×

জাতীয়

এপ্রিলেই চূড়ান্ত আঘাত!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৩৭ এএম

এপ্রিলেই চূড়ান্ত আঘাত!

সরকারের তথ্যমতে দেশে এখনো বিস্তার ঘটাতে পারেনি কোভিড-১৯। সীমিত পরিসরে হয়েছে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সংক্রমণ)। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। সম্প্রসারণ করছে ভাইরাস পরীক্ষাসেবা। বিশে^র বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ নিজের বিধ্বংসী রূপ দেখিয়ে অনেকটাই শান্ত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো তেমন পরিস্থিতি উদ্ভুত হয়নি। দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত, আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিদেশফেরতদের দেশে আসার সময়ের ওপর নির্ভর করে বিশেষজ্ঞরা চলতি এপ্রিল মাসকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ‘পিক টাইম’ (সর্বোচ্চ ব্যাপ্তির সময়) বলে আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, প্রথম আক্রান্ত শনাক্ত থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের সংখ্যা চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। দেশে ১৮ মার্চ থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে আক্রান্তদের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে অনেকে। আর ওই ব্যক্তিদের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে এপ্রিলের প্রথম বা মাঝামাঝি সময়ে। এই চক্রকে যদি ঠেকানো না যায় তাহলে এপ্রিলের মধ্যেই ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে কোভিড-১৯।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের বংশবিস্তারে সময় লাগে ৫ দশমিক ৫ দিন। আক্রান্ত হওয়ার ১২ দিনের মধ্যে মানুষের শরীরে এর লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। লক্ষণ দেখা যাক বা না যাক আক্রান্ত মানুষ ভাইরাসটির বিস্তার ঘটাতে সক্ষম। অর্থাৎ আক্রান্ত হবার ১৪ দিন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি সংক্রমণের বিস্তার ঘটাতে পারে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ও পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মুজাহেরুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে এখনো কোভিড-১৯ এর পিকটাইম আসেনি।

চলতি মাসের মাঝামাঝিই আমরা ওই সময়টা দেখতে পাব বলে আশঙ্কা করছি। এতদিন পরীক্ষার সুযোগ সীমিত ছিল। এখন এই সুযোগ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ফলে মানুষ বেশি টেস্ট করতে পারবে। ফলে আমরা জানতে পারব পরিস্থিতি কেমন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুন্সি বলেন, আমরা এখনো কোভিড-১৯-এর পিকটাইমটা দেখিনি। এর কয়েকটি কারণ হতে পারে। যেমন- আমাদের পরীক্ষা কম হচ্ছে, সেজন্য রিপোটিংও কম হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে আক্রান্ত ব্যক্তি ভর্তিও বেশি হচ্ছে তা নয়।

অভিযোগ আছে হাসপাতালগুলো সাধারণ রোগীদের ভর্তি নিচ্ছেন না। কারণ যাই হোক না কেন আমরা এখনো কোভিড-১৯ সংক্রমণের পিকটাইমটা দেখতে পাইনি। সেজন্য আগামী দুই সপ্তাহ হয় তো আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটউটের (আইইডিসিআর) সাবেক এক কর্মকর্তা মনে করেন দেশে ইতোমধ্যেই করোনা ভাইরাস কমিনিউটি পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আমরা চ‚ড়ান্ত আঘাতের অপেক্ষায় আছি।

পরীক্ষার সুযোগ ও পরিসর বাড়ানোসহ বিভিন্ন কার্যকরী উদ্যোগগুলো নিতে আমরা অনেকটাদেরি করে ফেলেছি। পরীক্ষা ছাড়া সন্দেহভাজন রোগী শনাক্ত করা যাবে না। সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙা যাবে না। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। তাই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা মানা না হলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কোনো মহামারিতে একজন আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে সরাসরি কতজন আক্রান্ত হতে পারে তা বেসিক রিপ্রোডাকশন নম্বর বা আরো নামে পরিচিত।

কোভিড-১৯ এর মতো সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এ নতুন ধারার সংক্রামক রোগ সবাইকে সন্দেহভাজনের তালিকায় ফেলেছে। গবেষণা বলছে, একজন আক্রান্ত ব্যক্তি ১০ জন বা ১০০ জনের মধ্যেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে। তাদের চরম সংক্রামক বলা হয়ে থাকে। চীন, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে এরকম চরম সংক্রামক থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাই সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে ঘরে থাকাই হচ্ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার রোধে মহৌষধ।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইপিইএইচ) ভাইরোলজিস্ট ড. খন্দকার মাহবুবা জামিল বলেন, দেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে, তবে তা মৃদু। কারণ যে পরিমাণ স্যাম্পল আসছে তার তুলনায় করোনা ভাইরাস পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন যদি বেশি হতো তাহলে সবগুলোতে আমরা পজিটিভ পেতে পারতাম। গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে এক হাজার ৭৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৪ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ধরা পড়েছে। শতকরা হিসাবে তা সংগৃহীত নমুনার মধ্যে আক্রান্তের হার ৩ শতাংশের সামান্য বেশি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App