×

মুক্তচিন্তা

অনুগ্রহ করে ঘরে থাকুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২০, ০৮:৫৫ পিএম

এমন নয় যে বিশ্বব্যাপী কোনো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে যার জন্য প্রাণভয়ে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না বরং বাধ্য হয়ে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু কোনো যুদ্ধ ছাড়াই কার্যত গোটা পৃথিবীর মানুষ আজ অনেকটা স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি, এটাই সত্যি। আবার যদি বলি বিশ্বব্যাপী এক অন্যরকম যুদ্ধ চলছে, তাও বোধহয় ভুল বলা হবে না। যে যুদ্ধে গোটা পৃথিবীর মানুষ আজ কোভিড-১৯ নামক এক অভিন্ন শত্রু র মোকাবিলা করার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর ঘরে বসে থাকাও এই যুদ্ধ জয়ের একটা কৌশল বলা যেতে পারে। শুধু ঘরে বসে থাকা নয় একের পর এক লকডাউন করা হয়েছে পৃথিবীর বড় বড় শহর। এমন দৃশ্য পৃথিবী এর আগে কখনো দেখেছে কিনা জানা নেই। পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশেরই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। শুধু ফ্লাইট নয় জলপথ, স্থলপথে বন্ধ রয়েছে স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। কার্যত অচল হয়ে পড়েছে গোটা পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা। কোনো যুদ্ধের দামামা ছাড়াই বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত সাদা-কালো, হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কোনো জাত ধর্মের যাচাই-বাছাই ছাড়া কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়ে কেবলই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে সংক্রামক ব্যাধি করোনা ছড়িয়ে পড়লে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হবে এই সোনার বাংলা। এটা অনুধাবন করতে পেরেই সরকার দেশের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছে ঘরে থাকার জন্য। যেহেতু এই ভাইরাসটির কোনো প্রতিষেধক এখনো তৈরি হয়নি সেই কারণে আপাতত সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। এ মর্মে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিদিন স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করাসহ বিভিন্ন উপদেশ দিচ্ছে। সেই সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে চিকিৎসকসহ সবাই যে বিষয়টির ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তা হলো সচেতনতার পাশাপাশি সবাইকে বলা হচ্ছে স্টে অ্যাট হোম অর্থাৎ ঘরে থাকুন। সাধারণ মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার আহ্বান জানানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সমাজবদ্ধ জনগোষ্ঠীর এই আবহমান বাংলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু কোনো উপায় নেই, বিধি বাম সংক্রামক ব্যাধি কোভিড-১৯ থেকে বাঁচতে এর কোনো বিকল্প নেই আপাতত। এতদিন শুনে এসেছি মানুষের সঙ্গে না মিশলে বলা হতো অসামাজিক। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে, মানুষের সঙ্গে না মিশতে কিংবা ভদ্রভাবে বলতে গেলে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কিংবা যদি বলি বাধ্য করা হচ্ছে কেবলই মহামারি থেকে উত্তোরণের জন্য। এমন এক ব্যাধির আবির্ভাব ঘটেছে যার কারণে পুরো বিশ্ব আজ লকডাউন, বিশ্বের মানুষ নিজ গৃহে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ যাকে হালের আলোচনায় বলা হচ্ছে হোম কোয়ারেন্টাইন। এতদিন যে ছেলেটি বাইরে না গেলে, বন্ধুদের সঙ্গে দিনে অন্তত একবার আড্ডায় মিলিত না হলে পেটের ভাত হজম হতো না সেই আড্ডাপ্রিয় তরুণটিও কিন্তু বাসার চার দেয়ালে স্বেচ্ছায় কোনো অভিযোগ ছাড়াই বন্দি হয়ে আছে। কেউ কারো বাসায় যাচ্ছে না, কোনো কারণে যদি কেউ না বলে বাসায় চলে আসছে এক সময়ের সবচেয়ে অতিথিপরায়ণ মানুষটিও প্রচণ্ড বিরক্তি বোধ করছে। পাড়ার মোড়ে যুবকদের কোনো আড্ডা নেই, মসজিদ ছাড়া যিনি এক ওয়াক্ত নামাজও পড়তেন না তিনিও বাসায় নামাজ পড়ছেন। এমন সব অস্বাভাবিক দৃশ্য এর আগে বাঙালি দেখেছে বলে আমার জানা নেই। এসবের একমাত্র কারণ সংক্রামক ব্যাধি কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস। পুরো বিশ্বকে তছনছ করে দিয়েছে এই করোনা ভাইরাস। অনাকাক্সিক্ষত মহামারি মোকাবিলায় সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সরকারের একার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। দেশের নাগরিকদেরও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। এবং আমার মনে হয় আপাতত সরকারের নির্দেশনা মেনে শত কষ্ট হলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রত্যেকে নিজেদের ঘরে অবস্থান করলেই এ সমস্যা মোকাবিলা করা সরকারের জন্য অনেকটা সহজ হবে। অনুগ্রহ করে ঘরে থাকুন। শিক্ষক ও লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App