×

জাতীয়

করোনায় মানসিক চাপে শিশুরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২০, ১২:০৬ পিএম

করোনায় মানসিক চাপে শিশুরা
করোনায় মানসিক চাপে শিশুরা
করোনায় মানসিক চাপে শিশুরা

খেলছে বাচ্চারা/ফাইল ছবি

নারিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ব্রাত্য সাহা। ক্রিকেটে বেশ আগ্রহ তার। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়ম করে প্রতিদিন ব্রাদার্সের মাঠে ক্রিকেট খেলতে যায় ব্রাত্য। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে পুরো রুটিনই বদলে গেছে ব্রাত্যর। স্কুল নেই। বাসায় টিউটরও পড়াতে আসেন না। খেলার মাঠে যাওয়া হয় না। প্রতি সপ্তাহে শিশু একাডেমিতে তবলা ও আর্ট শেখার ক্লাস বন্ধ। তিন কামরার বাসায় এখন ব্রাত্যর বন্দিজীবন।

ব্রাত্যর মতো অসংখ্য শিশু এখন করোনার কারণে ঘরবন্দি। করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে দেশজুড়ে চলছে সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ কার্যক্রম। নিজেদের প্রয়োজনে বড়রা ঘর থেকে বেরুতে পারলেও ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে শিশুরা। তাছাড়া করোনা আতঙ্ক তো আছেই। যা শিশুদের মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। এ সময় শিশুদের দিকে বিশেষ মনোযোগ ও তাদের হাসিখুশি রাখার উদ্যোগ নিতে অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন শিশু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, ঘরবন্দি অবস্থায় থাকতে গিয়ে শিশুদের মধ্যে মানসিক অবসাদ তৈরি করতে পারে। যা তাদের মনোজগতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ভয় যেন শিশুদের মনকে ঘিরে ধরতে না পারে সেদিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। শিশুরা যাতে একটি মানসিক চাপমুক্ত পরিবেশ পায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। অন্যান্য সময় শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য অভিভাবকরা তেমন একটা সুযোগ পান না। এখন শিশুদের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত যাতে আনন্দময় হয়। এছাড়া তাদের একঘেয়েমি কাটাতে ইনডোর খেলায় মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তারা।

এ প্রসঙ্গে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলেন, দীর্ঘ সময় বাইরে না যাওয়ার ফলে শিশুরা ভয় পেতে পারে, বিরক্ত হতে পারে, রাগ করতে পারে, হতাশ হতে পারে, দুষ্টামি বেড়ে যেতে পারে। এটা স্বাভাবিক। তাই অযথা বাচ্চাকে বকাঝকা না করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অতিরিক্ত বকাঝকা শিশুকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে পারে। এতে করে এই কঠিন সময় আরো দুর্বিষহ হতে পারে। অন্য সময় ব্যস্ততার কারণে শিশু মা-বাবাকে কাছে পায় না। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে চেষ্টা করা উচিত। এতে করে দেখা যাবে শিশুর একঘেয়েমিও কাটবে, বাবা-মার সঙ্গে শিশুর বন্ধনও বাড়বে।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উপপরিচালক সাবিরা সুলতানা নূপুর ভোরের কাগজকে বলেন, শিশুদের আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার এটি একটি সুযোগ। এই সুযোগে নতুন ছবি আঁকা, নতুন গান বা নাচ তুলে নেয়া কিংবা যার যেটিতে আগ্রহ তাকে প্রাধান্য দেয়া যেতে পারে। আরেকটি দিকে বিশেষ নজর দেয়া দরকার। পরিবারের সবাই দীর্ঘ সময় একসঙ্গে অবস্থানের কারণে পারিবারিক সহিংসতা বাড়তে পারে। বাড়তে পারে শিশুর প্রতি শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের হারও। তাই সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের।

করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের আতঙ্ক দূর করতে সরকারের কী উদ্যোগ এবং মানসিক স্বাস্থ্য কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ও উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক। তবে এখন পর্যন্ত এই পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নীতি-নির্ধারকদের কাছে কোনো গুরুত্ব পায়নি। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে আমরাই এ বিষয়ে কাজ করছি। কেননা বেশিদিন হতাশার মধ্যে থাকলে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাসহ অসহিষ্ণু আচরণ বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় শিশু-কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দুটি গাইড লাইন তৈরি করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App