×

জাতীয়

বিপাকে সাধারণ রোগীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২০, ০৯:৪৩ এএম

সরকার নির্ধারিত হাসপাতালেও মিলছে না সেবা। সেবা দিচ্ছে না অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরাও।

কামরাঙ্গীরচরের নৈশপ্রহরী জীবন মিয়া (২২)। জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হন চারদিন আগে। ফোনে পরিচিত এক চিকিৎসকের পরামর্শে যান কাঁচপুরের সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে জীবন মিয়া যান পুরান ঢাকার মহানগর হাসপাতালে। সেখানেও চিকিৎসা জুটেনি তার। অসুস্থ শরীরে তাকে ফিরতে হয় বাড়ি। পরিচিত ওই চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি এবার যান কেরানীগঞ্জের সদর হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসক দূর থেকে তার দিকে ছুড়ে দেন একটা প্রেসক্রিপশন। তাই হাতে নিয়ে বাড়ি ফেরেন জীবন মিয়া।

‘যাব বহুদূর’ নামের একটি ট্রেনিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা আতিকা রোমা গত ২৫ মার্চ তার ফেসবুক পেইজে একটি পোস্ট দেন। করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা করাতে গিয়ে কী কী ভোগান্তিতে পড়েন এবং বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার শিকার হন- সেই বর্ণনা তুলে ধরেন ওই পোস্টে। তবে এর দুদিন পর তিনি সেবা পেয়েছেন জানিয়েও ফেসবুকে পোস্ট দেন। জীবন ও রোমার মতো অনেকেই করোনার উপসর্গ নিয়ে সরকার নির্ধারিত হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না।

রাজধানীর ওয়ারীর বাসিন্দা মৌসুমী সাহা বলেন, দুদিন আগে আমার মা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৯৯৯-এ ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স কল করলাম। ওরা এলো। যেই দেখলো মার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তখনই ওরা জানালো তারা রোগী নিতে পারবে না। কারণ জানতে চাইলে বলল, ওরা শ^াসকষ্টের রোগী নিয়ে জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারবে না।

অভিযোগ আছে জ্বর-সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট উপসর্গ থাকলে অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা সেই রোগীদের সেবা দিচ্ছে না। এছাড়া কুয়েত মৈত্রী, কুর্মিটোলা কিংবা করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকার যেসব হাসপাতালকে নির্ধারণ করেছে সেখানেও রোগী নিয়ে যেতে চাইছে না অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। কারণ অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরাও রয়েছেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের আতঙ্কে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালক আমিনুল হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, হাসপাতালে গিয়ে যদি কেউ সেবা না পায় তা অবশ্যই দুঃখজনক। কোভিড-১৯ এর জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে পর্যায়ক্রমে আনুষঙ্গিক সহায়তা পৌঁছানো হয়েছে। কাল বা পরশুর মধ্যে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলজি ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ও মিরপুর লালকুঠি মাতৃসদন হাসপাতাল পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। তবে করোনা নিয়ে মানুষের মনে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এর জন্য মোটিভেশন দরকার। আমরা বিভিন্নভাবে এই কাজটিও করছি।

অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রত্যেক জেলায় একটি করে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুমে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স শুধু করোনা সাসপেক্টেডদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এটি সাধারণ রোগীদের জন্য নয়।

বিখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, সাধারণ জ্বর-সর্দি নিয়ে মানুষ আতঙ্কিত এ কথা সত্য। তবে সবাই যে নতুন এই ভাইরাসে সংক্রমিত তাতো নয়। কিন্তু মানুষ এতটাই আতঙ্কিত যে এসব লক্ষণ দেখা দিলেই ওই ব্যক্তি এবং তার আশপাশের মানুষ ধরে নিচ্ছে তিনি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত। ফলে মানুষ হাসপাতালে ছুটছে। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরাও আতঙ্কগ্রস্ত।

এনজেন্ডার হেলথ বাংলাদেশের দেশীয় কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ডা. শেখ নাজমুল হুদা ভোরের কাগজকে বলেন, মানুষ দিনক্ষণ মেনে রোগাক্রান্ত হয় না। আর রোগীর জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স ডাকলে সাড়া দিতেই হবে। কিন্তু যারা এ সেবা দিচ্ছেন তারা তো কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁঁকির বাইরে নয়। অ্যাম্বুলেন্সে যাদের আনা হচ্ছে তারা করোনা সংক্রমিত কিনা তা তো বলা যায় না। অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সতর্ক থাকতে হবে বেশি। পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) তাদের জন্যও জরুরি। এছাড়া করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী আনা-নেয়ার পর পিপিই জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এরপর ১২ ঘণ্টা এগুলো ব্যবহার করা যাবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App