×

জাতীয়

দরিদ্রদের পাশে গুটিকয়েক সাংসদ, অন্যদের দেখা নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২০, ১০:১৬ এএম

দরিদ্রদের পাশে গুটিকয়েক  সাংসদ, অন্যদের দেখা নেই

হতদরিদ্র

কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে হতদরিদ্ররা বিত্তবানদের এগিয়ে আসার তাগিদ
করোনা ভাইরাস আতঙ্কে রাজধানীসহ পুরো দেশ কার্যত অচল। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, শিল্প কারখানা বন্ধ। ঢাকার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন পুরো দেশ। বন্ধ বাস-ট্রেন-লঞ্চসহ সব গণপরিবহন। কাজ না থাকায় অনেকে হয়ে পড়ছেন বেকার। কর্মহীন নিম্ন আয়ের কয়েক লাখ মানুষ। অনেকের ঘরে ঠিকমতো খাবার নেই। সামান্য অসুখে পাচ্ছেন না চিকিৎসা সহযোগিতা। বস্তিবাসীরা যাপন করছেন মানবেতর জীবন। ঠিকমতো পাচ্ছেন না করোনা প্রতিষেধক সামগ্রীও। ঠিক তখনই সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তাদের দেয়া হলেও জনপ্রতিনিধি হিসেবে এসব মানুষের পাশে নেই ঢাকা মহানগরীর বেশিরভাগ সংসদ সদস্য। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা- সমালোচনা। তাদের মতে শুধু করোনা নয়, কোনো দুর্যোগেই ঢাকাবাসীর পাশে থাকেন না বেশির ভাগ সংসদ সদস্য। ঢাকা মহানগরীতে রয়েছে ১৫টি নির্বাচনী আসন। তাদের মধ্যে ১২ জনই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত। দুজন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ও একজন ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে নির্বাচিত। সংসদ সদস্যরা বলছেন, এই ইস্যুতে তাদের খুব একটা কাজ নেই। যা করার প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মেয়র ও কাউন্সিলররা তাদের সহযোগিতা করে আসছেন। তারপরেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে যার যার এলাকায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি করোনা প্রতিষেধক সামগ্রী দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন কেউ কেউ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু কিছু এলাকা ছাড়া বেশিরভাগ এলাকায় এমপিদের খুব একটা তৎপরতা দেখা যায়নি। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া তাদের যারা ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করেছেন, তাদের কাছ থেকে খুব একটা সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। এমনকি এলাকাতেও তাদের দেখা যায় না। তবে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে সামান্য খাবার ও করোনা প্রতিষেধক সামগ্রী যেমন মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিছু কিছু এলাকায় পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন অনেকেই। কামরাঙ্গীর চর ও কেরানীগঞ্জ (আংশিক) এলাকা নিয়ে ঢাকা-২ আসন গঠিত। এ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট কামরুল ইসলাম জানান, কামরাঙ্গীর চর এলাকায় হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। আমার নির্বাচনী এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইউপি চেয়ারম্যানরা ডিসি-ইউএনওদের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে হতদরিদ্রদের সহযোগিতা করে আসছেন। আমি এলাকার মানুষকে সর্বপ্রথম পিপিই দিয়েছি। আজকালের মধ্যে তাদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে। আর ঢাকা-৪ কদমতলী-শ্যামপুর আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আমার এলাকায় বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা করেছি। সাড়ে ৪ হাজার মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েছি। আজ থেকে গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে চাল, ডাল, আলু, মাস্ক ও সাবান বিতরণ করব। ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমাদের খুব একটা কাজ নেই। তবে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিররা বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করছেন। ঢাকার এমপিদের তো কোনো দায়িত্বও দেয়া হয়নি। তারপরেও জনপ্রতিনিধি হিসেবে কেউ যদি করোনা ছাড়াও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হন, তার চিকিৎসা যেন সঠিকভাবে তারা পান, সে বিষয়ে আমার এলাকায় যেসব হাসপাতাল আছে, আমি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। ইতোমধ্যে কয়েকশ পিপিই দিয়েছি। আরো দেয়ার চেষ্টা করছি। ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী নিজ নির্বাচনী এলাকা খিলগাঁও-সবুজবাগ-মুগদার মানুষের সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখার পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত ও যেকোনো রোগী যেন স্বাভাবিক চিকিৎসা সহায়তা পেতে পারেন, সেজন্য তিনি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন মুগদা জেনারেল হাসপাতালের কর্মকাণ্ড। হাসপাতালটির চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিরাপত্তায় গতকাল কয়েকশ পিপিই হস্তান্তর করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টা টেলি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করেছেন তিনি। এছাড়া ঢাকা-১৪ (মিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক শুরু থেকেই এলাকার মানুষকে সচেতন করার জন্য কাজ শুরু করেছেন। পাশাপাশি কারো কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাৎক্ষণিক তাকে যেকেনো ধরনের সেবা পৌঁছে দেয়ার কথা বলেছেন এই সংসদ সদস্য। মিরপুরের টোলারবাগে কয়েকটি ভবন লকডাউন করার পর এলাকার মানুষকে সচেতন করতে তৎপর হন তিনি। এছাড়া ঢাকার অন্যান্য এলাকাতেও সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের খুব একটা তৎপরতা দেখা যায়নি। প্রসঙ্গত; ঢাকা মহানগরীর ১৫টি আসনে আরো যারা সংসদ সদস্য আছেন তারা হলেন ঢাকা-৫ হাবিবুর রহমান মোল্লা, ঢাকা-৭ হাজী সেলিম, ঢাকা-৮ রাশেদ খান মেনন, ঢাকা-১০ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ঢাকা-১১ এ কে এম রহমত উল্লাহ, ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকা-১৩ সাদেক খান, ঢাকা-১৫ কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-১৬ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা-১৭ আকবর হোসেন পাঠান ও ঢাকা-১৮ এডভোকেট সাহারা খাতুন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App