×

জাতীয়

ভারতে আটকে পড়াদের দেশে ফেরার আকুতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২০, ০৯:৪৮ এএম

ভারতে আটকে পড়াদের দেশে ফেরার আকুতি

দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে গতকাল গণমাধ্যমে ভিডিও বার্তা পাঠান বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে আটকে পড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এই মুক্তিযোদ্ধা।

উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আটকা পড়েছেন হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে অনেকেই দেশে ফেরার বিমানের টিকেটও কেটেছিলেন। তবে ফিরতে পারেননি। হঠাৎ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকেই অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুরা সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে। সবমিলিয়ে সুস্থ হওয়ার জন্য গিয়ে এখন তারা শারীরিক ও মানসিক রোগী হয়ে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আটকে থাকা বাংলাদেশিরা এখন চরম আর্থিক সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কেউ পিতার, কেউ স্ত্রীর, কেউ ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য আবার কেউ ভারতে গিয়েছিলেন বেড়াতে। আটকে পড়া বেশিরভাগ বাংলাদেশির সঙ্গে পরিবারের একাধিক সদস্য রয়েছেন। এদের সবার কথায় অসহায় আর্তি। যে কোনো উপায়ে দেশে ফিরতে চান। এই সংকটজনক অবস্থায় আটকে পড়াদের কয়েকজন বাংলাদেশ হাইকমিশন ও উপহাইকমিশনে যোগাযোগ করে জানিয়েছেন সমস্যার কথা। কিন্তু সেখানে ইতিবাচক সাড়া পাননি।

তাদের কেউ কেউ বলেছেন,বাংলাদেশে থাকা আমেরিকানদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। ঠিক একই কায়দায় ভারতের বিভিন্ন শহরে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের যদি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় নিয়ে আসা যায় সে ক্ষেত্রে তারা দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই পাবেন।

এরকম পরিস্থিতিতে গতকাল রবিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভারতে কিছু বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন এবং তাদের থাকতে অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের দূতাবাস ইতোমধ্যে একটি প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করেছে। আটকে পড়াদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা এখনো জানাননি আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনারা একসঙ্গে কতজন, কোথায় আছেন, নাম, বয়স, পাসপোর্ট নম্বর, যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর আমাদের দিল্লিতে অবস্থিত দূতাবাসকে জানান। দিল্লিতে দূতাবাসের টেলিফোন নম্বর ৮৫৯৫৫-৫২৪৯৪ (অথবা মুম্বাই কন্সুলেট ৯৮৩৩১ ৫৯৯৩৬)।

তিনি বলেন, যারা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন তাদের আবার জানানোর প্রয়োজন নেই। পূর্ণ তালিকা পেলে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে। আপনাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে না পারা পর্যন্ত অন্তত আমরা চেষ্টা করব স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যেন আপনাদের চাহিদার বিষয়গুলো দেখভাল করেন। তবে তিনি শর্ত দিয়ে বলেন, যারা ফিরে আসতে চান তাদের আশকোনা হাজ ক্যাম্পে এবং যারা চিকিৎসাধীন তারা কুর্মিটোলা বা অন্য হাসপাতালে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার সম্মতি দিতে হবে।

ব্যাঙ্গালুরু থেকে ভিডিও বার্তায় ঢাকার রূপনগরের এক মুক্তিযোদ্ধা দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মী ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রূপনগর থানা কমান্ডার সেই মুক্তিযোদ্ধা তার ভিডিও বার্তায় আকুতি জানিয়ে বলেন, ব্যাঙ্গালুরুর নারায়ন হাসপাতালে গত ২০ মার্চ তার চিকিৎসা শেষ হয়েছে। দেশে ফেরার জন্য তিনি ২৫ মার্চ বিমানের টিকেট কেটেছিলেন। কিন্তু ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকেই গোটা ভারত লকডাউন হয়ে যায়। ফলে তিনি সেখানে আটকা পড়েছেন।

তিনি বলেন, সেখানে তার মতো বাংলাদেশের হাজার খানেক নাগরিক আটকা পড়েছেন। টাকা-পয়সা খুব একটা না থাকায় তারা অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। শিশুদের অবস্থা আরো করুণ। তারা যে অর্থ নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন তা চিকিৎসাসেবায় শেষ হয়েছে। দেশে থেকে টাকা নিয়ে আসারও কোনো সুযোগ নেই। চেন্নাইয়ে আটকা পড়া নোয়াখালীর জাফর হোসেন তার বাবা আবু তাহেরের ওপেন হার্ট সার্জারি করাতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে রয়েছে তার ভাইও। সার্জারি ঠিকভাবেই হওয়ার পর সোমবার সেলাই কাটা হয়েছে। কিন্তু কলকাতায় ফেরে দেশে ফেরার কোনো রাস্তাই তিনি খুঁজে পাননি। লকডাউন থাকায় তাদের মাথায় হাত।

খবরে জানা গেছে, ভারত সরকার তাদের নাগরিকদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিলেও সেখানে বাংলাদেশিদের দেখার কেউ নেই। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে তারা আবেদন করে বলেছেন যেভাবেই হোক যেন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। যদি ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব না হয় তাহলে সেখানেই যেন তাদের টাকা দিয়ে সাহায্য করা হয়।

প্রতি বছর প্রায় ১২ লাখেরও বেশি মানুষ ভারতে চিকিৎসার জন্য যান। এর বেশির ভাগই যান ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালে (সিএমসি) চিকিৎসা নিতে। সেখানে গিয়ে আটকে পড়া রোগী আদিত্য কর্মকার বলেন, চিকিৎসার সব কার্যক্রম শেষ করেও এখন আমি দেশে ফিরতে পারছি না। ভারত সম্পূর্ণভাবে লকডাউন থাকায় এখানে খাদ্যদ্রব্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফোন দিয়েও কোনো বিশ্বাসযোগ্য সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ছাত্র দিলসাদ কবির তা মাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে মাঝপথে চিকিৎসা আটকে গেছে। এখন আমার মা আর আমি সেখানে আটকে আছি।

ভারতের বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে গিয়েছিলেন বরিশালের ১১ জনের একটি দল। এই দলের একজন জানান, তারা প্রায় এক মাস আগে ভারতে এসেছেন। তখন কোনো সমস্যা আঁচ করতে পারেননি। কিন্তু ফেরার মুখে লকডাউনের সমস্যায় পড়েছেন। বর্তমানে মহীসুরে তারা আটকে রয়েছেন। কলকাতায় বিভিন্ন গেস্ট হাউসে আটকে রয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার। এদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তাদের সবার মধ্যে আতঙ্ক। দুশ্চিন্তা। তাদের একজন বলেছেন, কলকাতায় ঘুরতে এসে বিপদে পড়েছি। বেড়ানো কিংবা চিকিৎসার জন্য এসে এমন সংকটে পড়বেন তা ভাবতেও পারেননি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভারত থেকে সব আন্তর্জাতিক বিমানের ফ্লাইট কাল মঙ্গলবার পর্যন্ত পর্যন্ত বন্ধ। ফলে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে চাইলেও এখন তা প্রায় অসম্ভব। বিমানে তারা বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন না। ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারতে অপেক্ষা করেও নিস্তার নেই। কারণ ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে তাদের দেশে ফেরা মুশকিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App