×

মুক্তচিন্তা

করোনা নিয়েও সর্বনাশা খেলায় পাকিস্তান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২০, ১০:০৫ পিএম

‘করোনা’ সারাবিশ্বে আতঙ্ক-উদ্বেগ সৃষ্টি হলেও পাকিস্তান ব্যতিক্রম। সেখানে করোনার ভয়াবহ বিস্তার ঘটলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। বরং এই সুযোগে সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য সেনাবাহিনী খুবই তৎপর। দেশটিতে গণতান্ত্রিক সরকারকে বিতর্কিত করাই যেন তাদের একমাত্র কাজ। এ কারণে গত ৫০ বছরে একমাত্র প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সরকার ছাড়া আর কেউই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন বলে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রচার ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে জানা গেল সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরান খানের ‘হানিমুন পিরিয়ড’ শেষ হয়েছে। তারা আর তাকে বরদাশত করতে পারছে না। এ কারণে ইমরান খানের কোনো আদেশই আমলে নেয়া হচ্ছে না। তাই সাবেক ক্রিকেট তারকার এখন ক্ষমতায় থাকা আর না থাকা এক কথা। ইতোমধ্যে তিনি জনগণের কাছে যথেষ্ট হাসির পাত্র হয়েছেন। বিরোধী দলে থাকাকালে বারবার বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে পাকিস্তানকে সুইডেন বানাবেন। এখন পাকিস্তানের ‘স্টেকহোল্ডার’রা ইমরানকে বলছেন, ‘সুইডেন নয়, তোমাকে দশ বছর সময় দিলাম তুমি পাকিস্তানকে বর্তমান বাংলাদেশের সমান বানিয়ে দেও’। এছাড়া ক্ষমতায় গেলে তিনি কাশ্মির দখল করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখন বলছেন, ‘যুদ্ধ কোনো মীমাংসা এনে দেবে না।’ এই ইমরানকে বিশেষ করে পাকিস্তানের মৌলবাদীরা আর সহ্য করতে পারছে না, আগেও তাদের পছন্দের ছিলেন না। কিন্তু সেনাবাহিনীর সমর্থন থাকায় মোল্লা-মৌলবিরা এতদিন চুপ ছিলেন। সেনাবাহিনী ইমরান খানকে এখন পছন্দ করছেন না টের পেয়ে তারাও পেছন থেকে আঘাত করতে চাচ্ছেন। এসব কারণে করোনা ভাইরাস মাহমারির আকার ধারণ করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। শুরু হয়েছে মৃত্যুর মিছিল। এই দুঃসময়েও পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে পাক সেনাবাহিনী ক্ষমতার গন্ধ শুঁকতে শুরু করেছে। ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও পাকিস্তানে লকডাউন ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। ইমরান খান বুঝতে পেরেছেন তিনি লকডাউন ঘোষণা করলেও কেউ তা মানবে না। আর মানানোর দায়িত্ব যাদের তারা শুধু তামাশা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। করোনা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশই উদ্বিগ্ন। সেটা বুঝা যায়, মার্চ মাসে সার্কের শীর্ষ সম্মেলনে। ভিডিও সম্মেলনে সব দেশের শীর্ষ নেতা উপস্থিত থাকলেও ইমরান খান ছিলেন গরহাজির। তার বদলে ওই সম্মেলনে অংশ নেন ইমরান খানের স্বাস্থ্যবিষয়ক সহকারী ডা. জাফর মির্জা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় করোনা মোকাবিলায় ১৮.৮ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন করা হবে। আফগানিস্তানের মতো দেশও সেই তহবিলে অর্থদানে সম্মত হয়। অপরদিকে পাকিস্তান ওই তহবিলে এখন পর্যন্ত এক পয়সাও দেয়নি। উল্টো তহবিলের সঠিক ব্যবহারের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পাকিস্তানের আন্তরিকতার অভাবটা সার্কভুক্ত সব দেশের চোখেও ধরা পড়েছে। ইসলামাবাদের জেলা প্রশাসক মহম্মদ হামজা অবশ্য টুইটারে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জনগণকে করোনা পরীক্ষার আর্জি জানিয়েছেন। সচেতনতার অভাব সর্বত্র। সরকারও নির্বিকার। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে দেশটিতে তীব্র খাদ্য সংকট। ওষুধ বা করোনা পরীক্ষা তো দুরস্ত, খেতে পর্যন্ত পারছেন না পাক অধিকৃত কাশ্মির এবং পাঞ্জাব বা উত্তরাঞ্চলের মানুষরা। করোনা আতঙ্কে আয়-রোজগার বন্ধ। মূল ভূখণ্ডের চিত্রটাও প্রায় একই রকম। পাকিস্তানের আর্থিক দুরবস্থা চরমে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় পাকিস্তানের নাগরিকরা ভারতীয় সাহায্য চাইছে। পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুদের অবস্থা আরো শোচনীয়। তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে পাকিস্তান সরকার। বলা যায়, সেনাবাহিনীর উচ্চাশা আর ইমরানের দুর্বল নেতৃত্বের যুগলবন্দিতে পাকিস্তানে করোনার রমরমা আন্তর্জাতিক দুনিয়ারও নজরে এসেছে। মৌলবাদী আর জঙ্গিরা এখন আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে করোনা দুর্যোগেও নাশকতামূলক মনোভাব এবং সেনাবাহিনীর সর্বনাশা ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র নতুন করে উদ্বিগ্ন করে তুলছে প্রতিবেশী দেশগুলোকে। ফারাজী আজমল হোসেন : সাংবাদিক ও লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App