×

সারাদেশ

ফসল নিয়ে বিপাকে চলনবিলের কৃষক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২০, ০৪:২৬ পিএম

ফসল নিয়ে বিপাকে চলনবিলের কৃষক

চাঁকৈড় হাট , গুরুদাসপুর

উত্তরাঞ্চলের শষ্য ভাণ্ডার খ্যাত চলনবিল অঞ্চলের চাষাবাদ বরাবরই বৈচিত্রময়। চলনবিল অঞ্চলের বৈচিত্রময় কৃষি কাজে নিত্য নতুন ফসল উঠছে ঘরে ঘরে। ধানের পাশাপাশি লাভজনক হওয়ায় রবি শষ্য সরিষা, গম, রাই,ভুট্টা,মশুরসহ নানা রকম ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া,বড়াইগ্রাম। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনার ভাঙ্গুড়া,চাটমোহর উপজেলাসহ চলনবিল অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু বৈষ্যয়িক সমস্যা করোনা ভাইরাস ঠেকাতে বাংলাদেশেও নেওয়া হয়েছে সর্তকতামুলক পদক্ষেপ। তারই ধারা বাহিকতায় সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে গুরুদাসপুরের সব হাট-বাজার। ফলে বিপদে পরেছেন চলনবিলাঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারী ধরনের স্বল্প আয়ের ঋণ গ্রস্থ কৃষকেরা। হাট বাজারে নিতে পারছেন না তাদের উৎপাদিত ফসল। একদিকে ঋণের বোঝা অন্যদিকে সংসারের নিত্য প্রয়েজনীয় চাহিদার চাপে অবোরুধ্য কৃষক পরেছেন মহা সংকটে। না পারছেন ফসল বিক্রি করতে না পারছেন সংসারের চাহিদা মেটাতে। গুরুদাসপুরের বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। কথা হয় বাণিজ্য নগরী চাঁচকৈড় হাটে আসা কয়েক জন ক্ষুদ্র আয়ের কৃষকের সাথে। তারা জানান, ঋণ ও জমি লীজ নিয়ে আবাদ করেছি। ফসলও মোটামুটি ভাল হয়েছে। সরকার বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার ঋণের কিস্তি সাময়িক বন্ধ করলেও গ্রাম্য মহাজনরা (সুদে কারবারী) মানছেনা কারো কথা। যে কোন মুল্যে তাদের টাকা সুদে আসলে পরিশোধ করতে হবে। ফসলের ভাল দাম পাবেন সেই আশায় দু চোখে স্বপ্ন দেখছিলেন তারা। সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিলেন বৈষ্যয়িক সমস্যা করোনা আর সুদে কারবারীরা। তার উপর হাট বাজার বন্ধ এযেন মরার ওপর খারার ঘাঁ। জানতে চাইলে গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, এটা শুধু বাংলাদেশই নয় বৈষ্যয়িক সমস্যা। যার কারণে করোনা ভাইরাস ঠেকাতে বাংলাদেশেও নেওয়া হয়েছে সর্তকতামুলক পদক্ষেপ তারই ধারা বাহিকতায় সারাদেশের ন্যায় গুরুদাসপুরেও হাট বাজার সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। তদুপরি আমরা কৃষকদের কথা বিবেচনা করে চেষ্টা করছি কিছু বাণিজ্যলয় খুলে রেখে স্বল্প পরিসরে কৃষিপণ্য ক্রয় বিক্রয়ের। গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আব্দুল করিম বলেন, সামাজিক ভাবে দুরত্ব বজায় রাখতেই হাট বাজার সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক। আশা করছি অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। দেশের বৃহত্তর সার্থেই এটা করা হয়েছে। বৈষ্যয়িক সমস্যা মোকাবেলায় তিনি সবাইকে ধর্য ধারন করার অনুরোধ জানান। নাটোর কৃষি অধিদপ্তর সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরে চলনবিলের ৯ উপজেলায় মোট ৬২ হাজার ৩শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে রবি শষ্যের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ৪ হাজার ৪শ’ ১০ হেক্টর, রায়গঞ্জে ২ হাজার ৯শ’ ৯৫ হেক্টর, উল্লাপাড়ায় ১৯ হাজার ৭শ’ হেক্টর, শাহজাদপুরে ১৪ হাজার ৬শ’ ২৫ হেক্টর, এছাড়া পাবনার চাটমোহরে ৫ হাজার ৬শ’ হেক্টর, ভাঙ্গুগুড়ায় ৫ হাজার ৬শ’ ১৫ হেক্টর, নাটোর গুরুদাসপুরে ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর, সিংড়ায় ১ হাজার ৪শ’ ৫০ হেক্টর, আত্রাই উপজেলায় ২ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে রবিশষ্যের আবাদ হয়েছে। নাটোরের কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানাযায় এ বছর চলনবিলের ৯ উপজেলায় মোট ৬২ হাজার ৩শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে রবিশষ্যের আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের কৃষক আ.খালেক জানান, ‘৫ বিঘা জমি লীজ নিয়েছি ৭৫ হাজার টাকায় আনুসঙ্গিক খরচসহ ৫ বিঘা জমিতে সর্ব মোট লীজসহ ব্যায় হয়েছে তিন লক্ষাধিক টাকা অথচ যে ফসল পেয়েছি তা বর্তমান বাজার দরে বিক্রি করলে আসল টাকাই উঠবেনা। তাই ক্রেতা শুন্য হাটে বসে না থেকে আবাদী ফসল নিয়ে বাড়ী ফিরে যাচ্ছি’। এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.তমাল হোসেন জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন সাপ্তাহিক হাট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। করোনাভাইরাস যেহেতু ছোঁয়াচে, তাই জনসমাগম বন্ধ করার জন্য এই ব্যবস্থা। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে স্বল্প সময়ের মধ্যে জরুরী প্রয়োজনীয় ক্রয় বিক্রয় করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন- প্রতিদিন বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি অচিরেই দেশের অবস্থা ভাল হয়ে যাবে। তখন কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল ভাল ভাবে ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App