×

জাতীয়

সামাজিক সংক্রমণ ঠেকানো বড় চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০৯:২৫ এএম

সামাজিক সংক্রমণ ঠেকানো বড় চ্যালেঞ্জ

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন প্রশাসন।

দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। এ পর্যন্ত গতকাল শনিবারই সর্বোচ্চসংখ্যক আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। এদিন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ জন, মৃত্যু হয়েছে দুজনের। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ জন। মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। এই সংক্রমণ কেবল যে প্রবাসীদের মাধ্যমেই হচ্ছে, এখন আর সে কথা বলা যাচ্ছে না। কারণ আক্রান্তদের ১২ জন প্রবাসী কিংবা পূর্বে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে না এসেও আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল আক্রান্ত ৯ জনের মধ্যে দুই জন, আগের দিন শুক্রবার আক্রান্ত ৫ জনের মধ্যে ৪ জন, পহেলা এপ্রিল আক্রান্ত তিন জন ও ৩১ মার্চ একজন কীভাবে সংক্রমিত হয়েছেন তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। এই বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এছাড়া টোলারবাগের মৃত দুজন ও আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে মৃত এক ব্যক্তি কীভাবে সংক্রমিত হয়েছিলেন সেই তথ্যও এখনো পায়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। তখন থেকেই বলা হচ্ছে, দেশে সামাজিক সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) শুরু হয়ে গেছে। তবে তা সীমিত আকারে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে তা আর সীমিত পরিসরে আছে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, এখন নমুনা পরীক্ষার ব্যাপ্তি বেড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়বে। আর দেশে যেসব প্রবাসী এসেছেন তাদের অনেকেরই খোঁজ মিলছে না বলে গণমাধ্যমে জানতে পারছি। আক্রান্ত কারো কারোর সুনির্দিষ্ট তথ্য অর্থাৎ তিনি কীভাবে সংক্রমিত হয়েছেন তা পাওয়া যাচ্ছে না। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে- এটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

দেশে এখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ভোরের কাগজকে বলেন, টোলারবাগের কেসের (আক্রান্ত ব্যক্তি) ক্ষেত্রেই আমরা বলেছিলাম

সীমিত আকারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। তবে এখন দিন যতই যাচ্ছে আমরা ততই সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করছি। বেশ কিছু কেসের ক্ষেত্রে তারা কীভাবে সংক্রমিত হয়েছেন সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য আমরা পাচ্ছি না। তাই সীমিত আকারের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এখন বিস্তার লাভ করেছে, এটি বলা যায়।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ মনে করেন, দেশে সীমিত পর্যায়ে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে। গতকাল দেশে করোনা ভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যারা বিদেশ থেকে এসেছেন প্রথমে তাদের মাধ্যমে পরিবারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সেসব সদস্যের সঙ্গে যারা ওঠা-বসা করেন তাদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যেমন মিরপুরের ঘটনা। সেখানে তারা নামাজ পড়তেন একসঙ্গে, এলাকার ভেতরে তারা একসঙ্গে হাঁটাহাঁটি করতেন। এরা কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্য ছিলেন না। তবে এটা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ, এটাকে কমিউনিটি সংক্রমণ বলাই যায়। এখন পর্যন্ত পরীক্ষার সংখ্যা অনেক বেশি নয়। এটা এখনো সীমিত পর্যায়। তবে অবশ্যই কমিউনিটি সংক্রমণ আমরা বলতে পারি। তাই পরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দেয়া হবে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

নতুন আক্রান্ত ৯, মৃত্যু ২ জনের : গতকাল করোনাবিষয়ক নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, দেশে নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ জন। মৃত্যু হয়েছে আরো দুজনের। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৭০ জন। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ জনে। আক্রান্ত ও মৃত ব্যক্তিদের বয়স সম্পর্কে তিনি জানান, আক্রান্তদের দুজন শিশু। তাদের বয়স ১০ বছরের কম। ৩ জনের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ২ জন ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, একজন ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সের মধ্যে এবং একজনের বয়স ৯০ বছর। আক্রান্ত ৫ জন আগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন। ২ জনের বিদেশফেরত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন। আর মৃত ব্যক্তিদের একজনের বয়স ৯০ এবং অপরজনের বয়স ৬৮ বছর।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫৫৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৩৪টি। ৪৬৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। আরো ৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ পর্যন্ত ৩০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হাসপাতালে আছেন ৩১ জন।

বিএসএমএমইউর ফিভার ক্লিনিকে ৯০ রোগী, ২১ নমুনা সংগ্রহ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিভার ক্লিনিকে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত ৯০ জন রোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে গতকাল। এর মধ্যে ২১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বিএসএমএমইউর ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে ৪৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হলো। পরীক্ষার ফলাফল আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আজ রবিবার থেকে চালু হচ্ছে বিশ^বিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা পরিচালিত ‘বিশেষজ্ঞ হেলথ লাইন’। টেলিফোনে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ সেবাকেন্দ্র বিশেষজ্ঞ হেলথ লাইনের উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App