×

জাতীয়

ঢিলেঢালা ‘সামাজিক দূরত্ব’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৩৬ এএম

ঢিলেঢালা ‘সামাজিক দূরত্ব’
ঢিলেঢালা ‘সামাজিক দূরত্ব’

করোনা নির্দেশনা মানছেন না কেউই। ‘সামাজিক দূরত্ব’ না মেনে দুস্থদের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করেন নারায়ণগঞ্জ কারাগারের কর্মকর্তারা। এ সময় মাস্ক থাকলেও তাদের নাক-মুখ ছিল উন্মুক্ত। ছভি: ভোরের কাগজ

করোনা সুরক্ষায় সরকারের নির্দেশনা মানার বালাই নেই। যেন ছুুটির আমেজ কাটিয়ে আড়মোড় ভাঙতে শুরু করেছে রাজধানী। সড়কে গণপরিবহন না থাকলেও প্রাইভেট কার, সিএনজি, রিকশা, মোটরসাইকেল, ভ্যান সবই চলছে। রাস্তা ফাঁকা পেয়ে কেউ কেউ রিকশা ও গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দল-বল নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতেও দেখা গেছে অনেককে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্দেশে হোটেল ও খাবার দোকানগুলো স্বল্প পরিসরে খুলেছে। পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে দিব্যি চলছে আড্ডা। তরুণরা জট পাকিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে সিগারেট ফুঁকছে। অনেকে মসজিদে নামাজ পড়তে বের হচ্ছেন। গৃহপরিচারিকারা যোগ দিয়েছেন কাজে। রাস্তার উপর মাস্ক, গ্লাভস ও স্প্রে মেশিন বিক্রি করছেন বিক্রেতা। কাঁচাবাজারসহ নিত্যপণ্যের দোকানে মুখে মাস্ক থাকলেও মানুষের অবাধ বিচরণ। নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে একে অপরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বাজার করছেন। ভাসমান মানুষগুলোকে গত দুদিন দেখা না গেলেও গতকাল তারা ফিরেছে সড়কে। সাহায্য সামগ্রী পেতে শত শত লোক সমবেত হন অনেক এলাকার প্রধান সড়কে। কিছু এলাকায় খালি থালা নিয়ে রাস্তার উপর বসে থাকেন ভিক্ষুকরাও। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাস্তায় সক্রিয় দেখা গেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও। যারা অপ্রয়োজনে রাস্তায় ঘুরছিলেন তাদের ঘরে ফিরতে অনুরোধ করছেন। কিন্তু পাড়া-মহল্লার চিত্র ভিন্ন। অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সব বয়সী মানুষই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার ১০ দিনের যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে; তা এমনি ছুটি নয়। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে, ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখতে এই ছুটি ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও ফাঁকফোকর দিয়ে এই নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটছে অহরহ। এমন অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরা বন্ধ না করা গেলে এর ফল খুবই খারাপ হবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে ৬০ ভাগেরও বেশি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। করোনা একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষে সর্বনিম্ন ৩ ফুট ও সর্বোচ্চ ৬ ফুট পর্যন্ত দূরত্বে ছড়াতে পারে। তাই মানুষে-মানুষে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি।

ওয়ারিতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন ইয়াসমিন আক্তার। পাঁচ দিন কাজে না এলেও গতকাল কাজে এসেছেন। ইয়াসমিন বলেন, ‘চার বাসায় কাজ করি। ২৪ তারিখ থেকে কাজে আসা বন্ধ করেছি। আজ (মঙ্গলবার) আসছি। খালাম্মা (গৃহকর্ত্রী) ফোন করে আসতে বলছে।’

মহাখালীর তিতুমীর কলেজের পাশেই ভিক্ষার থালা হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইদ্রিস মিয়া। জানালেন, গত কয়েক দিন ধরেই তার রোজগার নেই। রাস্তায় বেরুলে যদি কিছু পাওয়া যায় সেই আশায় ঘর থেকে বেরিয়েছেন।

গোপীবাগ এলাকায় রাস্তার উপর স্প্রে মেশিন বিক্রি করছেন আজাদ। প্রতিটি মেশিন বিক্রি করছেন ৪০ টাকায়। সেখানে জটলা করছিলেন এলাকার কয়েকজন। সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেন এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘সবাইতো যে যার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি একা মানলে কী হবে?’

মগবাজার ফ্লাইওভাবের নিচে ছাপড়া করে থাকেন খাদিজা। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে এতদিন ছিলেন বেগুনবাড়ি বস্তিতে বোনের বাসায়। গতকাল ফিরেছেন নিজ আস্তানায়। রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে পরিচ্ছন্নকর্মী ও কয়েকজনের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই খোঁশ গল্পে মেতেছিলেন খাদিজা। মৌচাক এলাকায় ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করা টিসিবির গাড়ির সামনে দেখা গেলো জটলা। ক্রেতাদের লাইন খুব বেশি দীর্ঘ না হলেও সামাজিক দূরত্ব মেনে দাঁড়ায়নি কেউই। বেশিরভাগ ক্রেতাই মাস্ক ব্যবহার করেননি। কারণ জানতে চাইলে জানালেন, মাস্ক পড়লে তাদের দম বন্ধ লাগে।

সচেতনতার অভাব ও নিয়ম না মানা প্রসঙ্গে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ও পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. মো. মোজাহেরুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যে কয়েকটি ধাপ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাজারে যেভাবে ভিড়ের কারণে সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘিত হয়, তাতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পুলিশ, প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মাঠে নেমেছে। কিন্তু তারপরও পুরোপুরি সামাজিক দূরত্ব বজায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। নিয়ম না মানার প্রবণতা আমাদের মধ্যে বেশি। একটা অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে আমরা মোকাবিলা করছি। তাই বিষয়টিকে হাল্কা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এই ভুলটি যদি আমরা করতে থাকি তবে এর বড় মাশুলই আমাদের দিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App