×

পুরনো খবর

রাজধানীর সড়কে বেড়েছে মানুষ ও যানবাহন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২০, ১০:২০ এএম

রাজধানীর সড়কে বেড়েছে মানুষ ও যানবাহন

ফাইল ছবি।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই মানুষ রাস্তায় নামছে। কেউ নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। অনেকেই মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করছে না। গত দুদিনে রাজধানীর সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। একই সঙ্গে রিকশা ও প্রাইভেটকারের সংখ্যাও বেড়েছে। সবাই ঘর থেকে বের হতে শুরু করেছে। আগামী দিনগুলোতে রাস্তায় ভিড় আরো বাড়বে। এ কারণে আস্তে আস্তে রাজধানীর বাসিন্দাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, গত ২৬ মার্চ সরকারের বিধিনিষেধ আরোপের পর থেকে সুপারশপগুলোতে ভিড় অনেকটা কমেছিল। রাস্তায় নামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কেমন আচরণ করে তা নিয়েও নগরবাসীর মধ্যে শঙ্কা ছিল। কিন্তু ১০ দিনের ছুটির পঞ্চম দিনেই বিধিনিষেধ ও শঙ্কা পাশ কাটিয়ে মানুষ রাস্তায় নেমেছে। গতকাল সোমবার ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন স্থানের সুপারশপগুলোতে নারী-পুরুষের বেশ ভিড় ছিল। সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন।

লালমাটিয়া এলাকার বাসিন্দা আলেয়া রহমান জানান, বাসায় পর্যাপ্ত চাল-ডাল থাকলেও নাশতা বা  স্লাকস জাতীয় খাবার শেষ হয়ে গেছে। এখন সেগুলো নিতে এসেছি। এ জন্যই রাস্তায় বের হয়েছি। সতর্কতার জন্য মুখে মাস্ক ব্যবহার করেছি। ধানমন্ডিসহ নগরীর অনেক জায়গাতেই মোবাইল রিচার্জ ও বিকাশের এজেন্টদের দোকান খুলে বসতে দেখা গেছে। এই এলাকার ফাস্টফুড ও কনফেকশনারিও খোলা দেখা গেছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মাস্ক বিতরণ করতে দেখা যায়। এখানেও মানুষের বেশ ভিড় ছিল। পশ্চিম পান্থপথ বউবাজারের সামনে ফলের দোকানে ফল কিনছিলেন সরকারি কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, চারদিন ধরেই বাসায় অবস্থান করেছি। টেলিভিশনে দেখছি লোকজন রাস্তায় চলাফেরা করছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। তাই আমিও মাস্ক পরে বাইরে এসেছি। ফল কিনে আবার বাসায় চলে যাব।

দুপুরে নামাজের পর পশ্চিম পান্থপথ মসজিদগুলোর আশপাশের অলিগলির মুখে তরুণদের আড্ডা দিতে দেখা গেছে। অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে পায়ে হেঁটেও চলতে দেখা গেছে। ফার্মগেট, মালিবাগ, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রির ট্রাকগুলোর সামনেও মানুষের ভিড় অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ছিল। নারী ও পুরুষের পৃথক লাইন ছিল। এখানে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির ব্যাপারে কারো মধ্যেই সতর্কতা দেখা যায়নি। গায়ে গায়ে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থেকেই সবাই কেনাকাটা করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এ ব্যাপারে কোনো ভ‚মিকা রাখতে দেখা যায়নি।

গতকাল রাজধানীতে যানবাহন চলাচলেও কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। গত কয়েক দিনের তুলনায় গতকাল প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি ও রিকশা বেশি সংখ্যায় চলাচল করেছে। মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের সামনের রাস্তায় রিকশাচালক লোকমান হোসেন জানান, তিনি প্রতিদিনই রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছেন। প্রথম তিনদিন জমার টাকা তুলতে কষ্ট হয়েছে। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটিয়েছেন। রবিবার থেকে রাস্তায় লোকজন চলাচল বেড়েছে। ফলে কিছু টাকা আয় হচ্ছে। দুয়েক দিনের মধ্যে লোকজনের চলাচল আরো বাড়বে বলে তিনি আশা করছেন।

ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ডের সামনে কথা হয় সিএনজিচালক রবিউলের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের অনেকেই এখন সিএনজি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষজন আর কতদিন ঘরে বসে থাকবে? পেটের ক্ষুধা তো মিটাতে হবে। পেটের দায়েই করোনার ভয়ে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। নগরীর প্রতিটি সড়কেই রবিউলের মতো অনেক সিএনজিচালককে দেখা গেছে।

রাস্তায় প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের সংখ্যাও গতকাল অনেক বেশি সংখ্যায় ছিল। সকালের দিকে কারওয়ানবাজার এলাকায় অনেকেই প্রাইভেটকারে এসে বাজার করেছেন। দিনের বেলায় প্রতিটি সড়কেই অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি সংখ্যক প্রাইভেটকার ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাইক্রোবাস চালক জানান, গত কয়েক দিন তিনি রাতের বেলায় যাত্রী নিয়ে সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা জেলায় যাতায়াত করেছেন। পুলিশ বা আর্মি রাতে থাকে না। তারপরও যেন সমস্যা না হয় সে জন্য ‘জরুরি রপ্তানি কাজে নিয়োজিত’ কাগজে বড় করে লিখে নিয়েছেন। তার পরিচিত আরো কয়েকজন একই কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App