দরকার নেই। করোনা ভাইরাস এমন এক অজানা আতঙ্ক যে বিশ্বের কোনো দেশই এর থেকে মুক্ত নয়। করোনা ভাইরাসকে যা-ই বলা হোক, এটি মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত। মনে হচ্ছে ধ্বংসের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি আমরা! অনেকটা হতাশা

ঝেড়ে এই শিল্পী বলেন, ১৯৭১ সাল। ঢাকায় যখন গণহত্যা শুরু হয় আমি আমার বড় ভাই ড. সুলেমান খানসহ চাঁদপুরে গ্রামের বাড়িতে চলে যাই। সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধে সবাইকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেই। সেখানেই ২৬ এপ্রিল রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর মুসলিম লীগ তাদের দলবলসহ অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে খুবই সুপরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। রাজনৈতিক কারণেই স্থানীয় মুসলিম লীগের সঙ্গে পূর্বশত্রুতা ছিল বড় ভাইয়ের। খুনিরা জানত আমিও বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীকার আন্দোলনের একজন সক্রিয় সংগঠক। আওয়ামী লীগের ৬ দফাসহ অন্যান্য আন্দোলনের পোস্টার আমার হাতে করা। খুনিরা দরজা ভেঙে প্রথমেই গুলি চালায় বড় ভাইয়ের বুকে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তারপর একে একে গুলি চালায় আমি, আমার মা এবং ভাগ্নি মঞ্জুর ওপর। আমি পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মরার মতো মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে একজন আমাকে আবার গুলি করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু আমার রক্তাক্ত অবস্থা দেখে ফিরে গেলে আমি তখন বেঁচে যাই।

তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই। নানা দুর্যোগে-সংকটে বাঙালি জাতি সম্মিলিতভাবে সেগুলো মোকাবিলা করেছে। ১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনা ভাইরাস মোকাবিলাও একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। সবার প্রচেষ্টায় আমরা এ যুদ্ধে জয়ী হবোই। সবাইকে বলব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।

চারদিকে লকডাউন, মানুষ হাঁসফাঁস করছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষরা ভোগান্তিতে পড়ে গেছে এ নিয়ে কোনো ভাবনা, উদ্যোগ আছে কী না জানতে চাইলে হাশেম খান বলেন, বস্তিবাসী, নিম্ন আয়ের মানুষদের দিকে তাকালে মুখে ভাত ওঠে না। আমি আমার সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করছি। অন্যদেরও বলছি, আসুন আমরা মানবতার হাত বাড়াই। হঠাৎ বেকার হয়ে যাওয়া বাবা যখন তার সন্তানের মুখে আহার জোগাতে ব্যর্থ হন, তখন তার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন। আজকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে মনে হলো তিনি তাদের পাশে আছেন। এই ভাবনাকে মাথায় নিয়ে এগুতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App