×

আন্তর্জাতিক

করোনা তহবিল নিয়ে কী হচ্ছে সার্কে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২০, ১০:০৭ এএম

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সার্কভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের সঙ্গে ভিডিও সম্মেলনের পর এখন পর্যন্ত সদস্য দেশগুলো যে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটি স্ব স্ব দেশের কাছেই রয়েছে। সার্ক সচিবালয় কিংবা তৃতীয় কোনো পক্ষের হাতে টাকাগুলো হস্তান্তর করেনি কোনো দেশ। এ অবস্থায় পাকিস্তান বলেছে, সার্ক সচিবালয়ে প্রতিশ্রুত টাকা জমা দিতে। কিন্তু অন্য সদস্য দেশ এ নিয়ে কোনো কথা বলছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সেদিনের ভিডিও সম্মেলনটি ছিল নজিরবিহীন। কারণ শীর্ষ সম্মেলনের অপেক্ষা না করে সার্ক নেতারা এই প্রথম ডিজিটালের মাধ্যমে কথা বলে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার ডাক দিয়েছেন। এরফলে বিশ্লেষকরা বলছেন, সার্ক এখনো মারা যায়নি, কোমায় অথবা নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে আছে।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সার্কের এই জরুরি তহবিল গঠনে ভারত সরকার এক কোটি মার্কিন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশ এই তহবিলে ১৫ লাখ, শ্রীলঙ্কা ৫ লাখ, আফগানিস্তান ১০ লাখ, নেপাল ৮ লাখ, মালদ্বীপ ২ লাখ ও ভুটান ১ লাখ ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে পাকিস্তান এখানে কোনো টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জরুরি তহবিলের টাকা সদস্য দেশগুলোর চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সরবরাহে ব্যয় হবে। গত ১৫ মার্চের ভিডিও সম্মেলনে অন্য দেশের সরকারপ্রধানরা থাকলেও পাকিস্তানের সরকারপ্রধান ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পরিবর্তে দেশটির কার্যত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাফর মির্জা সেখানে প্রতিনিধিত্ব করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস ঠেকাতে সার্কের এই জরুরি তহবিল গঠন হলেও এর ব্যবহার বিধি হয়নি। অনেকেই বলেছেন, এই তহবিল থেকে ভাইরাস প্রতিরোধে সার্কভুক্ত এক দেশ অন্য দেশকে সহযোগিতা দেবে। এরমানে তহবিল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তহবিলে নগদ টাকা থাকবে না! সবমিলিয়ে এই তহবিল একটি কাল্পনিক তহবিল। এর পেছনে অন্য রাজনীতি কাজ করছে। তবে যাই হোক না কেন, এর মাধ্যমে সার্ককে জীবিত করে তোলার একটি প্রয়াস নিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

তিনটি কারণে সার্ক জীবিত হয়েছে বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ বিষয়ে সম্প্রতি তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ভারতের এনআরসি/সিএএ/দিল্লি সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে মোদি তার নিজের নতুন ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করেছেন। দ্বিতীয়ত এটা দেখানো, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতই নেতৃত্ব দিতে পারে এবং তৃতীয়ত, অন্য জোটগুলোর সব সদস্য যেমন বিমসটেক ভৌগোলিকভাবে কাছাকাছি না থাকায় এই ধরনের প্রস্তাব কাজে দেবে না। তার মতে, যে সংগঠনের মৃত্যু ঘণ্টা বাজানোর কাজটা ভারতই করেছে এবং যার প্রাসঙ্গিকতা এখন কাগজের বাইরে অনুপস্থিত সেই নিয়ে কথা বলা কেবল রাজনৈতিক। এর বাইরে আর কোনো মূল্য আছে কিনা সেই বিষয়ে তিনি সন্দিহান।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেছেন, উৎপাদন, বাণিজ্য বা বন্ধুত্ব যেভাবেই দেখা হোক না কেন, সারাবিশ্ব এখন এক শেকলে জুড়ে আছে। দক্ষিণ এশিয়ার জন্য সার্ক একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করতে পারে। আমরা দেখলাম ভারতের নেতৃত্বে একটি ভিডিও কনফারেন্সিং হলো এবং সামনে এটি কার্যকরী একটি সংস্থা হিসেবে আবিভর্‚ত হতে পারে।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ভারত সরকার বাংলাদেশের কাছে যে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে ৩০ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক এবং ১৫ হাজার হেড কভারের একটি বড় চালান হস্তান্তর করেছে সেটি ওই সার্ক তহবিলের অংশ থেকেই করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে এই সহায়তা হস্তান্তর করে জানান, সহায়তার এই জরুরি চালানটি দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষণা অনুসারে ভারতের এক কোটি মার্কিন ডলার প্রতিশ্রুতির অংশ থেকে। ভারত, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য সার্কভুক্ত দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণে সৃষ্ট পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।

ভারতের এমন সহায়তা দেয়ার পর গত ২৪ মার্চ ওই তহবিলের ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ্? মাহমুদ কোরাইশি। তিনি জানান, করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জরুরি তহবিল সার্ক মহাসচিবের অধীনে গঠিত হওয়া দরকার। সার্ক দেশগুলোর জরুরি তহবিলে কোনো টাকা না দিয়েও তারা এ দাবি তুলল।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পাকিস্তান শুধু একথা নয়, এরআগে গত ১৫ মার্চ যখন সার্কভুক্ত নেতারা ভিডিও সম্মেলন করেন তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পরিবর্তে সেখানে প্রতিনিধিত্ব করা দেশটির কার্যত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাফর মির্জা কাশ্মির প্রসঙ্গ নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেছিলেন। তবে ওইসময় ভারতসহ কোনো দেশই কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তানের তির্যক মন্তব্যের কোনো জবাব দেয়নি।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, ২০১৪ সালের নভেম্বরে কাঠমান্ডুতে ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার পর থেকে নির্জীব হয়ে রয়েছে সার্ক। ওই সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়েছিল, পরবর্তী সম্মেলন ২০১৬ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানে হবে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের জেরে তা হয়নি এবং অদূর ভবিষ্যতে যে তা হবে তারও কোনো সম্ভাবনা নেই। সার্কের পরিবর্তে ভারত এখন ‘বিমস্টেক’ বা ‘বিবিআইএন’-এর মতো বিকল্প জোটগুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করলেও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সার্কের মৃত্যু পরোয়ানা লিখে দেয়ার সময় আসেনি- আর সেটা উচিতও হবে না। তাদের মতে, সার্ক যদি মরেই যেত তাহলে এই ভিডিও সম্মেলন হতো না।

সাবেক কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, করোনার হুমকি মোকাবিলায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভিডিও সম্মেলন ছিল অভ‚তপূর্ব পদক্ষেপ এবং ভাইরাস প্রতিরোধের প্রস্তাবটিও অত্যন্ত চিন্তাশীল। এরমাধ্যমে সার্ক কি জীবন ফিরে পেল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্ক কোনোদিন মরবে না। কেউ তাকে মারতেও পারবে না। দক্ষিণ এশিয়ায় সম্প্রসারিতভাবে সার্কই একমাত্র আঞ্চলিক দল যারা ঠিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারে।

তবে গত ১৫ মার্চের ভিডিও সম্মেলনে মোদি উদ্ভুত পরিস্থিতি সামলাতে সদস্য দেশগুলো নিয়ে জরুরি তহবিল গঠনের আলোচনা হলেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাব খুব একটা নড়াচড়া হচ্ছে না। ওই ভিডিও সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, অন্য দেশগুলো রাজি থাকলে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে বা আঞ্চলিক সম্মেলন আয়োজনেও প্রস্তুত আছে বাংলাদেশ। তিনি এ প্রস্তাবের পাশাপাশি এও বলেছিলেন, করোনা ভাইরাস সঙ্কট সামলাতে আগামী দিনে সার্ক দেশগুলোর স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব বা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক অধিকর্তাকে নিয়ে টেলিকনফারেন্স করা যেতে পারে। এরপর গত বৃহস্পতিবার সার্ক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একটি ভিডিও সম্মেলন করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App