×

মুক্তচিন্তা

সুপেয় পানির সংকট এবং সমাধান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২০, ০৯:২৭ পিএম

দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর বড় কারণ দূষিত পানি। আর্সেনিকযুক্ত পানি পানের হার কমলেও বিশ্বের সর্বাধিক আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত জনসংখ্যার তকমা এখনো বাংলাদেশের। এ পরিস্থিতিতে গতকাল রবিবার দেশে পালিত হয়েছে বিশ্ব পানি দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন’। পানির প্রাপ্যতার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের যোগসূত্রই আলোচিত হচ্ছে এ বছর। নদীমাতৃক ও প্রবল বৃষ্টির দেশ হওয়ার পরও বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার দুর্ভাগ্যজনকই বটে। পানি জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য হওয়ায় প্রকৃতি তা ফ্রি করে দিয়েছে, কিন্তু দূষণের পেছনের হাত তো মানুষেরই। ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৯৮ ভাগ মানুষের আওতায় কোনো না কোনোভাবে পানির উৎস রয়েছে। তবে সুপেয় পানি পাচ্ছে মাত্র ৫৬ শতাংশ। এখনো ১৩ ভাগ পানিতে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়া পাইপলাইন, টিউবওয়েল এবং পুকুরের পানিতে কোলাই ব্যাকটেরিয়ার মতো ক্ষতিকর অণুজীবের অস্তিত্ব থাকার কথাও বলা হয় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে। নানারকম বর্জ্যরে কারণেই মূলত পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। জানা যায়, রাজধানীর প্রায় দেড় কোটি মানুষের জন্য প্রতিদিন ২৩০ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও এর বিপরীতে ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ কোটি লিটারের মতো। এর ৭৮ শতাংশ তোলা হয় গভীর নলক‚প দিয়ে, বাকিটা বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পাঁচটি শোধনাগারে শোধনের মাধ্যমে। যা শোধনের পরও দূষিত ও মানহীনই থাকছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬২ ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানে বিষাক্ত হয়ে পড়া বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পানি শোধন করতে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। এ দুটি নদীর পানিতে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান এতই বেশি যে, ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য শোধনের সময় মেশানো হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ক্লোরিন, এলাম (চুন) ও লাইন (ফিটকিরি)। তারপরও দুর্গন্ধ থাকছে পানিতে। অনেক সময় শোধিত পানি থেকে বের হয় ক্লোরিনের গন্ধ। যদিও ওয়াসার দাবি, শোধিত পানিতে সমস্যা নেই। এদিকে বিভিন্ন স্থানের পাইপলাইনে রয়েছে অসংখ্য ফুটো বা লিকেজ। এসব ফুটো দিয়ে বর্জ্য ঢুকছে পাইপলাইনের মধ্যে। একইভাবে বর্জ্য যুক্ত হচ্ছে স্যুয়ারেজ লাইনেও। এ পানি অতিমাত্রায় ফুটানোর পরও পানযোগ্য করতে পারছেন না নগরবাসী। ওই পানি ব্যবহারে চোখ জ্বলা, গা চুলকানোসহ নানা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। কলেরা হাসপাতালেও বেড়ে যায় রোগীদের ভিড়। আমরা মনে করি, পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে কোনো ধরনের অবহেলার অবকাশ নেই। রাজধানীতে পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পানির বিকল্প উৎস যেমন সন্ধান ও ব্যবহার করতে হবে তেমনি ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রম আরো বাড়াতে ও গতিশীল করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App