×

সারাদেশ

করোনা প্রতিরোধে কতটা প্রস্তুত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২০, ০৯:১৭ পিএম

করোনা প্রতিরোধে কতটা প্রস্তুত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো
বিশ্বে এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসের সংক্রামনে বিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৪১০ জন। বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে এই ভাইরাসের সংক্রামন। এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ৩ জন। সারাদেশে নেয়া হচ্ছে করোনা প্রতিরোধে নানা ধরনের পদক্ষেপ। তবে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে করোনা প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল। অনেক রোহিঙ্গা এ বিষয়ে পুরোপুরি অবগত নই। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা গাদাগাদি করে অবস্থান করায় এবং এখনো অবাধে চলাফেরা করায় মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয়রা। স্থানীয়দের দাবি কিছুদিনের জন্য হলেও ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের যাতায়ত বন্ধ রেখে লক ডাউন করা সেই সাথে বাইরে অবস্থানরত দেশি বিদেশি এনজিও কর্মীদের ক্যাম্পে অবাধ যাতায়ত বন্ধ রাখাও জরুরী। তবে প্রশাসনের পক্ষে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেছেন। সোমবার (২৩ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জানা গেছে, ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাস সম্মন্ধে জেনেছে রোহিঙ্গারা। তবে এজন্য কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে এ বিষয়ে তারা পুরোপুরি অবগত নই। এরোগ প্রতিরোধে নামাজ-দোয়া পড়ে একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা রাখছেন তারা। দেশীয় লোকজন ও কতিপয় এনজিও কর্মীদের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও কোন রোহিঙ্গাদের মুখে কোন মাস্ক দেখা যায়নি। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝিরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ক্যাম্প ইনচার্জ ও এনজিও প্রতিনিধিদের সাথে সভা করা হয়েছে। এসভায় করোনা ভাইরাস বিষয়ে ইংরেজী, বার্মিজ ভাষায় সতর্কতামুলক লিপলেট বিতরণ, প্রতিটি ব্লকের রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে সচেতনতা বিষয়ক বার্তা পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে। এদিকে ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা তাদের স্বাভাবিক চলাফেরা, আড্ডা এখনো আগের মতো চালিয়ে যাচ্ছে। যখন খুশি রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বের হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক হিসেবে কাজে যোগ দিচ্ছে শতশত রোহিঙ্গা। এ ছাড়া ক্যাম্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি সংস্থার লোকজনও অনায়াসে আগমন প্রস্থান করছে ক্যাম্পে। এছাড়া সাধারন রোহিঙ্গাদের সচেতন করতে মাইকিং করতে দেখা গেছে। তবে এ মাইকিং শুধুমাত্র প্রধান ও অভ্যন্তরিণ সড়কে করা হয়েছে। অনেক সাধারন রোহিঙ্গা এখনো পরিপূর্ণ সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করছেনা। তবে অনেকে ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছেন। করোনা ভাইরাস চিহ্নিত নিশ্চিত করতে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন, মাস্ক ও জীবানু নাশক হ্যান্ড ওয়াশ সরবরাহের দাবী জানিয়েছেন। নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প (নং-২৬) এর হেড মাঝি বজলুর রহমান জানান, সোমবার সকালের দিকে ক্যাম্প ইনচার্জ লিপলেট দিয়েছেন এবং করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে ঘরে ঘরে সচেতনতা সৃষ্টির তাগাদা দেন। ডিপুটি চেয়ারম্যান রশিদা বেগম জানান, করোনা ভাইরাসের নাম শুনার পর থেকে বেশ আতঙ্কে রয়েছি। করোনা প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি জানান, কয়েক লাখ রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা চরম ঝুঁকিতে রয়েছি। কারণ রোহিঙ্গারা এখনো অবাধ চলাফেরা অব্যাহত রেখেছে। সরকার এখনো ক্যাম্পকে লক ডাউন করেনি। খোদা না করুক তাদের মধ্যে কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হয় তাহলে তাদের পাশাপাশি আমরা স্থানীয়রাও বেশ আক্রান্ত হতে পারি। তাই দ্রুত রোহিঙ্গা ক্যাম্প লক ডাউন করার দাবী জানাচ্ছি। এসিএফের বিভাগী পরিচালক মোহাম্মদ মাহাদী জানান, ইতিমধ্যে বিভিন্ন ক্যাম্পের পুষ্টি কেন্দ্রে থার্মো প্লাস দিয়ে করোনা লক্ষনের সনাক্ত করা হচ্ছে। যাদের জ্বর অস্বাভাবিক তাদেরকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে প্রেরনের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্যাম্প ইনচার্জ আবদুল হান্নান জানান, সরকারের নির্দেশনা মতো করোনা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গারা অনেক সচেতন হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে চোরাই পথে মিয়ানমারে আসা যাওয়া করতে না পারে সে জন্য বিজিবি ও কোস্টগার্ড কে টহল জোরদার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওদের কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করে যাবে। আপাতত বাকি কাজগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে বিকল্প হিসেবে কেরুনতলী প্রত্যাবাসন কেন্দ্র ব্যবহার করা হবে। শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশন সুত্রে জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪৭টি করোনাভাইরাস আইসোলেশন বেড রেডি করা আছে। প্রয়োজন হলে আরো ১৫০ শয্যার বেড প্রাথমিকভাবে প্রাক প্রস্তুতি করে রাখা হয়েছে। তবে ক্যাম্পে এখনো পর্যন্ত কোনো করোনাভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। এরপরও রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র গুলো পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে কাজ করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App