×

পুরনো খবর

করোনা শিখিয়েছে আর স্কুল ব্যাগ নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০৯:০৩ পিএম

শিশুর বই কমিয়ে, স্কুলে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে, খাতার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে ব্যাগের ওজন কমানো যায়। প্রচলিত শিক্ষাদান পদ্ধতিতে এসব চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সামনে আগানো যেতে পারেই। কিন্তু কার্যত শিশুদের বইয়ের ওজন, খাতার ওজন বা পানির বোতল কোনোটাই কমবে না। বরং যদি ব্যাগটার ওজন আরো বাড়ে তবে তাতে আমাদের অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ফলে ব্যাগের ওজন বাড়ার এ সমস্যার সমাধানও তাই পাঠক্রম কমানোতে বা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার পথে হবে না।

গত ডিসেম্বর থেকে করোনা মহামারির জন্য বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ক্রমান্বয়ে একটির পর একটি দেশ লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, সান্ধ্য আইন, অন্তরীণ, সঙ্গনিরোধ, সাধারণ ছুটি ইত্যাদি কার্যক্রমের আওতায় প্রায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। একটি রোগে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ লাখের ওপরে আর মৃত্যুর সংখ্যা ৫৮ হাজারের ওপরে। করোনায় এখন বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনাগুলো ঘটছে। পবিত্র কাবা বা মসজিদে নববী বা ভ্যাটিকানের গির্জাসহ মন্দির, মসজিদ, গির্জা ও প্যাগোডাসহ সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। এবার হজ অনুষ্ঠিত হবে কিনা সেটি অনিশ্চিত। বিশ্বজুড়ে পারিবারিক থেকে ক্রীড়া অনুষ্ঠান, মেলা-ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি বন্ধ হচ্ছে। বাংলাদেশের অবস্থাও দুনিয়া থেকে আলাদা নয়। আমরাও এখন গৃহ অন্তরীণ জীবনযাপন করছি। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত থেকে গেরস্থালি কাজকর্ম, শিল্পকল কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি তো আছেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আরো কী ঘটবে সেটি আমরা এখনো জানি না। কতদিন এই অবস্থা থাকবে সেটাও জানি না। এজন্য সব কিছু নিয়েই উদ্বেগ রয়েছে। তবে শিক্ষার বিষয়টি সম্ভবত উদ্বেগের শীর্ষে অবস্থান করছে। করোনা আমাদের এখন শিখতে বাধ্য করেছে যে স্কুল ব্যাগ নির্ভর শিক্ষার দিন শেষ। খুব জোরেশোরে না হলেও শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর নিয়ে আলোচনা একেবারে ছিল না তেমন নয়। ১৯৯৯ সালে আমি গাজীপুরে আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুল উদ্বোধন করাই। এরপর শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর নিয়ে লড়াই চলেই আসছে। এটি ২০০৮ সালে ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি বড় স্তম্ভ। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ছাত্রছাত্রীর হাতে ল্যাপটপ প্রদান করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি শিক্ষার ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির নির্দেশনা প্রদান করেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও ষষ্ঠ শ্রেণিতে সব ছাত্রছাত্রীকে ট্যাব দেয়ার ঘোষণা প্রদান করেছিলেন। ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ স্কুল ব্যাগবিহীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন করার জন্য আমি যে প্রস্তাব করেছিলাম তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় কেবল শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর নয় এমনকি প্রাথমিক শ্রেণিতে প্রোগ্রামিং শেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এটুআইসহ সরকারের শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ ডাক ও টেলি যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শিক্ষায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের কাজ চলছে। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব বা ডিজিটাল ক্লাসরুম গড়ে তোলার পাশাপাশি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির কাজও চলে আসছে। এবার যখন করোনার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয় তখন সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ভিডিও ক্লাস নেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এই ক্লাসগুলো শুরু হওয়ার পর অনেক অভিভাবকের কাছে এর প্রশংসাও শুনেছি। অনেকেই ক্লাসগুলোর মানেরও প্রশংসা করেছেন। সরকার সেরা শিক্ষকদের দিয়ে এই ক্লাসগুলো নেয়াচ্ছে বলে এর গুণগত মান অবশ্যই ভালো হতে বাধ্য। টিভিভিত্তিক ক্লাসের ধারণাটি বহুদিন ধরেই বাংলাদেশে কানাঘুষা হচ্ছিল। বহুদিন আগে থেকেই সংসদ টিভি যখন অলস থাকবে তখন এই চ্যানেলটিকে শিক্ষার জন্য ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করা হয়। কিন্তু সেটি হয়ে ওঠেনি। বরং টিভির বদলে অনলাইন শিক্ষার কিছুটা বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। টেন মিনিটস স্কুল দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশ্ববাপী খান একাডেমি একটি জনপ্রিয় অনলাইন শিক্ষা প্লাটফরম হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে। দেশব্যাপী বিজয়ের ডিজিটাল শিক্ষামূলক সফটওয়্যার দিয়ে ডিজিটাল ক্লাসরুম ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে যাচ্ছে। বস্তুত আমাদের দেশে কনটেন্ট তৈরি ও ডিজিটাল ক্লাসরুম গড়ে তোলার চেষ্টা একদম কম করা হয়নি। স্কুল ব্যাগ ছেড়ে ডিজিটাল ডিভাইসে শিক্ষা দেয়ার আবেদন আমাদের বহু দিনের। তবে করোনার জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যখন স্থবির হয়ে পড়ে তখন আমাদের আবার স্টুডিও খুঁজতে হয়েছে, শিক্ষক খুঁজে বের করতে হয়েছে এবং রেকর্ডিং ও সম্পাদনা করে সেই ক্লাসগুলো সম্প্রচার করতে হচ্ছে। সেজন্যই অপ্রিয় হলেও সত্য অতি সামান্য ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বা সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর কিংবা প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার ঘোষণার বাস্তবায়ন হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার কথা যতটা গুরুত্ব এর প্রাপ্য ততটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছি না। কিছুসংখ্যক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, কিছু কম্পিউটার ল্যাব বা কিছু শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষকদের দ্বারা তৈরি করা কিছু পাওয়ার পয়েন্ট কনটেন্ট তৈরির মাঝেই শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর সীমিত হয়ে আছে। ফলে বাংলাদেশের শিশুরা নিজের শরীরের চেয়ে বেশি ওজনের ব্যাগ কাঁধে করে নিয়ে শিল্পযুগের প্রাথমিক স্তরের অচল শিক্ষা গ্রহণ করে আসছে। শিল্পযুগের চতুর্থ স্তর তো দূরের কথা দ্বিতীয় স্তর যা বিদ্যুৎভিত্তিক এবং তৃতীয় স্তর যা কম্পিউটারভিত্তিক শিল্পযুগের শিক্ষাও তারা গ্রহণ করছে না। সেই যে কবে শিক্ষার্থীর কাঁধে ব্যাগের বোঝা চেপেছিল সেটি দিনে দিনে বড় হয়েছে। স্কুল ব্যাগের বোঝা শিশুর শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। এ দেশে স্কুল ব্যাগ বহন করতে গিয়ে কারো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও আমাদের পাশের দেশ ভারতে এমন ঘটনা ঘটেছে। এখন যখন স্কুলে ব্যাগে করে বই নিয়ে যাওয়ার সুযোগও নেই তখন আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি যে শিক্ষাকে আজকে মুখ থুবড়ে পড়তে হতো না যদি আমাদের শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের কাজটি পরিকল্পিত উপায়ে এগিয়ে যেত। এখন যখন আমরা ঘরে বসে আছি তখন ঠাণ্ডা মাথায় আমাদের ভাবতে হবে যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সচল হলে আবারো সেই স্কুল ব্যাগটাই তাদের কাঁধে তুলে দেব আমরা? স্কুল ব্যাগ যে আমাদের শিশুদের জন্য কতটা বিপজ্জনক তার খবরগুলো নিয়ে আমি এর আগেও কলম ধরেছি। ভারতের একটি পুরনো খবর এখানে তুলে ধরতে পারি। খবরটি বাংলাদেশের অনেক পত্রিকা এবং নিউজপোর্টালেও প্রকাশিত হয়েছে। ছোট এই খবরটি একটি পোর্টাল থেকে তুলে ধরছি। ৬ এপ্রিল ২০১৬ তারিখের বাংলা মেইল২৪ডটকম পোর্টালের খবর হচ্ছে- পিঠে ভারী স্কুল ব্যাগ নিয়ে নিচে তাকাতে গিয়ে পাঁচতলার ব্যালকনি থেকে পড়ে চার বছরের এক শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির নাম সারিকা সিং। ভারতের মহারাষ্ট্রের নালাসোপারা ইস্টের অলকাপুরী এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, শিশু সারিকা সিং স্কুল থেকে ফিরে নিজের ফ্ল্যাটে যাচ্ছিল। সেই সময় কেউ তার নাম ধরে ডাক দেয়। তারপরই সারিকা ব্যালকনি থেকে নিচের দিকে তাকায়। কিন্তু ভারী স্কুলব্যাগের ওজনে টাল সামলাতে না পেরে সে পাঁচতলা থেকে পড়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এদিকে পুলিশের ধারণা, ভারী ব্যাগের জন্যই ঝুঁকতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শিশুটি পড়ে যায়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কিন্তু চার বছরের শিশুর পিঠে কি এত বইয়ের বোঝা চাপানো উচিত? দুর্ঘটনার পর এই প্রশ্ন আরো একবার সবার মুখে মুখে। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা এমন হতেই পারে। কিন্তু এ ঘটনাটির মর্মার্থ একটু ভিন্নভাবে তাকিয়ে দেখা যায়। অনুভব করা যায় যে, কোনোভাবেই শিশুকে তার বিশাল ওজনের ব্যাগটা থেকে মুক্তি দেয়া যায় কিনা। বাংলাদেশের পোর্টালে প্রকাশিত এই খবরটির উৎস খুঁজতে আমরা গুগল থেকে ‘ইন্ডিয়াটিভি নিউজ’ খুঁজে পাই, যেখানে বলা হয় যে, সারিকা পাঁচতলায় অবস্থিত তাদের বাসায় যাওয়ার আগে চারতলায় তার প্রতিবেশীর তলায় থামে। পরে যখন সে তার নিজের বাসায় উঠতে যায় তখন সে সিঁড়ির ফাঁক দিয়ে নিচে কারা আছে তা দেখতে তাকালে সে তার শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এই ভারসাম্য হারানোর প্রধানতম কারণ হচ্ছে তার ভারী স্কুলব্যাগটি। ফলে সে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে যায়। এর পরপরই আতঙ্কিত বাসিন্দারা তাকে প্রথম অ্যালিয়েন্স হাসপাতালে ও পরে ককিলাবেন আম্বানি হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে সে তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। সারিকার বাবা দারাসিং রাজরিয়া তখন বাসায় ছিলেন না। তিনি কর্মক্ষেত্রে ছিলেন। তুলিঞ্জ পুলিশ স্টেশনের সহকারী পুলিশ ইন্সপেক্টর সুদর্শন পোদ্দার জানান, সারিকার দুটি বড় বোন ও একটি বড় ভাই রয়েছে। তাদের ফ্ল্যাট নম্বর হচ্ছে ৪০৫। এলাকার বাসিন্দারা সারিকার মৃত্যুতে শোকার্ত। কারণ সে সবারই আদরের ছিল।

http://www.indiatvnews.com/news/india-four-year-old-girl-in-mumbai-falls-to-death-from-4th-floor-due-to-heavy-school-bag-322368

সেখানেই মেয়েটির ছবিও পাওয়া যায়। বাংলাদেশে অনেকেই তাদের খবরের সঙ্গে নিজেদের ছবি বা কেবল স্কুলব্যাগের ছবি প্রকাশ করেছেন। চার বছরের ইনোসেন্ট এই মেয়েটি বস্তুত আমাদের এই অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার দিকেই আঙুল তুলেছে। এই অঞ্চলে শিশুশ্রেণি থেকে ওপরের দিকে পড়তে যাওয়া সব শিশুর জন্যই এমন ভারী স্কুল ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। শিশুর শারীরিক ওজন যাই হোক না কেন তাকে কখনো কখনো তার নিজের শরীরের ওজনের তুলনায় বেশি ওজনের ব্যাগ বহন করতে হয়। বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় স্কুল ব্যাগ ব্যবহার করে বিশেষ করে শিশুদের যেভাবে নিপীড়ন করা হয় তার বিপরীতে কীভাবে ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা এর বিকল্প হতে পারে সেই বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এর আগে বিষয়টি নিয়ে আমি অনেক আলোচনাও করেছি। বাংলাদেশে শিক্ষাকে ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে কী ধরনের দুর্বলতা বিরাজ করে সেটিও ব্যাপকভাবেই আলোচনা করেছি। স্কুল ব্যাগের ওজন ও সেটি বহন করার বিষয়ে বাংলাদেশে প্রকাশিত একটি খবরকে কেন্দ্র করে আমার আলোচনাটি ছিল এর বিদ্যমান অবস্থা এবং আমাদের সরকারি প্রয়াস নিয়ে। আমরা প্রসঙ্গত একটু পেছনের দিকেও তাকাতে পারি। ‘২০১৪ সালের নভেম্বরে ঢাকার জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটি শীর্ষ সংবাদ পরিবেশন করা হয়, যাতে বলা হয় যে, আমাদের শিশুদের স্কুল ব্যাগটা বড্ড ভারী। তারা জরিপ করে দেখিয়েছে যে, ১৫-২০ কেজি ওজনের শিশুকে ৬ থেকে ৮ কেজি ওজনের স্কুল ব্যাগ বহন করতে হয়। তারাই ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে বলেছে যে, শিশুর মোট ওজনের শতকরা দশ ভাগের বেশি ওজনের ব্যাগ তার কাঁধে দেয়া উচিত নয়। এর ফলে শিশু শারীরিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হতে পারে।’ আমরা এখন জানি যে, স্কুল ব্যাগের ওজন কেবল সাধারণ শারীরিক সমস্যা তৈরি করে না। ভারতের শিশু সারিকার মৃত্যু শারীরিক সমস্যার বাইরে জীবন সমাপ্ত হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। খবরটিতে বিশেষজ্ঞরা নানা পরামর্শ দিয়ে বলেছে যে, শিশুর বই কমিয়ে, স্কুলে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে, খাতার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে ব্যাগের ওজন কমানো যায়। প্রচলিত শিক্ষাদান পদ্ধতিতে এসব চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সামনে আগানো যেতে পারেই। কিন্তু কার্যত শিশুদের বইয়ের ওজন, খাতার ওজন বা পানির বোতল কোনোটাই কমবে না। বরং যদি ব্যাগটার ওজন আরো বাড়ে তবে তাতে আমাদের অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ফলে ব্যাগের ওজন বাড়ার এ সমস্যার সমাধানও তাই পাঠক্রম কমানোতে বা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার পথে হবে না। আসুন অন্য কিছু ভাবি। এর বিকল্প কী হতে পারে সেটি নিয়ে চিন্তা করি। এই ভাবনাটি অবশ্য আমার জন্য একেবারেই নতুন নয়। আমি স্মরণ করতে পারি নব্বই দশকেও আমার সম্পাদিত নিপুণ পত্রিকায় শিশুদের ওজনদার স্কুল ব্যাগের প্রসঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। আমার তখনকার শিশুকন্যা সুনন্দা শারমিন তন্বীর পিঠের ব্যাগটাকে প্রচ্ছদের ছবি বানিয়ে তার ওপরই প্রচ্ছদ কাহিনী করেছিলাম। তখনই প্রস্তাব করেছিলামÑ শিশুদের যেন তথাকথিত বিদ্যার ওজনে পিষ্ট না করা হয়। তখনো দুনিয়াজুড়ে ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার তেমনভাবে শুরুই হয়নি। কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাসরুমে কম্পিউটার প্রচলনের সূচনা হয়েছিল। আমরা ঢাকায় তখনো ভাবতেই পারিনি যে বইয়ের কোনো বিকল্প হতে পারে। সেজন্য তখন আমি বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় দেখার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু এবার আমি প্রত্যাশা করি যে আমাদের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবক-অভিভাবিকা-শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীর উপলব্ধিতে আসবে যে আর বোধহয় দেরি করা উচিত নয়। স্কুল ব্যাগের যুগ থেকে আমাদের বের হয়ে আসা উচিত।

মোস্তাফা জব্বার : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App