×

পুরনো খবর

মিরপুরের লকডাউন বাসা থেকে বলছি...

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২০, ০৭:২০ পিএম

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মিরপুরের এক বাসিন্দা শনিবার (২১ মার্চ ) মারা গেছেন। এরপর থেকেই যে বাসাটিতে তিনি ছিলেন সেই ভবনটি লকডাউন করেছে সরকার। এতে মৃত ব্যক্তির পরিবারসহ বিপাকে পড়েছে ভবনে বসবাসরত সব পরিবার। সেখানকার কিছু সমস্যা তুলে ধরে মিরপুরের লকডাউন বাসার নাজমুস সাকিব খান নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেয়া হলো- ‘ব্যাপারটা নিয়ে সারাদিন অনেক জল ঘোলা হলো। আমি–বাবা-মা মিলে শ’ খানেক ফোন রিসিভ করে বিরক্ত। ফেসবুকে মানুষের মনগড়া স্ট্যাটাস দেখতে দেখতে ক্লান্ত। শেষ পর্যন্ত তাই ভাবলাম সরকার আর কিছু বিবেচনাবোধহীন মানুষদের নিয়ে কিছু কথা লিখি। গতকাল (শনিবার) রাত ১১.৪৫ মিনিট থেকে পুলিশ আমাদের বাসা লকডাউন করে দিয়েছে। কারণ হলো আমাদের বাসার সাততলার বাসিন্দা প্রফেসর মুহুম্মদ ইসলাম গনি (সাবেক অধ্যক্ষ, সরকারি মাদ্রাসা–ই–আলিয়া, ঢাকা) গত বৃহস্পতিবার থেকে ডেলটা মেডিকেলে কভিড সাস্পেক্ট হিসেবে আইসিউতে ভর্তি ছিলেন। কাল রাতে IEDCR থেকে টেস্টের ফল পাবার পর বোঝা গেল তিনি COVID-19-এ আক্রান্ত। এরপরেই পুলিশ এসে বাসা লকডাউন করে দিলো। ভাবলাম সকালে হয়তো কোনো পদক্ষেপ নিবে সরকার। সকাল হলো কিন্তু কোনো ভালো খবর তো আসেইনি বরং গণী আঙ্কেলের মৃত্যু সংবাদ আসলো। তিনি ২১.০৩.২০২০ রাত তিনটায় তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরপর থেকেই বাসার বাইরে পঙ্গপালের মতো উৎসুক জনতার ভিড় শুরু হয়। সময়, মোহনা, ডিবিসি, আরটিভিও ছিল কিন্তু কোনো কারণবশত হয়তো তাদের নিউজ আপনারা টিভিতে দেখতে পারবেন না। ভাইরাসটি গণী সাহেবের মাঝে কী করে আসলো সেটা এখনো খোলাসা হয়নি। আমার জানা মতে, তার বাসায় দেশের বাইরে থেকে কোনো অতিথিও আসেননি। সম্ভবত তিনি কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শিকার। এই শিকার আমিও হতে পারি, আমার ষাটোর্ধ্ব বাবা-মাও হতে পারেন। আপনিও পারেন। সুতরাং প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ উত্তম। এটা মেনে চলুন। বিকেলেই অফিসে একটা মেইল দিয়েছি, ‘রিকোয়েস্ট ফর ওয়ার্কিং ফ্রম হোম’ -এ বিস্তারিত লিখে। দেখা যাক কী বলে। আমাদের বিন্ডিংয়ে যত বুয়া আছে কাউকেই পুলিশ ভেতরে ঢুকতে দেইনি। ভালো উদ্যোগ। বিকেলে আমাদের বাসায় যে কাজ করেন সে ফোন করে বলেছে সে ও তার স্বামী গ্রামে চলে যাচ্ছে। যেহেতু তার কাজ বন্ধ আর তার স্বামী ঢাকায় মানুষ কমে যাবার কারণে রিকশা চালিয়ে তেমন আয় করতে পারছে না। এই বুয়া গনি সাহেবের বাসায় কাজ করতো। এখন প্রশ্ন হলো- সে যদি কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শিকার হয়ে গ্রামে গিয়ে আরো দশজনকে ইফেক্ট করে তাহলে? IEDCR থেকে সময়মতো টেস্টের ফলাফল না পাবার কারণে ঐ সময়ে যেসব ডাক্তার– নার্স–কাছের মানুষজন গনি সাহেবের পাশে ছিলেন সবাই তো এখন রিস্কের মাঝে পড়ে গেলেন। তারা সবাই তো এখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আওতায় পড়েন। মাত্র কয়েকটা কেস হাল্ডেল কড়তে সরকারের যা অবস্থা, আল্লাহ্ না করুক এটা যদি আরো ছড়িয়ে যায় তাহলে যে কী হবে তা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। আমাদের ৩২টা পরিবারকে কোয়ারেন্টাইন করেই সরকার তার দায়িত্ব শেষ ভাবছে কিনা বুঝতে পারছি না। ভেবেছিলাম ৯ তলা বিল্ডিং হয়তো সরকার ডিসইনফেক্ট করার জন্য লোক পাঠাবে– কিন্তু পাঠায়নি (আমরা আমাদের সাধ্যমতো ক্লিন করেছি)। সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলাম আমাদের রক্তের স্যাম্পল নিতে লোক আসবে– কিন্তু আসেনি। বিল্ডিং তালা মেরেই তাদের দায়িত্ব শেষ। মরলে আমরা মরবো, কার কী? -নাজমুস সাকিব খান, নর্থ টোলারবাগ, মিরপুর, ঢাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App