প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে দেশবাসীকে হতাশ করেছে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২০, ০৮:৩৮ পিএম
আমলারা ক্ষিপ্ত হয়ে রোজিনাকে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়েছে
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকে দিক নির্দেশনাহীন বলে উল্লেখ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।বিবৃতিতে জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশবাসী প্রত্যাশা করেছিল বিশ্ববাসীর থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে দিক নির্দেশনামূলক ও আশ্বস্থ হওয়ার মতো বিষয় থাকবে কিন্তু তার প্রতিফলন ভাষণে না থাকায় দেশবাসী হতাশ হয়েছে। প্রধামন্ত্রীর ভাষণেও একই গালভরা কথা ‘আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে’ যা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে পারেনি বরং হতাশ করেছে।
আজ বৃহষ্পতিবার (২৬মার্চ ) বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ ও কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী, কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক সংবাদপত্রে দেয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীতে বিভিন্ন দেশ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। যারা এর ভয়াবহতা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অবহেলা করেছে তাদেরকে খেসারত দিতে হচ্ছে। উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র, ইতালী, স্পেন তার উদাহরণ। অন্যদিকে চীন, কিউবা, দক্ষিণ করোয়িা, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, জাপান আগাম সতর্কতামূলক যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ায় তারা করোনা মোকাবেলায় সাফল্য দেখাতে পারছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের দেশের সরকারও শুরুতে করোনা সংক্রমণের ঝুকিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। শুধু কথার বাগাড়ম্বর করে বলে আসছে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু দিন যতো যাচ্ছে, করোনা সংক্রমণ যতোই বাড়ছে সরকারের ঝাড়িঝুড়ি ততোই উন্মোচিত হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের দেশে জনসংখ্যার ১০শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি ১শতাংশ লোকও আক্রান্ত হয় তাহলেও তো এই অবস্থায় সামাল দেয়া মোটেই সম্ভব না। তাছাড়া বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলামের মতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ১০-২০শতাংশ আইসিইউতে রাখার প্রয়োজন হয়। আমাদের দেশের প্রস্তুতিতে এটা অসম্ভব। এ থেকে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ও বাজেট বরাদ্দের বেহাল দশা ফুটে ওঠে। বিবৃতিতে বলা হয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে করোনা চিকিৎসায় করণীয় কিভাবে বাস্তবায়ন করবে তার কিছুই ফুটে ওঠেনি এবং প্রস্তুতির জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তারও কোন রোডম্যাপ ঘোষনা করেনি।
করোনা মহামারীকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে যেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবেলা করা দরকার সেখানে প্রধানমন্ত্রী বিএমএ এবং স্বাচীপকে ৫০০ চিকিৎসক প্রস্তুত রাখতে বলেছেন যা সর্বদলীয় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা এবং দলীয়করণের নামান্তর। বিবৃতিতে বাম জোট করোনাকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সর্বদলীয় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে এ মহামারী মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধামন্ত্রী তাঁর ভাষণে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন কিন্তু দেশের ৬ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমশক্তির মধ্যে বস্তিবাসী, হকার, রিকশা, ইজিবাইক, পরিবহন শ্রমিকসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমজীবীদের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে নেই। বস্তিবাসী, হকার, রিকশা চালকসহ সকল শ্রমজীবীদের আগামী ৬ মাসের খাবার ও নগদ অর্থ সহায়তার জন্য সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে এবং কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট কেটে এখাতে বরাদ্দ করার দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, একদিকে মানুষের জীবিকা বন্ধ, অন্যদিকে বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীনভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কঠোর ভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যবৃদ্ধি রোধে পদক্ষেপ নেয়ারও দাবি জানানো হয়। বাম জোটের নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে দিনাজপুরের বিরলে আওয়ামী লীগ নেতার জুট মিলে বেতন না দিয়ে বন্ধ ঘোষণা এবং বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিবর্ষণে ১ জনের মৃত্যু ও ১৮ জন আহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে হতাহতের জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সাথে নিহত-আহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানান।