×

জাতীয়

খাদ্য সহায়তা দেয়াই বড় চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২০, ১০:৫০ এএম

করোনা ভাইরাসে থমকে গেছে সারা পৃথিবী। ঘরবন্দি প্রায় ১৭০ কোটি মানুষ। করোনার মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে উন্নত দেশগুলো। প্রতিটি দেশে নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষের সহায়তা দিচ্ছে সরকারগুলো। বাংলাদেশ সরকারও অঘোষিত লকডাউনের আগে সারাদেশে করোনা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শুধু রপ্তানিকারকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। কিন্তু এর বাইরে থাকা অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকরা পড়তে পারেন খাদ্যঝুঁকিতে। এসব শ্রমিকের শনাক্ত করে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়াই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

জানা গেছে, দেশে করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পরই সরকার সব কর্মসূচি সীমিত করেছে। পাশাপাশি জনসমাগম এড়িয়ে চলতে নির্দেশ দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব অফিস আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ সময় কর্মহীন হয়ে পড়েছে হোটেল-মোটেল শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ভাসমান হকার, ফুটপাতের হকার, ভিক্ষুক, রিকশা শ্রমিক, ভ্যানচালক থেকে শুরু করে অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। সরকারের কাছে এদের কোনো ডাটাবেজও নেই।

যার কারণে এদের চিহ্নিত করে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়াই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও সরকার ইতোমধ্যে ওএমএস প্রোগ্রাম আরো বর্ধিত করছে। কিন্তু এসব শ্রমিক আর রাজধানী বা জেলা শহরে নেই। এরা সবাই যার যার বাসস্থানে অবস্থান করছে। কারণ এরা নেই সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে। যার কারণে এদের খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদরা।

অনানুষ্ঠানিক শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ভোরের কাগজকে বলেন, অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন। এরপরও উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আমরা খাদ্য সহায়তা দেয়া শুরু করেছি। যারা তাদের বাড়িতে গেছেন তারা খাদ্য সহায়তা পাবেন। এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে এবং এর পরিধি আরো বাড়ানো হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের মোট ৬ কোটি ৭০ হাজার মানুষ শতাধিকেরও বেশি খাত-উপখাতে কাজে শ্রমবাজারে নিয়োজিত। এদের মধ্যে গার্মেন্টস খাতে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা ৪৫ লাখের কাছাকাছি। তবে রপ্তানিকারকরা বলছেন, রপ্তানি খাতে প্রায় ২ কোটি শ্রমিক কাজ করছেন। রপ্তানিমুখী খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম তৈরি পোশাক খাত, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, স্পেশালাইজড টেক্সটাইল, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিপণ্য, ওষুধ, চা, শাকসবজি, হ্যান্ডিক্র্যাফট ও তামাক। গার্মেন্টস মালিকরা বলছেন, পুরো রপ্তানি খাতের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক।

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের প্রায় ২০০ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি রয়েছে। এই সুরক্ষা কর্মসূচিতে অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা নেই। এছাড়া অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কোনো ডাটাবেজও সরকারের কাছে নেই। যার কারণে এদের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার আগে এদের চিহ্নিত করা জরুরি। সরকার চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও এনজিওর মাধ্যমে এদের চিহ্নিত করতে পারে। সরকার ইতোমধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেছে। রপ্তানিমুখী শিল্পের পাশাপাশি যদি অন্যান্য খাতের তথা অভ্যন্তরীণ বাজারের শ্রমিকদের জন্য প্রণোদনা থাকত, তাহলে ভালো হতো। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি তহবিল থাকা জরুরি। বিশেষ করে এসএমই খাতের শ্রমিকদের বেতনের বিষয়টি ভাবা জরুরি। এছাড়া আর্থিক সহায়তা দরকার হবে শহরে ও গ্রামের দেশীয় শিল্প ও সেবা খাতে। প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়াই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ সরকারের কাছে তাদের কোনো ডাটা নেই এবং তারা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরে। এ কারণে সরকার এদের লজিস্টিক সাপোর্ট না দিয়ে নগদ সহায়তা দিতে পারে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App