×

অর্থনীতি

আমদানি-রপ্তানিতে ধস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২০, ০৯:৩১ এএম

আমদানি-রপ্তানিতে ধস
অপারেশন সচল থাকলেও জাহাজ আসা-যাওয়া ও পণ্য ডেলিভারি কমে গেছে
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশের অর্থনীতির ৮০ শতাংশের জোগানদাতা চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কমে গেছে। বন্দরে জাহাজ আসার পরিমাণও কমছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতি মাসে যেখানে গড়ে ৩৬০টি জাহাজ আসত, তা এখন ৩০০’র নিচে নেমে এসেছে। পণ্য ডেলিভারিও কমেছে আগের চেয়ে। এদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের সাপ্লাই চেন ঠিক রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশন ২৪ ঘণ্টা চলছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরের অপারেশন সচল থাকলেও জাহাজের আসা-যাওয়া ও পণ্য ডেলিভারি কমায় আমদানি-রপ্তানিও কমে গেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৫ শতাংশেরও বেশি চীন থেকে আসে। বিশেষ করে চীন থেকে গার্মেন্টসের বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়। করোনা ভাইরাসের প্রভাবের শুরুতে ব্যবসায়ীরা কিছু সময় হাতে রেখে এসব পণ্য আমদানি করে রাখেন। তবে আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে রপ্তানিযোগ্য পণ্য সময়মতো জাহাজীকরণ হচ্ছে না। করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশের অর্থনীতির ১৪টি সেক্টরে নেতিবাচক সংকট তৈরি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তারা বলছেন, করোনার প্রভাবে আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় প্রাথমিক হিসেবে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে। কাঁচামালের অভাবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান মূলত চীনা কাঁচামালনির্ভর। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করোনোর প্রভাবে তৈরি পোশাক, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, প্রসাধন, বৈদ্যুতিক পণ্য, কম্পিউটার, পাট, সুতা, মুদ্রণশিল্প, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ইলেকট্রনিকস পণ্য, কাঁকড়া, কুঁচে ও চশমাসহ বিভিন্ন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে নানা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি এম এ সালাম বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় কাঁচামালের তীব্র সংকট তৈরি হয়। এখন করোনা ভাইরাসের কারণে প্রতিনিয়ত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের কাছ থেকে চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল করা হচ্ছে। ফলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের পোশাকশিল্প। পণ্য আমদানি কমেছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসও। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি বছরে জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কাঁচামাল ও শিল্পপণ্যের আমদানি কমেছে। তবে স্বাভাবিক রয়েছে খাদ্যশস্য ও সাধারণ পণ্যের হ্যান্ডলিং। টানা ছুটি থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জাহাজ থেকে সব ধরনের পণ্য খালাস হচ্ছে, তবে পণ্য ছাড়িয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সুযোগ দেয়া হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, চিকিৎসা ও সেবাসামগ্রী। এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসও সীমিত পরিসরে ২৪ ঘণ্টা জরুরি আমদানি-রপ্তানি পণ্য ছাড়করণসহ আনুষঙ্গিক সেবা চালু রেখেছে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংকের সঙ্গে মিল রেখে ২ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের জরুরি আমদানি-রপ্তানি চালানের জন্য সীমিত পরিসরে ২৪ ঘণ্টা সচল রেখেছি আমাদের কার্যক্রম। কাজের প্রয়োজনে বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রয়োজন হলে সেই প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে। এসব বিষয় সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম ভোরের কাগজকে বলেন, দেশের সাপ্লাই চেন ঠিক রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশন ২৪ ঘণ্টা চলছে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আসা জাহাজের আমদানি পণ্য, কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানো এবং রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার জাহাজে তোলা, আমদানি পণ্য ডেলিভারি, ট্রেন বা ট্রেইলার দিয়ে কনটেইনার ঢাকা আইসিডি, বেসরকারি আইসিডিসহ বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠানো ও আনা ইত্যাদি কার্যক্রম চলছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে অফিসিয়াল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘরে অবস্থান করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে অপারেশনাল কাজে নিয়োজিতদের কর্মস্থলে উপস্থিত রেখে ২৪ ঘণ্টা বন্দর সচল রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স এসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, তৈরি পোশাক কারখানা একে একে বন্ধ ঘোষিত হচ্ছে। তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের অর্ডার বাতিল বা স্থগিত হচ্ছে। এ অবস্থায় রপ্তানির জন্য তৈরি পোশাক অফডকে আসা কমে যাচ্ছে। কিন্তু পাইপলাইনে যেগুলো আছে সেগুলো সঠিক সময়ে রপ্তানির জন্য এ মুহূর্তে বেসরকারি অফডকগুলোর ভ‚মিকা গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কর্মসূচির কারণে এসব অফডকে শ্রমিক, দিনমজুর, চালক ও হেলপারের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App