×

জাতীয়

পরিবারের সঙ্গে একান্ত সময় কাটছে খালেদার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২০, ০৯:৩৬ এএম

কখনো চুপচাপ শুয়ে থাকছেন বিছানায়, আবার কখনোবা দোতলার বারান্দায় পায়চারি করছেন নিঃশব্দে। স্কাইপিতে কথা বলছেন ছেলে, দুই পুত্র বধূ ও নাতনিদের সঙ্গে। কাছে রয়েছেন ভাইবোনেরাও। অনেক দিন পর পরিবারের সান্নিধ্যে এভাবেই হাসিখুশি সময় পার করছেন বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে বেশ উৎফুল্লই আছেন বিএনপি প্রধান। খালেদা জিয়ার পরিবার সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন সদ্য কারামুক্ত খালেদা জিয়া। গুলশানের নিজ বাসভবন ফিরোজায় তিনি আগামী ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। শর্ত সাপেক্ষে হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তিতে স্বস্তি ফিরেছে বিএনপিতেও। দলের নীতিনির্ধাকরা জানান, আপাতত রাজনীতি নয়; খালেদা জিয়ার সুস্থতার দিকেই নজর তাদের। তারা চান, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দলীয় প্রধান সুস্থ হয়ে উঠুন। তাছাড়া, সরকার যে দুটি শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে তা কোনোভাবেই যাতে ভঙ্গ না হয় সেই দিকেও সতর্ক নজর তাদের। দলীয়

এমন কোনো কর্মসূচিতে তারা যাবেন না যাতে সরকার আবারো ভিন্ন কোনো পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ পায়। জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন,

আমরা চাই না তিনি এখন রাজনীতি নিয়ে কথা বলুন। রাজনীতি করার অনেক সময় এবং সুযোগ পড়ে আসবে। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। এদিকে, খালেদা জিয়ার হোম কোয়ারেন্টাইন চলাকালে তার শারীরিক নিরাপত্তা নিয়ে বাড়তি সতর্ক রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। ফিরোজায় তিনি যে ফ্লোরে অবস্থান করছেন সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। পাশের একটি কক্ষ পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে, পরিবারের সদস্যরা সেখানে তার সঙ্গে সময় কাটান। জানা গেছে, দলীয় কোনো নেতাকর্মীকে দেখা করার অনুমতি দেননি খালেদা। ফলমূল ছাড়া বাইরের কোনো খাবারও তিনি খাচ্ছেন না। তাই তার খাবারও বাড়িতে রান্না হচ্ছে। গতকাল শনিবার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা নিজ বাসা থেকে তার পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে যান। পরে সবাই মিলে দুপুরের খাবার খান। খালেদা জিয়া কখন কি খাবেন তার খেয়াল রাখছেন বোন সেলিমা ইসলাম। আর আগের মতো সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করছেন ফাতেমা। আপাতত ডাক্তার ছাড়া বাইরের লোকের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ নিষেধ থাকায় সিনিয়র নেতারা খোঁজ রাখছেন মুঠোফোনে। সেলিমা ইসলাম জানান, বাড়িতে আসার পর থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন উৎফুল্ল রয়েছেন। দলীয় কোনো কথা তোলেননি এখনো। ২ বছর পর পরিবারের সবাইকে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছেন। যেদিন বাসায় এলেন রাতে খেয়েছেনও সবার সঙ্গে বসে। ঘুমিয়ে পড়ছেন ১০টা বাজতেই। ভোরে উঠে নামাজ আদায় করছেন। তার অভ্যাসগত অনেক পরিবর্তন হয়েছে বলে জানান সেলিমা ইসলাম। তিনি বলেন, লন্ডনে অবস্থানরত ছেলের বৌ ডা. জোবায়দা রহমানের তত্ত¡াবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থানীয় ডাক্তাররা তার দেখভাল করবেন। চিকিৎসার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হলে তার (ডা. জোবায়দা) পরামর্শে নেয়া হবে। এছাড়া চিকিৎসকরা নিয়মিত চেকআপ করছেন। বুধবার তাকে দেখে গেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফএফ সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন ও ডা. মামুন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জোবায়দা রহমানের সঙ্গে কথা বলে, গত বুধবার রাতে নতুন প্রেসক্রিপশন করে চিকিৎসা শুরু করেছেন। তবে এই মুহূর্তে একেবারে নতুন কোনো চিকিৎসা তারা শুরু করতে চান না। কারণ, হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে তার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে দরকার হলে নতুন চিকিৎসা শুরু করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চইালে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় নতুন চিকিৎসা শুরু করা যাবে না। তাছাড়া তার আগের ঔষধের কোর্স শেষ হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে তাকে কোন ধরনের চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুস সাত্তার বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন বিএনপি নেত্রী। তিনি সবার কাছে নিজের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। সুস্থ হওয়ার পরই সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করবেন বলেও জানিয়েছেন। নেতাকর্মীদের তার বাড়ির সামনে ভিড় না করতেও তিনি অনুরোধ করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App