×

অর্থনীতি

বিপর্যয়ে রাইড শেয়ারিং কর্মহীন লাখ লাখ যুবক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২০, ১২:৩৫ পিএম

বিপর্যয়ে রাইড শেয়ারিং কর্মহীন লাখ লাখ যুবক

রাইড শেয়ারিং/ ফাইল ছবি

রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে যারা অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, করোনার ভয়াল থাবায় আজ বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে তাদের জীবনে। চলছে ‘লকডাউন’। নেই কোনো উপার্জন। জীবন যেন থমকে গেছে। আরো বেশি বিপাকে যারা কিস্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে মোটরবাইক কিনেছেন। রাজধানীর অ্যাপসভিত্তিক বাইকচালকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।

অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটিতে তাদের তালিকাভুক্তরা কাজ করতে পারছেন না। তবে চালকরা যে কাজ করতে চাচ্ছেন না তা কিন্তু নয়। মূলত করোনা মহামারি প্রতিরোধে সরকারের অঘোষিত লকডাউনে রাস্তায় যেমন যাত্রী নেই, তেমনি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কারো বের হওয়ার সুযোগও নেই। লাখ লাখ যুবক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। পাঠাও, উবার, সহজ ও ভাইসহ অ্যাপভিত্তিক যাত্রীসেবা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই পড়েছেন বিপাকে। শুধু পাঠাও অ্যাপসের মাধ্যমে সারাদেশে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় ২ লাখ মানুষ। এদের প্রত্যেকের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একেকটি পরিবার। অর্থাৎ পাঠাওয়ের সঙ্গে জড়িত ২ লাখ পরিবার আজ এই করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত। আগামী দিনে কীভাবে পরিবারের খরচের জোগান দেবেন এই চিন্তায় তারা দিশেহারা।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে অ্যাপসের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং সেবা দিচ্ছে বা দিতে চায়, এমন ১৬টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য বিআরটিএতে আবেদন করেছে। এর মধ্যে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম, রাইডার রাইড শেয়ার এন্টারপ্রাইজ ইনক ও গোল্ডেন রেন লিমিটেড যানবাহনের সংখ্যা জানায়নি। সবচেয়ে বেশি যানবাহন আছে পাঠাও, সহজ, ওভাই সলিউশন, উবার, পিকমি ও হোস্ট ইন্টারন্যাশনালের। সব মিলিয়ে মোটরসাইকেল আছে ১ লাখ ৪ হাজার ৩৮৯, কার ১৮ হাজার ২৫৩টি।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অনানুষ্ঠানিক খাতের এই শ্রমিকরা চরম বিপাকে পড়বেন। তাদের জন্য সরকারের বরাদ্দ বা কোনো ধরনের প্রণোদনা না হলে খাদ্য ঝুঁকিতে পড়বে এই লাখ লাখ শ্রমিক। যদিও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলছেন, অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের চিহ্নিত করাটা বেশ কঠিন। কিন্তু তাদের জন্য সরকারের ওএমএস কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যার পরিসর আরো বাড়ানো হবে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গতকাল কথা হয় আলম নামের এক পাঠাও চালকের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, কি আর বলব। সারাদেশ করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে। এই সময়ে সরকারের অঘোষিত লকডাউনের কারণে রাস্তায় মানুষ নেই। আর মানুষ না থাকলে তো আর আমাদের উপার্জনও নেই। কিন্তু আমিও তো ঘরে থাকতে চাই, আর চাইলেই কি ঘরে থাকা যায়- প্রশ্ন এই পাঠাও চালকের। তিনি বলেন, পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছি। শুধু যাত্রাবাড়ী নয়, শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীর অপেক্ষায় তীর্থের কাকের মতো দাঁড়িয়ে থাকা নুর উদ্দিনের অভিব্যক্তিও ছিল একই। বাসায় বসে থাকলে বা গ্রামে গেলে কি আর ক্ষুধা মিটবে।

এ বিষয়ে কথা হয় পাঠাও অ্যাপ সার্ভিসের সিইও ইলিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, সারাদেশে মোটরসাইকেল, কারসহ প্রায় ২ লাখ লোক পাঠাওয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। করোনা মহামারির কারণে সবই প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকদের বিষয়ে কথা হয় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সমস্যা তৈরির একটা শঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। এসব খাতের শ্রমিকদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেখা যায়নি। তবে এদের শনাক্ত করে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App