×

অর্থনীতি

লকডাউনে কৃষকের মাথায় হাত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২০, ১১:৪৭ এএম

লকডাউনে কৃষকের মাথায় হাত
লকডাউনে কৃষকের মাথায় হাত

ফাইল ছবি

বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশজুড়ে চলছে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি। মাঠজুড়ে যখন গ্রীষ্মকালীন সবজির সমাহার, ঠিক সেই সময় এক প্রকার লকডাউন হয়ে পড়েছে দেশ। শহরের মানুষের বড় একটি অংশ এখন গ্রামে। যারা আছেন, করোনা আতঙ্কে তাদের অনেকেই বাজারে যাচ্ছেন না। কেউ কেউ আগেই বেশি করে তরি-তরকারি কিনে ভরে রেখেছেন ফ্রিজ। ফলে বাজারে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা নেমেছে এক-তৃতীয়াংশে। অপরদিকে করোনা ঝুঁকির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে পণ্যবাহী ট্রাক ভাড়া। এজন্য গ্রাম থেকে শহরে সবজি ও অন্যান্য কৃষিপণ্য আসার পরিমাণ কমে গেছে অনেক। এতে সবজি উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোতে মাথায় হাত উঠেছে কৃষকের। দাম না থাকায় সবজি তোলায় আগ্রহ পাচ্ছেন না তারা। ফলে বহু কষ্টে ফলানো সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ ও কৃষক নেতারা বলছেন, আগামী ২ সপ্তাহ এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের কৃষি ও কৃষক বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। ভেঙে পড়বে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও।

করোনা ভাইরাস রোধে চলমান দীর্ঘ ছুটিতে রাজধানীর বাজারগুলোতে বেচাকেনায় নেমেছে স্থবিরতা। রাজধানীর রামপুরা এলাকার বিভিন্ন কাঁচা বাজারে দেখা গেছে আগের মতো ক্রেতা-বিক্রেতা নেই। চাল বাদে সব ধরনের কাঁচাপণ্যের দাম কেজিতে কমেছে ৫-৩০ টাকা পর্যন্ত। পণ্য বিক্রির এই প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজার ও আড়তেও। কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ী আড়তে আগে যেখানে দৈনিক ৪০০-৫০০টি ট্রাক আসত এখন তা নেমে এসেছে ৫০টিতে। রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে পাইকাররা যাচ্ছেন না আড়তে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে যশোর থেকে শসা ও বেগুন এনেছেন কাদের মিঞা। দেশজুড়ে সাধারণ ছুটির আগে তিনি এই ২টি পণ্য ২০০-২৫০ মণ নিয়ে আসতেন। গতকাল মঙ্গলবার নিয়ে এসেছেন মাত্র ৫০ মণ। তারপরও আগের মতো গ্রাহক পাচ্ছেন না। কিন্তু ঠিকই তার যশোরের আড়তে ৬ জন শ্রমিককে মজুরি দিচ্ছেন।

যশোরের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলাজুড়ে হাট-বাজারগুলো প্রায় বন্ধ অবস্থা। পুলিশ সাধারণ মানুষকে হাট-বাজারে আসতে নিষেধ করছে। এর ফলে বাজারে আগের মতো পণ্য আসছে না। যশোরের প্রধান প্রধান কৃষিপণ্য বাজার রুপদিয়া, বারবাজার, শার্শার হাটে কেনাবেচা তলানিতে নেমেছে।

ঢাকায় পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে কাছের জেলা মানিকগঞ্জেও এর প্রভাব পড়েছে। সেখান থেকে কৃষিপণ্য আসা কমে চার ভাগের এক ভাগে নেমেছে। এ জেলায় মাঠে মাঠে ফসল তোলার জন্য প্রস্তুত থাকলেও কৃষি-শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। নগদ টাকার প্রয়োজনে কৃষক নিজেরা ফসল কেটে বাজারে আনলেও দাম পাচ্ছেন না। ফলে যেসব কৃষক অর্থকরী ফসল চাষ করেন তারা পড়েছেন সংকটে। এভাবে ১৫ দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন। জেলার সাটুরিয়া উপজেলার কাঁচামালের আড়ত থেকে প্রতিদিন ভোরে ৪০-৫০টি ছোট পিকআপে করে শাক-সবজি ঢাকায় নেয়া হতো। করোনা ভাইরাসের কারণে সবজি পাঠানো পিকআপ নেমেছে মাত্র ২টিতে। জেলার ঘিওর এলাকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের কারণে তারা সবজি খেত থেকে আগের মতো সবজি তুলতে পারছেন না। যদিও-বা তুলছেন, পরিবহন ও ক্রেতা সংকটের কারণে সীমিত আকারে মানিকগঞ্জ সদরে নিয়ে আসছেন।

কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি এ টি এম ফারুক বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন এ বাজারে অন্তত ৩০০ ট্রাক সবজি কেনাবেচা হয়। কিন্তু গতকাল সোমবার রাতে এখানে ১০০ ট্রাক সবজিরও কাটতি ছিল না। পাইকারি ব্যবসায়ী যারা বস্তায় বস্তায় সবজি কিনত তারা কয়েক কেজি করে সবজি কিনে পাড়া-মহল্লায় খুচরায় বিক্রি করছেন। তারাও দিন পার করছেন কোনোমতে। সব মিলিয়ে এ খাতে নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এখনই কৃষককে সহায়তা দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন কৃষক নেতারা। কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, উদ্ভ‚ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার অন্যান্য খাতের ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা নিচ্ছে, সহায়তা দিচ্ছে, কৃষিতেও সেরকম ভর্তুকি দিতে হবে। তা না হলে খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App