×

মুক্তচিন্তা

আমরা যেন হেরে না যাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২০, ০৬:১৮ পিএম

করোনা ভাইরাস ঠেকাতে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ছে। সেনাসদস্যরা টইল দিচ্ছেন রাজপথে। মানুষকে নিরাপত্তা শুধু নয় কীভাবে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যাবে সে পরামর্শও দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর। জাতীয় দুর্যোগের দিনে তারা সাধারণ মানুষের বন্ধু হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছে। কোথাও কোথাও ঘরবন্দি মানুষের কাছে নিত্যপণ্য পৌঁছে দিচ্ছে। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সবচেয়ে সামনের সৈনিক যারা সেই ডাক্তার-নার্সরা এখনো সত্যিকার অর্থেই অসহায় অবস্থায়। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) না থাকায় তারা আতঙ্কের মধ্যে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা নয়, যে কোনো রোগের চিকিৎসায় কার্যত অচলাবস্থা চলছে। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা পিপিই না পেলেও জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে পিপিই পরে ফটোসেশনের হিড়িক পড়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পিপিই দেয়া এ মুহূর্তের কতটা জরুরি? বরং যারা সরাসরি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেবে সেসব চিকিৎসক, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয়কে সুরক্ষার জন্য পিপিই দেয়া দরকার। পিপিই কোনো ফটোসেশনের সামগ্রী নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী পিপিই সরবরাহের চেষ্টা চলছে এ কথা ঠিক। কিন্তু এই জরুরি সামগ্রীর যথেচ্ছ ব্যবহার হলে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা ঝুঁকিতে পড়বেন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পরও এ নিয়ে অপরাজনীতির প্রবণতা চললেও এখন দল মত নির্বিশেষে সব মানুষের ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা ভাইরাস ঠেকাতে হবে। ঘরবন্দি গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে সরকার সাধ্যমতো হাত বাড়ালেও ধনী ও সম্পন্নদের অনেকেই দায়হীন ভ‚মিকা পালন করছেন। রাজনীতির যেসব হাইব্রিড নেতা নিজেদের জনদরদি হিসেবে প্রমাণের জন্য পোস্টার লাগিয়ে নগর শহর গঞ্জের দেয়াল নোংরা করতেন তাদেরও পাশে পাচ্ছে না গরিব মানুষ। বিপদে নাকি বন্ধু চেনা যায়। হাইব্রিডদের সম্পর্কে দেশবাসী সতর্ক হলে সেটি আশীর্বাদ বলে বিবেচিত হবে। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুত রাখার জন্য জরুরিভিত্তিতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া দরকার। ভাইরাস চিহ্নিত করার সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। এদিকে করোনা ভাইরাস নিয়েও একশ্রেণির মতলববাজ উঠেপড়ে লেগেছে গুজব ছড়ানোর কাজে। যারা গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মনোবল নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে নিজেদের বাহাদুরি ফলাতে চাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষ যাতে সঠিক পথের বদলে কুসংস্কারের কবলে পড়ে সেজন্য ছড়ানো হচ্ছে আজগুবি তত্ত¡। সামাজিক গণমাধ্যমকে এজন্য যথেচ্ছ ব্যবহার করছে অর্ধশিক্ষিত এবং মতলববাজরা। কেউ কেউ বলছে রসুন, লবঙ্গ, আদাজল খেলে করোনা ভাইরাস ভালো হয়। আবার কেউ থানকুনি পাতা চিবিয়ে খাওয়ার তত্ত¡ হাজির করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গুজব ছড়ানো হয়েছে, করোনার কারণে ফ্রিজে কাঁচা মাছ, মাংস রাখলে বাড়ি গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফ্রিজ ভেঙে দেবে। গাইবান্ধার মাঠের হাটে মাইকিং করে গুজব ছড়ানো হয়েছে- করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে কালিজিরা, আদা ও গোলমরিচ বেটে খেতে হবে। রংপুর ও দিনাজপুরে গুজব রটনাকারীদের আবিষ্কার লবঙ্গ, সাদা এলাচ, আদা পানিতে সিদ্ধ করে খেলে মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবে না। গুজব ছড়ানো হয় মাঝরাতে আজান দিলে করোনা ভাইরাস হবে না। গুজব ছড়ালেই আইনি ব্যবস্থা নিয়ে গ্রেপ্তার করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। ইতোমধ্যেই এ নিয়ে কাজও শুরু করেছে বিভিন্ন সংস্থা। গুজব সৃষ্টিকারী একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সত্যতা যাচাই ছাড়া কোনো তথ্য সামাজিক যোগাযোগসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস সরকারের এই পদক্ষেপ গুজব সৃষ্টিকারীদের অপতৎপরতা রোধ করবে।

মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App