×

সারাদেশ

টেকনাফে বেড়ে চলছে অপহরণ ও অস্ত্রের ঝনঝনানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২০, ০৬:০৭ পিএম

টেকনাফে বেড়ে চলছে অপহরণ ও অস্ত্রের ঝনঝনানি

মুক্তিপন দিয়ে ছেড়ে আসা জলিল আহম (বামে) ও ইব্রাহীম (ডানে)

কক্সবাজারের টেকনাফে বেড়েই চলছে অপহরণ ও অস্ত্রের ঝনঝনানি। এ ঘটনায় আতঙ্ক ও উদ্বেগে পাহাড় অধ্যুষিত এ এলাকার লোকজন। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সাথে কতিপয় স্থানীয় চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা যুক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছে এধরনের অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড। প্রতিমাসে টেকনাফের কোথাও না কোথাও অপহরণের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা জানায় পাহাড়ী এলাকায় বেশ কিছু অস্ত্রধারী রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় একাধিক দুষ্কৃতিকারী নিহত ও বেশকিছু দেশি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সরেজমিন তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ডাকাত কুখ্যাত আব্দুল হাকিম ও নুর হাফেজের নেতৃত্বে একটি দল প্রায় এক যুগ আগে থেকেই অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতো। অবশ্য কিছুদিন আগে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নুর হাফেজ মারা যান। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পরবর্তী লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি ও অস্ত্রেও ঝনঝনানি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। মাদক, অস্ত্র ও ডাকাতদলকে দমন করতে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির সাথে প্রায় প্রতিনিয়তই ঘটছে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা। নিয়মিত উদ্ধার করা হচ্ছে দেশি-বিদেশী অস্ত্র। গত ২ মার্চ একদিনেই দেশি বিদেশী ১১ টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে র‌্যাব ও বিজিবি। তাদের পৃথক অভিযানে র‌্যাব ১০ টি ও বিজিবি একটি অস্ত্র উদ্ধার করে। র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান ৭ জন ডাকাত। নুর হাফেজ সহ বেশ কিছু রোহিঙ্গা ডাকাত মারা পরলেও আব্দুল হাকিম ডাকাত রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাহিরে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় একাধিক মামলার আসামিরা। গত ডিসেম্বরে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কম্বনিয়া এলাকার মৃত হাজী আব্দুল মজিদের ছেলে জলিল আহম (৭০) ও তার ভাতিজাকে অপহরণ করে দুষ্কৃতিকারীরা। বিশাল অংকের মুক্তিপণ দাবি করা হয় তাদের পরিবারের কাছে, টাকা দিতে অস্বীকার করায় বুড়ো আঙ্গুল কেটেনেয় তারা। শেষে বাধ্য হয়ে ১৪ লাখ টাকার বিনিময় মুক্তি দেয় অপহরণকারীরা। একই সময়ে উত্তর কানজরপাড়া থেকে আবু বক্কর নামের একজনকে ধরে নিয়ে মুক্তিপণ নেয় অপহরণকারীরা। সর্বশেষ ২৮ মার্চ কম্বনিয়া পাড়ার মৃত রাহমত উল্লাহ’র ছেলে মো. ইব্রাহীমকে (৩৮) ধরে দেড়লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। তার ভাষ্যমতে এবারের টার্গেট স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুর হোসেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. হাশেম মো. ইউনুছ। ইব্রাহীম জানান, ক্রস ফায়ারে নিহত হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভী বাজারের চামড়া বাদশার ছেলে একাধিক মাদক ও ডাকাতি মামলার আসামি মো. সাদ্দাম, হাবিবুল্লাহ ও তার বাহিনী মিলেই তাকে অপহরণ করে বিশাল অংকের মক্তিপণ দাবি করে। অন্যথায় সকালে তার লাশ যাবে। এক রাতের মধ্যে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব না হওয়ায় তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় অপহরণকারীরা। পরে দেড় লাখ টাকা স্থানীয় বেলাল হাতে দেয়া হলে, মুক্তি দেয়া হয় তাকে। হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ীর ইনচার্জ এসআই মশিউর রহমান অপহরণের সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ইতিমধ্যে ওই এলাকায় কমিউনিটি পুলিশ ও স্থানীয়দের নিয়ে সভা করা হয়েছে। যে কোনো মূল্যেই দুষ্কৃতকারী ও অস্ত্রধারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। টেকনাফে উপজেলার শুধুমাত্র হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মহেশখালীয়াপাড়া, কম্বনিয়া ও সাতঘরিয়াপাড়া এ তিনটি এলাকায় প্রায় ৬০ টি অস্ত্র রয়েছে এমনটি দাবি পুলিশের এক উপ পরিদর্শকের। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারি উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় গভীরভাবে আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ জানান, বছরের বেশি সময় ধরে মাদক ও ডাকাতদলের বিরুদ্ধে পুলিশের কঠোর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ সব অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে গেলে প্রতিনিয়ত পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। অস্ত্র ও মাদক পাচার শূন্যের কোঠায় আনতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। র‌্যাব টেকনাফের কোম্পানী কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকার জানান, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে র‌্যাব সদস্যদের নিয়মিত অভিযান রয়েছে। ইতিপূর্বে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৭ অস্ত্রধারী ডাকাত নিহত হয়েছে। এটি এ লাকার জন্য বড় ধরনের অভিযান। তার চেয়ে বড় বড় অভিযান পরিচালনা করতে র‌্যাব প্রস্তুত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App