×

জাতীয়

সমন্বয়ের অভাবে জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি

Icon

nakib

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২০, ০৯:৩৮ এএম

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যু ধীরে ধীরে হলেও বাড়ছে। সরকারের ভাষ্য অনুয়ায়ী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় কাজ করছে প্রবাসী কল্যাণ, শ্রম, বিমান ও পর্যটন, সমাজকল্যাণ, শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ, নৌ, রেল মন্ত্রণালয়সহ ১৮টি মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে এসব মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট। ফলে পরিস্থিতি জটিল হলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ দুই মাসেরও বেশি সময় পেয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি খুব বেশি নয়। বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থাসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই ভাইরাস নিয়ে সচেতন ও সতর্ক হবার পরামর্শ দিলেও সেই বার্তা কানে তোলেনি কেউ। বিদেশফেরতদের মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। একথা জানার পরও বাংলাদেশে বিদেশফেরত নাগরিকদের আসা আটকাতে কোনো উদ্যোগই দেখা যায়নি। জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ বারবার দেয়া হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে গড়িমসি। নির্বাচনে জনমানুষের উপস্থিতি ঝুঁকি বাড়াবে- স্বাস্থ্য বিভাগের এমন বার্তা যে নির্বাচন কমিশনের কর্ণকুহরে পৌঁছায়নি, নির্বাচন সম্পন্ন করেই তার প্রমাণ দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া বিদেশফেরতদের নজরদারিতে রাখতে এবং হোম কোয়ারেন্টাইন পালনে বাধ্য করতেও আমরা অসফল হয়েছি। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনও আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। চিকিৎসকদের কাছে এখনো পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পৌঁছায়নি। তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়নি। এতে করে তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। তাই আমরা দেখি আতঙ্কিত হয়ে চিকিৎসকরা রোগী ছেড়ে পালাচ্ছেন। ঘটা করে তিন থেকে সাড়ে তিনশ অতিথির উপস্থিতিতে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিভিল সার্জন শাহ আলম। করোনা থেকে বাঁচার জন্য জমায়েত করে প্রশাসনের চোখের সামনেই করা হচ্ছে মোনাজাত। এসব পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায় আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাসখানেক আগেই সরকার একটি জাতীয় পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। তা বাস্তবায়নের জন্য ১১টি কমিটি গঠন করার কথা ছিল। কিন্তু চারটির বেশি কমিটি গঠিত হয়নি। ফলে জাতীয় পরিকল্পনা নথি থেকে কয়েকটি কমিটি বাদ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, এখন আমরা ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে আছি। সব ক্ষেত্রে চরম অপ্রস্তুতি ও ঘাটতি। স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যেও এই ঘাটতি রয়েছে। আমরা সময় পেয়েছিলাম। কিন্তু সংগঠিত হবার ধারে কাছেও নেই। বিদেশফেরত যাত্রীদের স্ক্রিনিং, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইনে ব্যর্থ হয়েছি। জন সমাগম নিষিদ্ধ করার পরও অহরহই তা হতে দেখছি। যে ধরনের অব্যবস্থাপনা আমরা দেখেছি তা যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাবে। পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা এখনই বলা যাবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে আমাদের উদ্বেগ ও পরামর্শ জানিয়েছি। কিন্তু তা খুব একটা গ্রাহ্য হয়নি। করোনা পরীক্ষার সুযোগ ও পরিসর বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, ধীরে হলেও দেশে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে আর দেরি করা ঠিক হবে না। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। প্রয়োজনে অন্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিতে হবে। অথবা সরকারি ব্যবস্থাপনা বাড়িয়ে আক্রান্তদের দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে। তা না হলে সমস্যা ও ঝুঁকি আরো বাড়বে। আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা যদি হোম কোয়ারেন্টাইন সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে সংক্রমণ চলতেই থাকবে। এর জন্য কার্যকরি কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনের দিকে আমাদের বেশি জোর দিতে হবে। এটি সম্ভব হলে সংক্রমণের গতি কমানো যাবে। জনস্বাস্থ্যবিদ ও প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন ভোরের কাগজকে বলেন, বিদেশফেরত যাত্রীদের, ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি, ওই এলাকায় যারা বিশেষ করে জ্বর-সর্দি-কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা উচিত। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আমরা যত বেশি পরীক্ষা করতে পারব তত বেশি রোগী খুঁজে পাব। যা করোনা যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে সহায়তা করবে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত যারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন তারা সবাই পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই। আমরা প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছি। খুব শিগগিরই দেশের বিভিন্ন জায়গায় নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে পরীক্ষার ক্ষেত্রে মান সুরক্ষার বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। একজন আক্রান্ত শনাক্ত করা না গেলে যতটা সমস্যা, তার চেয়ে বড় সমস্যা ভুল ফলাফল। যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App