×

সাহিত্য

বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন বাতিল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২০, ০৮:৩৪ পিএম

বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন বাতিল
বৈশাখ উপলক্ষে রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন কিংবা চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রধান দুই আয়োজন। তবে এবার করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না এই দুই আয়োজনের একটিও। যদিও এর আগে বিকল্প ব্যবস্থায় আয়োজন দুটি করার কথা জানানো হয়েছিল আয়োজকদের পক্ষ থেকে, তবে বর্তমান পরিস্থিতে হচ্ছে না তাও। বুধবার (১ এপ্রিল) ভোরের কাগজকে এমনটাই জানিয়েছেন ছায়ানটের সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বি। ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন নিয়ে ছায়ানটের সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল ভোরের কাগজকে বলেন, উৎসব নয়, এখন দুর্যোগ প্রতিরোধের। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম অনুষ্ঠান আগে ধারণ করে মিডিয়ার জন্য কিছু করা যায় কি না। সেটা হচ্ছে না। কেননা সেটির জন্যও জনসমাগম তৈরী হয়। আগে আমাদের নিজেদের নিয়ে ভাবতে হবে। সার্বিকভাবে দেশ এবং দেশের বাইরে পরিস্থিতি, যে মৃত্যুর মিছিল আমরা দেখছি, তাতে আমাদের খুবই ভারাক্রান্ত। আয়োজন যতোই সীমিত করি না কেন, সেখানে মানুষের সমাগম ঘটবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতে মানুষকে আসতে বলা বা মহড়া করতে আসতে বলাটাও সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতিটা এমন হয়ে গেছে, এটা আসলে সম্ভব হচ্ছে না এ বছর। খায়রুল আনাম শাকিল আরো বলেন, ছায়ানট শুধু গান শেখার প্রতিষ্ঠান তো নয়, বরং যেকোন ক্রান্তিকালে এটি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং এখনো গরিব ও দুস্থদের সাহায্যের মাধ্যমে ছায়ানট সকলের পাশে থাকতে চায়। তাই আমরা অন্য একটা উদ্যোগ নিয়েছি, তা হচ্ছে এ সময় আমরা দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। যেটা ছায়ানট সবসময় করে আসছে জাতীয় দুর্যোগের সময়, বন্যার সময়, দুর্ভিক্ষের সময় আমরা সাধ্যমতো সাধারন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে। মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, করোনার কারণে কোনো কিছুই এখন আর স্বাভাবিক নেই। এমন পরিস্থিতি তো শোভাযাত্রা করার মতো নয়। আমরা শোভাযাত্রায় মানুষকে আহ্বান করি একটি জায়গায় মেলার জন্য। এই সময়ে এক জায়গায় মিলতে চাওয়া তো একটা আত্মঘাতি কাজ হবে। পরিস্থিতি যা, সেটি আসলে মঙ্গল শোভাযাত্রা করাকে অনুমোদন করে না। বর্তমান পরিস্থিতিও আমাদের অনুকূলে নেই। এদিকে প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে ১৪২৭ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে আগামী ১৪ এপ্রিল কোন অনুষ্ঠান না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এবার সরকারিভাবে পহেলা বৈশাখের যাবতীয় অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ সাক্ষরিত এক চিঠিতে গতকাল বুধবার এ কথা জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ‘করোনা ভাইরাসজনিত রোগ (কভিড ১৯)-এর বিস্তার রোধকল্পে জনসমাগম পরিহার করার লক্ষ্যে আসন্ন পহেলা বৈশাখ ১৪২৭ তারিখের সকল অনুষ্ঠান কার্যক্রম স্থগিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা যাচ্ছে। এখানে সারা দেশে পহেলা বৈশাখের পাশাপাশি তিন পাবর্ত্য জেলায় ‘বৈসবি’ উৎসব স্থগিতের ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রসঙ্গত: ১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিতভাবে রমনার বটমূলে আয়োজিত হয়ে আসছে ছায়ানটের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বছরটি বাদে নিয়মিতভাবে চলেছে রাজধানীবাসীর পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রধান এ আয়োজনটি। এমনকি ২০০১ সালে বোমা হামলার পরের বছরেও এ আয়োজনের ছেদ পড়েনি। আর ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে প্রথমবারের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। যা ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App