×

জাতীয়

পরিবহন সেক্টরে কর্মহীন ৪৫ লাখ শ্রমিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৫৯ এএম

পরিবহন সেক্টরে কর্মহীন ৪৫ লাখ শ্রমিক

ফাইল ছবি

পরিবহন সেক্টরে কর্মহীন ৪৫ লাখ শ্রমিক

করোনার প্রভাবে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে দেশের পরিবহন সেক্টর। মালিক-শ্রমিকসহ এই সেক্টরের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ অভাবনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। সব ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকায় প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে, যা আগামী দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে শুধু গার্মেন্ট সেক্টরে প্রধানমন্ত্রী আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার ঘোষনায় পরিবহন সেক্টরের মালিক-শ্রমিকরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের প্রভাব বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহনে যাত্রী কমে যায়। যাত্রী কমে যাওয়ায় রাজধানীর সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কমে যায়।

এরপর ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে যানবাহন চলাচলে সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারির পর পুরো পরিবহন সেক্টর একেবারেই স্তব্ধ হয়ে পড়ে। বিশাল এই সেক্টরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৪৫ লক্ষাধিক মানুষ কর্মহীন হয়ে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। অর্থাভাবে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনো মতে দিন কাটাচ্ছেন। কতদিন এভাবে চলতে হবে তা নিয়েই সবার দুশ্চিন্তা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে পরিবহন সেক্টর বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধে সরকারের ঘোষণার আগেই পরিবহন সেক্টরে করোনার প্রভাব পড়ে। যাত্রী কমে যায়। সরকারের নির্দেশের পর সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে পরিবহন সেক্টরে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রায় ৪৫-৫০ লাখ পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এতে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

তিনি আরো বলেন, সরকারের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই মহামারি প্রতিরোধে আমরা সরকারের নির্দেশনা মেনে চলব।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজি আবুল কালাম বলেন, পরিবহন সেক্টর বললে শুধু বাস-ট্রাক-মিনিবাস ধরলে হবে না। সাড়ে ৭ লাখ বাস-মিনিবাস, ৩ লাখ সিএনজি ও থ্রি-হুইলার, কয়েক লাখ কাভার্ড ভ্যান, প্রায় ৩ লাখ রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মোটরসাইকেল, ১৫ লাখ ইজিবাইকও পরিবহন সেক্টরের মধ্যে ধরতে হবে। সব মিলিয়ে দেশে ৪৫ লাখের মতো পরিবহন শ্রমিক কাজ করে। এদের বাইরে যানবাহনের মেকানিক, গ্যারেজের শ্রমিক, জ্বালানি ও সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কর্মচারীসহ ১ লক্ষাধিক এবং মোটরপার্টস দোকানগুলোতে কর্মরত ১ লাখ মানুষ পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিপর্যয়ের ফলে সবাই এখন কর্মহীন।

এই বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। প্রতিদিন একজন শ্রমিক কমপক্ষে ১ হাজার টাকা আয় করত। এখন সবাই কর্মহীন। সবাই পরিবার নিয়ে বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অনিশ্চয়তায় যানবাহনের মালিকরা। এক টাকা আয় না হলেও একটি বাস বা মিনিবাসের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে ১৫-২০ হাজার টাকা ব্যাংকের কিস্তি দিতে হচ্ছে। ২০ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান জরুরি পণ্য নিয়ে চলাচল করলেও ৮০ ভাগ পুরোপুরি গ্যারেজে বসে আছে। এ অবস্থায় কতদিন চলতে হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলছে।

সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল হোসেন তালুকদার বলেন, গত একশ বছরে এ ধরনের বিপর্যয় পৃথিবীতে হয়নি। একসঙ্গে পুরো পৃথিবীও থেমে যায়নি। এই বিপর্যয়ের ফলে আমাদের পরিবহন সেক্টরের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এককথায় অঙ্কের হিসাবে নিরূপণ করা সম্ভব না। সোহাগ পরিবহনের দেড় শতাধিক দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ১ হাজার ২০০ কর্মচারী এখন বাসায় বসে আছে। তারা সবাই কর্মক্ষম কিন্তু বিপর্যয়ের কারণে কাজে আসতে পারছে না। কিন্তু তাই বলে খরচ বন্ধ হয়নি। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম না চললেও কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে। ব্যাংক থেকে নেয়া লোন অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। এতে কোনো মাফ নেই। আরো অনেক ধরনের খরচ আছে। এই অবস্থা কতদিন চলবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ অঙ্ক দিয়ে প্রকাশ করার মতো অবস্থা এই মুহূর্তে আমার নেই।

রাজধানীর গুলিস্তান কেন্দ্রিক এক পরিবহন শ্রমিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রী গার্মেন্ট সেক্টরের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু লাখ লাখ পরিবহন শ্রমিকদের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখেননি। এটা খুবই দুঃখজনক। এই পরিবহন শ্রমিকরাই সারাদেশ সচল রাখে। অতীতে লাগাতার হরতাল-অবরোধের মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছে। অথচ এই চরম দুর্যোগের সময় পরিবহন শ্রমিকদের দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না।

রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল এলাকায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় পরিবহন শ্রমিক নূরু, মিজান, রফিকসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা সবাই মিনিবাসের শ্রমিক। তারা জানান, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কাজ নেই। কাজ না থাকলে আয়ও নেই। বাড়িতেও যেতে পারেননি। মেসে অবস্থান করলেও রান্নার লোক না আসায় নিয়মিত খাওয়া হচ্ছে না। আবার হোটেল বন্ধ থাকায় বাইরেও খেতে পারছেন না। পকেটের টাকা ফুরিয়ে আসছে। বাড়িতে পরিবারের জন্যও টাকা পাঠাতে পারছেন না। কেউ টাকা ধার দিতেও চাইছে না। এই নিষেধাজ্ঞা কতদিন চলবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সব মিলিয়ে খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। সরকারও আমাদের কোনো সহযোগিতা করছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App