×

জাতীয়

বাজার নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে অভিযান অব্যাহত

Icon

nakib

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২০, ০৯:৫৫ এএম

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।  শনিবার (২১ মার্চ)দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়। এছাড়া রাজশাহী ও রংপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তোপের মুখে পড়ে। কিছু ব্যবসায়ী আজ রবিবার থেকে পাইকারি বাজার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। নিচে এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- রাজশাহী : ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার প্রতিবাদে রাজশাহীর কাঁচাবাজার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেছেন। দুপুরে পেঁয়াজের দাম বেশি নেয়া রাজশাহীর সাহেববাজার মাস্টারপাড়া কাঁচা পণ্যের পাইকারি বাজারে এক ব্যবসায়ীর ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল করে বাজার বন্ধের ঘোষণা দেন। কাঁচাবাজার পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফাইজুল ইসলাম বলেন, আমরা যে দামে পণ্য কিনছি তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন প্রশাসনের লোকজন। মালামাল কেনার রসিদ দেখিয়েও লাভ হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লোকসানে পড়ছেন। জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন তাদের কোনো জরিমানা করা হচ্ছে না। আমরা কেবল অসাধু ব্যবসায়ীদের আইন মেনে অর্থদণ্ড দিচ্ছি। এতে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আমরা বাজারে অবস্থান করে মনিটরিং কার্যক্রম চালিয়ে যাব। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে লিটন হাজি নামে একজনের আড়তে সেই পেঁয়াজ ৪৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছিল। এ কারণে জরিমানা করা হয়েছে। রংপুর : জেলায় নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযান পরিচালনায় নেমে ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আদালত পরিচালনাকারীদের অবরুদ্ধ করে রাখাসহ বিক্ষোভ মিছিল করে দোকানপাট বন্ধ করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর জেলা পরিষদ মিনি মার্কেট ও নবাবগঞ্জ বাজারে অভিযানকালে এ ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, বাজারে ডাল-চিনিসহ বিভিন্ন দ্রব্যের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার অভিযোগে ভ্র্যম্যমাণ আদালত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা অস্বীকার করে আদালত পরিচালনাকারীদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভ্রাম্যমাণ আদালত অস্বাভাবিকভাবে জরিমানা করেছে। এর প্রতিবাদে নবাবগঞ্জ বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাহাত বিন কুতুব বলেন, অভিযানের সময় বেশ কিছু দোকানে মূল্য তালিকা না থাকাসহ অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়। এ কারণে মুগ্ধ ট্রেডার্স, মুন্না ডালঘর ও টুপি ডালঘরকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। করোনা ভাইরাসের অজুহাতে চাল, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। অভিযানের সময় রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সৈয়দ এনামুল কবীরসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই জরিমানা বেআইনি। আদালত অন্যায়ভাবে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে জরিমানা আদায় করছে। এর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। সাতক্ষীরা : জিনিসপত্র উচ্চমূল্যে বিক্রি করে বাজার অস্থিতিশীল করা, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ও পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করার অভিযোগে সাতক্ষীরায় ভ্রাম্যমাণ আদালত নয় ব্যবসায়ীকে এক লাখ ৭৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। দুপুরে শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান জানান, কাঁচামাল পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স রনি ভাণ্ডারের মালিক আব্দুল গফফরকে ভুয়া ভাউচার বানিয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগে ৫০ হাজার টাকা ও খুচরা কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইশার আলীকে বেশি দামে সবজি বিক্রির অভিযোগে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া সদর উপজেলা ঝাউডাঙ্গা বাজারের দুই কাঁচামাল ব্যবসায়ীকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এদিকে তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা ও ত্রিশমাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজহার আলী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ছয় ব্যবসায়ীকে ৫৪ হাজার টাকা জরিমানা করেন। বরিশাল : মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন বাজারে ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান জানান, তিনটি দোকানে মূল্য তালিকা হালনাগাদ না থাকায় দুই দোকানির কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ইতোমধ্যে পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমতে শুরু করেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম জানান, নগরীর সদর রোডে শাহিন কমপ্লেক্সে সার্জিক্যাল স্টোরে অভিযান চালিয়ে সেখানে মাস্কের মূল্য বেশি রাখায় মেডিসান সার্জিক্যাল এন্ড সাইন্টিফিক দোকানের মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যশোর : বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি ও মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় যশোরের পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ২১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দুপুরে শহরের চৌরাস্তা, বড় বাজার, এইচএমএম রোড এলাকায় বাজার তদারকি অভিযান পরিচালনাকালে এ জরিমানা করা হয়। অভিযানটি পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব। তিনি জানান, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা ও পেঁয়াজের ক্রয় রসিদের সঙ্গে বিক্রির তথ্য যাচাই করে গরমিল পাওয়ায় সুমা এন্টারপ্রাইজকে আট হাজার টাকা, সুমন সাহা স্টোরকে দুই হাজার টাকা, মেসার্স আব্দুল গণি স্টোরকে তিন হাজার টাকা, হালিম স্টোরকে পাঁচ হাজার টাকা ও জামাল স্টোরকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাঁচ প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ২১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) যশোরের সদস্য আব্দুর রকিব সরদার ও কোতোয়ালি থানা ও সদর পুলিশ ফাঁড়ির একটি টিম। মুন্সীগঞ্জ : জেলা সদরের শহর বাজার ও মুন্সীরহাটে অভিযান চালিয়ে চার দোকানিকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুপুরে পৃথক এ অভিযান পরিচালনা করেন মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. সামিউল মাসুদ। তিনি জানান, অভিযানে মুন্সীগঞ্জ শহর বাজারের হারুন স্টোরকে ৩০ হাজার, সোয়াদ স্টোরকে দুই হাজার এবং মুন্সীরহাটের করিম স্টোরকে ২০ হাজার এবং ওহিদ স্টোরকে তিন হাজারসহ মোট ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গোপালগঞ্জ : জেলার কোটালীপাড়ায় অভিযান চালিয়ে আট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকালে উপজেলার ঘাঘর বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান এ জরিমানা করেন। তিনি জানান, করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি করছিলেন- এমন অভিযোগে সকালে ওই বাজারে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে মেসার্স লোকনাথ ট্রেডার্স, মেসার্স অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার, মেসার্স মা কালী ভাণ্ডার, মেসার্স মা বাণিজ্য ভাণ্ডার, জিম ট্রেডার্সকে ১০ হাজার করে ৫০ হাজার এবং কোটালীপাড়া এন্টারপ্রাইজকে পাঁচ হাজার, আলামিন স্টোরকে আট হাজার ও সাখাওয়াত স্টোরকে আট হাজার টাকাসহ মোট ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মাদারীপুর : উপজেলা প্রশাসন মনিটরিং করছে জেলার শিবচর উপজেলার বিভিন্ন বাজার। সকাল থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রশাসনের টিম মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার ঘুরে দেখে। এ সময় পৌরসভার শিবরায়ের কান্দি মোড় এলাকায় নিত্যপণ্য বাদে অন্য দোকান খোলা রাখার দায়ে ঠাণ্ডু খান, শহিদুল ও রাজ্জাক হাওলাদার নামে তিন দোকানিকে পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : দিনব্যাপী নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং করছে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। তার ধারাবাহিকতায় সকাল ৮টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করে ১২ ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড ও এক ব্যবসায়ীকে ১০ দিনের জেল দেয়া হয়। কালীগঞ্জ বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা পারভীন তন্নি। চালের দাম বেশি রাখার অপরাধে সাহিদ স্টোরকে পাঁচ হাজার, মো. মজিবর রহমানকে ১০ হাজার, নুরুল ইসলামকে ১০ হাজার, ভাই ভাই স্টোরকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর ইকুরিয়া বাজারে গিয়ে ভোক্তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিল্লাল স্টোরকে পাঁচ হাজার, মানিক মিয়াকে ২৫ হাজার, আলামীনকে ১৫ হাজার ও আজিজ রাইস এজেন্সিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এদিকে খবর পেয়ে হাসনাবাদ বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে পালিয়ে যান। এ সময় পালানোর সময় মেসার্স হাসনাবাদ রাইস এজেন্সির আমিনুল ইসলামকে আটক এবং চালের দাম বেশি রাখার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া চালের দাম বেশি রাখার অপরাধে রোহিতপুর বাজারে মেসার্স এম এম এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজারকে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান সোহেল। আঁটিবাজার এলাকায় চালের দাম বেশি রাখার অপরাধে মো. আশরাফ ও মো. সোহেল নামে দুই ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী হাকিম অমিত দেবনাথ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App