×

জাতীয়

প্রস্তুতি ও সরঞ্জাম পর্যাপ্ত নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৪০ এএম

প্রস্তুতি ও সরঞ্জাম পর্যাপ্ত নয়

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ‘সামাজিক দূরত্ব’ রক্ষা ও বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেয়া হলেও অনেকেই তা কানে তুলছেন না। এ বিষয়ে ২ এপ্রিল বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালায় সেনাবাহিনী। রাজধানীর আজিমপুর এলাকার দৃশ্য -মামুন আবেদীন

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সরকারের উদ্যোগ এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। অনান্য দেশের মতো নমুনা পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে সরকার এই সেবা ঢাকাসহ সারাদেশে সম্প্রসারিত করছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে ঢাকা ও এর আশপাশের ১২টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে বিশেষভাবে তৈরি করছেন। তবে সব হাসপাতাল এখনো সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। আবার যেসব হাসপাতাল প্রস্তুত আছে সেখানেও যাচ্ছে না রোগী। আছে ভেন্টিলেশন ও নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) সংকটও। বেসরকারি হাসপাতালগুলোও সরকারের নির্দেশ পুরোপুরি মানছে না। দেশে এখনো পর্যন্ত এন-৯৫ মাস্কের তীব্র সংকট রয়েছে।

জানা যায়, করোনা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল এবং মিরপুর লালকুঠি মাতৃ ও শিশু হাসপাতালকে নির্বাচন করে সরকার। কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল ছাড়া আর কোনোটিই চিকিৎসার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। আবার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রস্তুত হলেও সেখানে রোগী যাচ্ছেন না। কুর্মিটোলা হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ডায়ালাইসিস করান। এসব রোগীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ওই হাসপাতালটিও পুরোপুরি করোনা আক্রান্তদের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আর প্রস্তুত থাকার পরও করোনা পরীক্ষা করানোর মতো ব্যবস্থা না থাকায় রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা, যাত্রাবাড়ী সাজেদা ফাউন্ডেশন, আকিজ গ্রুপের হাসপাতালে মিলবে না সেবা। তবে নির্ধারিত হাসপাতাল থেকে রেফার করা হলে এসব হাসপাতালে সেবা মিলবে।

সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমিনুল হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, এখনো সব হাসপাতাল চালু হয়নি। কিছু হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে গেছে। খুব অল্প দিনেই চালু করা সম্ভব হবে। কুর্মিটোলা হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস করা রোগীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের অন্যত্র শিফট করা হবে। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল ও মিরপুরের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতালে বহির্বিভাগ চালু হয়েছে। রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালের ভবনটি পুরাতন। সেটি মেরামত করে রোগী ভর্তির উপযোগী করে সেবা কার্যক্রম চালু করতে কিছুটা সময় লাগবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশের কম গুরুতর অসুখ হয়। সাধারণ ঠাণ্ডার মতো। এরা এমনি এমনি ভালো হয়ে যায়। ২০ শতাংশের নিউমোনিয়া হয়ে যায় এবং এদের অনেকের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। ওই ২০ শতাংশের মধ্যে ৫ ভাগের অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়। তাদের কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র ও আইসিইউর প্রয়োজন হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, করোনা আক্রান্তদের জন্য দেশে ৬ হাজার ২০০টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। আর ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ৪৫টি। যার সবগুলোই ঢাকাতে। তবে সিএমএসডির (সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরেজ ডিপো) কাছে রয়েছে ১৬০টি ভেন্টিলেটর। অতি প্রয়োজনে সেগুলো স্থাপন করা যাবে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ও পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মুজাহেরুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দেশে কত লোক কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হবে তা আমরা কেউ জানি না। এই রোগ হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সবার থেকে আলাদা করে ফেলতে হয়। চিকিৎসাসেবা, বিশেষ করে রেসপিরেটরি সিস্টেমে সাপোর্ট দিতে হয়। রেসপিরেটরি সিস্টেমে সাপোর্ট দিতে আইসিইউ বেডের সঙ্গে ভেন্টিলেশন থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এ সংখ্যা খুবই কম। সঙ্কটকালীন মুহূর্তে কোনো কোনো হাসপাতাল থেকে ভেন্টিলেটর নেয়া হবে সেটি এখনই নির্ধারণ জরুরি। তবে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেবেন এমন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখার ওপরও জোর দেন তিনি। আইসিইউ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাচিপের এক নেতা ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে আইসিইউ বেডের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। আইসিইউগুলো ওপেন ওয়ার্ডের মতোই। কোনো আইসোলেশন বেড নেই, নেগেটিভ প্রেসারের ব্যবস্থা নেই। সেখানে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে, তার একটা বড় অংশ অতিদ্রুত প্রচণ্ড রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সংক্রমিত হচ্ছে আর ওই ইনফেকশন থেকেই মারা যাচ্ছে।

মাস্ক নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে, যেহেতু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মাস্ক ব্যবহারের সার্বিক চল নেই, তাই সংক্রমণের সময় হু হু করে মাস্কের চাহিদা বেড়ে যায়। গবেষকরা বলছেন, এখন সবাই মাস্ক পড়তে চাইছেন। এন-৯৫, এন-৯৯ বা সার্জিক্যাল মাস্ক ছাড়া অন্যকোনো মাস্ক সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর না হলেও সবাই এর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছেন।

বাংলাদেশে এন-৯৫ প্রসঙ্গে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সেন্ট্রাল মেডিসিন স্টোরেজ ডিপোর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদুল্লাহ বলেন, এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব মাস্ক দেয়া হয়েছে তা এন-৯৫ মাস্ক নয়। সার্জিক্যাল মাস্ক। এই মাস্ক স্থানীয়ভাবে তৈরি হয় না। ফলে এর জন্য বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আগামী তিন চার দিনের মধ্যেই বিদেশ থেকে প্রায় দেড় লাখ মাস্ক বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। গতকাল করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) ডা. হাবিবুর রহমান জানান, উপজেলা পর্যায় থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হবে। কোভিড-১৯ পরীক্ষাসেবা সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে সরকারের আইসিটি বিভাগের অনলাইন লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষাসেবা চালু করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহের জন্য এক থেকে তিনজনের টিম করে দেয়া হয়েছে। টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে পারলে এবং প্রতিদিন যদি পাঁচ থেকে ছয়শ টেস্ট করা সম্ভব হয় তবে আমরা আমাদের অবস্থাটা যেমন জানতে পারব তেমনি মানুষের আস্থাও বাড়বে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App