করোনা প্রতিরোধ শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২০, ০৯:২১ পিএম
জনস্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকার যেমন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে ঠিক তেমনি জনগণও সরকারের কাছে দায়বদ্ধ। করোনা ভাইরাস যেহেতু জনগণের স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট সেহেতু সরকার ইচ্ছা করলেই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এটিকে ধ্বংস করতে পারবে না। তবে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত অবশ্যই নিতে হবে। সব কিছুতেই সঠিক সিদ্ধান্ত বা সতর্কতা নেয়া জরুরি। সিদ্ধান্ত গ্রহণে গাফিলতি বা জ্ঞানের অভাব বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটু অসতর্কতা বড় বিপদ ডেকে আনে। সারাবিশ্বে যেভাবে করোনা সংক্রমিত হচ্ছে তাতে এই অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা যুক্তিসঙ্গত হয়েছে বলে আমি মনে করি। সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এছাড়া সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গুজব রোধে তাৎক্ষণিক যে ব্যবস্থা নিচ্ছে তা আমি মনে করি প্রশংসিত হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। করোনা ছড়ানোর পর থেকেই চীনা পণ্য অনেক দেশে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়েছে। ফলে করোনার প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে। দাম বেড়েছে অনেক পণ্যের। করোনা একটি রোগ। এটির প্রভাব হাসপাতালে বেশি পড়ার কথা। কিন্তু প্রতিদিনই সংবাদ পড়েছিলাম করোনা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনশনও চলছিল। কেউ কি ভেবেছি এটা এতটা প্রভাব ফেলবে শিক্ষার ওপর? অথচ করোনা শিক্ষার ওপর ব্যাপক একটি প্রভাব ফেলেছে। তাই বলা যায় প্রকৃতির অনেক কিছুই কিন্তু একে অপরের অপর নির্ভরশীল। ধরুন আপনি আপনার প্রতিবেশীর সঙ্গে শত্রুতা করে বৃক্ষনিধন করলেন। এর প্রভাবে যদি কার্বন ড্রাই-অক্সাইড বেড়ে যায় আর অক্সিজেন কমে যায় তাহলে তা কিন্তু শত্রু -মিত্র উভয়ের ওপরই প্রভাব ফেলবে। কেউ কি ভেবেছি চীনের করোনা সারাবিশ্বে এভাবে ছড়িয়ে পড়বে। অনেকে ফেসবুকে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। সরকারকে জ্ঞান দিচ্ছেন। নিজ সন্তানকে বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। ভালো থাকতে কেউ কি নিজের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখছি? এখন কিন্তু অতি সচেতন হতে চেষ্টা করছি। এই সচেতনতা কি শুধু করোনার কারণে প্রয়োজন? কখনই না। আমরা কিন্তু এখনো গুজবেই কান দিয়ে চলেছি। গুজবের যুগে কোনটা নিউজ আর কোনটা গুজব তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যেমন কয়দিন একটি গুজব শুনছি যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু কারা মারছে, কারা মরছে কেউ কি বলতে পেরেছে? পারেনি। কথা হলো যারা মরেছে তাদের পরিবার কি বসে থাকবে? এখনো কি এমন বোকা কেউ আছে? যা হোক সর্বশেষ ১৬ মার্চ সরকার আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণাকে আমি ইতিবাচকই বলব। কারণ যেহেতু করোনা বিশ্বে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তাই সচেতনতাটা মন্দের কিছু নয়। তবে সবকিছুরই বিপরীত ক্রিয়া কাজ করে, তাই আমার মনে হয় এই ছুটি দেয়া নিয়েও অনেক অতিসচেতন মানুষদের মধ্যে আরেকটি প্রশ্নের জন্ম হবে যে করোনা কি তাহলে বাংলাদেশেও কঠিনভাবে আক্রমণ করবে? সেই জন্যই কি সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিল? তাদের উদ্দেশ্যে বলি গুজব ছড়াবেন না। গুজবে কান দেবেন না। বাংলাদেশে ¯্রষ্টার সহায়তায় এখন পর্যন্ত অন্যান্য দেশের মতো মারা যায়নি। আর আক্রান্তের সংখ্যা বেশিসংখ্যক নয়। যারা আক্রান্ত হয়েছে তারা বেশিরভাগই প্রবাসী। তাই করোনা নিয়ে বাংলাদেশে বিচলিত হওয়ার কিছু ঘটেনি। কিন্তু কথায় বলে সাবধান হতে দোষ নেই। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য বাংলাদেশে করোনায় কেউ মারা গেলে তা বেশি সংক্রমিত হতে পারবে না। আতঙ্কিত না হওয়াটাই উত্তম। পাশাপাশি যে করণীয় বা সতর্কতাগুলো আছে সেগুলো সবসময় অবলম্বন করা উচিত। কারো শোনা কথায় কান না দিয়ে বাস্তবিকতায় চলা উচিত। করোনা প্রতিরোধ করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। সবার জন্য সমন্বিত দায়িত্ব করোনাকে প্রতিরোধ করা। আসুন সবাই মিলে সচেতনতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে করোনামুক্ত করি। করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করি।
সাংবাদিক ও লেখক। [email protected]