×

জাতীয়

পাহাড়ে হাম উপদ্রুত এলাকায় মানবিক সহায়তার আহ্বান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২০, ০৭:৫৩ পিএম

পাহাড়ে হাম উপদ্রুত এলাকায় মানবিক সহায়তার আহ্বান

ফাইল ছবি

দেশে করোনা পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক সময়ে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়ন এবং বান্দরবন জেলার লামা উপজেলার লামা ইউনিয়নে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’ ও ‘কাপেং ফাউন্ডেশন’। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশনের পক্ষে হিরন মিত্র চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ আহবান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনা সংকটে পাহাড়ের উক্ত মানবিক সংকটটি যেন হারিয়ে না যায়। করোনার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে হামের এ প্রাদুর্ভাবটি প্রশাসনের সুদৃষ্টি পাক। পাশাপাশি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে উপদ্রুত এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, পাহাড়ে হাম উপদ্রুত এলাকায় জরুরী মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা, আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ঘটনার সুষ্টু তদন্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাজেকে মোট ৬টি গ্রামের প্রায় ৩০০ জন হামে আক্রান্ত হয় এবং তাদের অধিকাংশই শিশু। তুইছুই মৌজার অরুণপাড়া সবচাইতে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ২০ দিনের ব্যবধানে ৮ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত অন্যান্য গ্রামগুলো হচ্ছে- লংথিয়ান পাড়া, কমলাপুর চাকমা পাড়া, নিউথাং/নতুনপাড়া, হাইচ্যাপাড়া ইত্যাদি। এ ছাড়া ১০০ জন শিশু যাদের বয়স ৭-৮ বছর বয়স তারাই বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছে, তাদের গ্রামে শিশুদের এ যাবত কোন টিকাই দেয়া হয়নি। সরকারের কোন স্বাস্থ্য সেবাও সেখানে পৌঁছায় নি। কোন স্বাস্থ্যকর্মী তাদের এলাকায় পাও দেয়নি।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, করোনা মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের তৎপরতা ও যেভাবে সকলের মনোযোগ পেয়েছে নিঃসন্দেহে তা ভালো ফলাফল এনে দেবে। কিন্তু করোনার ডামাঢোলে পার্বত্য অঞ্চলে হামের প্রাদুর্ভাব কর্তৃপক্ষের চোখের আড়ালে থাকবে কিনা তাও বিবেচনায় নিতে হবে। সেজন্য হামের প্রাদুর্ভাবকে যথেষ্ট আমলে নিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সুনজর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের আহবান জানিয়েছেন তারা।

সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার লামা ইউনিয়নে দুর্গম এলাকায়ও প্রায় একই সময়ে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ম্রো অধ্যুষিত লাল্যাপাড়ায় ৪ মাসের এক ম্রো শিশু মারা গেছে এবং ৪২ জন আক্রান্ত হয়েছে যাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩৩ জনই শিশু। গত ১৬ মার্চ তাদের মধ্যে ৩১ জন শিশু ও ২ জন প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীকে ট্রাকে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। প্রথম প্রথম স্বাস্থ্যকর্মীরা এটিকে অজ্ঞাত রোগ হিসেবে চালিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, লাল্যাপাড়াসহ বান্দরবনের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি স্বাস্থসেবা পৌঁছায় নি।

বিবৃতিদাতারা বলেন, সাজেকে উপদ্রুত এলাকায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। হামের টিকা ও ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে। কিন্তু কোন কোন রোগী এতোই মুমুর্ষু যে তাদেরকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতায় হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসতে হয়েছে। অন্যদিকে, লামার উপদ্রুত এলাকায় চিকিৎসক দল গিয়েছে কিনা সে তথ্য আমরা পাই নি। সরকারের ঘরে ঘরে টিকাদান কর্মসূচী ও স্বাস্থ্যসেবা জনগণের মাঝে পৌঁছালে এরকম প্রাদুর্ভাব সৃষ্টি হতো না। দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে এতগুলো প্রাণ ঝরে যেতো না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App