×

রাজধানী

চলে গেলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২০, ০৩:১৯ পিএম

চলে গেলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর।

বহুমাত্রিক লেখক বরেণ্যে শিক্ষাবিদ, গবেষক, কবি, কথাসাহিত্যিক ও চিত্রসমালোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর আর নেই। সোমবার (২৩ মার্চ) বেলা ১টার দিকে গুলশানের বাসায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। খবরটি ভোরের কাগজকে নিশ্চিত করেন এই কীর্তিমানের ভাতিজা ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেন, বার্ধক্যজনিত নানা রোগে দীর্ঘ সাত মাস ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন বিশিষ্ট এই অধ্যাপক। তাকে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার গুলবাহার আশেক আলী খান স্কুল ও কলেজ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সন্ধ্যা ৭টায় সমাহিত করা হয়। অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেয়া এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, তার কর্মময় জীবন আমাদের প্রেরণা যুগিয়ে যাবে। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানান। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদও বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। শোক জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য শিরীন আখতার। বর্ষিয়ান ও বাংলা ভাষার সম্পূর্ণ নিজস্ব ধারার কবি, বহুমাত্রিক লেখক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের কাছের বন্ধু জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্মৃতিচারণ করেন ভোরের কাগজকে বলেন, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর আমার দীর্ঘকালের বন্ধু ছিলেন। আমরা একসঙ্গে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সংগঠন করেছি, লেখালেখি করেছি। বন্ধুর মৃত্যুসংবাদে স্বাভাবিকভাবেই আমি গভীর শোকগ্রস্ত। আমি যথাযথভাবে তাকে স্মরণ করছি। ১৯৩৬ সালের ৯ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির চাঁদপুর জেলার কচুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্মান অর্জন করেন। পরে ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে `Differentiation, Polarisation and Confrontation in Rural Bangladesh' বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে এই বিভাগের অধ্যাপক হন। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের দায়িত্বও পালন করেছেন। সাহিত্যের নানা শাখায় বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর অবদান রেখেছেন। লিখেছেন শতাধিক বই। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধের বই; স্বদেশ ও সাহিত্য, মাইকেলের জাগরণ ও অন্যান্য প্রবন্ধ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদ্রোহ সাহিত্যে ও রাজনীতিতে, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল ও শ্রেণীসংগ্রাম, বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদ এবং মৌলবাদ, প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে, শাহাবুদ্দীন, হত্যার রাজনীতি ও বাংলাদেশ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ধর্ম রাষ্ট্র রাজনীতি। গবেষণা: Contemporary Painters : Bangladesh, চিত্রশিল্প : বাংলাদেশ, উপমহাদেশে গ্রামীণ গবেষণা চর্চা ও প্রাসঙ্গিক সমস্যা, বাংলাদেশে ধনতন্ত্রের বিকাশ, Differentiation, Polarisation and Confrontation in rural Bangladesh, বাংলাদেশের লোকশিল্প, Rural Society, Power Structure and Class Practice, শিল্পকলার ইতিহাস, Problematies of Nationalism in Bangladesh, Violence and Consent in a Peasant Society and Other Essays, অপ্রতিরোধ্য রবীন্দ্রনাথ এবং অন্যান্য প্রবন্ধ, আধুনিকতা এবং উত্তর আধুনিকতার অভিজ্ঞতা, Nationalism Fundamentalism and Democracy in Bangladesh. ছোটগল্প; অবিচ্ছিন্ন, মু-হীন মহারাজ, গণতন্ত্রের প্রথম দিন ও অন্যান্য গল্প,বারুদের গন্ধ চার ধারে। উপন্যাস: সর্বনাশ চতুর্দিকে, মহাকাব্য, আমরা যেভাবে বেঁচে আছি। কবিতা; আমাদের মুখ, পুরানো বৃক্ষের ডালপালা, মানুষের বুকের মধ্যে, আসবাবহীন ঘর, তোমার পছন্দের নীল শার্ট পরে, এলুয়ার যেমন ভাবতেন। অনুবাদ; সম্রাট জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী, সংস্কৃতির সমাজতত্ত্ব ও হেমিংওয়ে ফ্রস্ট ফকনার। এ ছাড়া তার সম্পাদিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই রয়েছে। বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ইউনেসকো ও ফ্রান্স সরকারের ফল অব অনার, কলকাতা মুজাফফর আহমদ স্মৃতি পুরস্কারও পেয়েছেন। ছোটগল্পে অবদানের জন্য ১৯৬৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং শিক্ষা ও গবেষণায় অবদানের জন্য ২০০৯ সালে একুশে পদক পান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App