×

সারাদেশ

নোয়াখালীতে প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন ডাক্তাররা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২০, ১০:৪৪ পিএম

নোয়াখালীতে প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন ডাক্তাররা!
নোয়াখালীতে চিকিৎসক ও চিকিৎসার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হওয়ায় প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন ডাক্তাররা। এদিকে সরকারি হাসপাতালে উপস্থিতি নিশ্চিত করলেও রোগীদের পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে দুপুরের আগেই হাসপাতাল ত্যাগ করেন তারা। এতে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন রোগীরা। অপর দিকে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ৪২৫জন ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। রোববার (২২ মার্চ) বিকালে জেলা শহরের প্রাইম হসপিটাল প্রাইভেট লিঃ, গুডহিল প্রাইভেট হসপিটাল, জননী প্রাইভেট হসপিটাল, জীবন আলো হসপিটাল, গ্রামীণ হসপিটাল, নোয়াখালী প্রাইভেটসহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে হাসপাতালের ভিতরে রোগীরা অপেক্ষা করলেও চেম্বারে নাই ডাক্তার। যে কয়েকজন ডাক্তারের চেম্বার খোলা আছে সেখানে জ্বর, সর্দি, হাঁচি, কাশি রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া চিকিৎসা উপকরণের মূল্য কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, জেলা শহরের প্রত্যেতটি প্রাইভেট চেম্বারের সামনে অপেক্ষামান রোগীরা। ভিতরে ডাক্তার না থাকায় অনেকটা হতাশার দৃষ্টিতে চেম্বারের দিকে তাকিয়ে বসে আসেন তারা। রোগীদের অনেকেই বলছেন, সকালে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ডাক্তার না দেখাতে পেরে প্রাইভেট চেম্বারে এসেছেন তারা। কিন্তু এখানেও ডাক্তার নাই। গত শুক্র ও শনিবার জেলা শহর মাইজদী ও বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে ঢাকা থেকে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিতে না আসায় তাদের শতাধিক চেম্বার বন্ধ রয়েছে। কোথাও কোথাও চেম্বারের গেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য চেম্বার বন্ধ ঘোষিত নোটিশ ঝুলছে। জেলার যেসব চিকিৎসক নিজেদের চেম্বার করছেন সেখানেও নোটিশ ঝুলানো হয়েছে জ্বর, সর্দি, হাঁচি, কাশি রোগী দেখা হবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগী দেখে বিদায় করতে পারলেই যেন চিকিৎসকরা বেঁচে যান। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ও একাধিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, সকালে হাসপাতালে এসে হাজিরা দেওয়ার পরই তড়িগড়ি করে দু-একজন রোগী দেখে হাসপাতাল ছেড়েছেন ডাক্তাররা। এতে হাসপাতালে আগত রোগীরা চিকিৎসা না নিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। এমনটি চলতে থাকলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন রোগীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, চিকিৎসকরাও মানুষ, তাদেরও পরিবার-পরিজন রয়েছেন। চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা দেবেন কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি (পিপিই) সরবরাহ করা হয়নি। তাই চিকিৎসক, নার্সসহ চিকিৎসকদের সহযোগী কর্মচারীরাও এক রকম আতঙ্কিত। যার কারণে অনেক চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে হেকসিসোল ও হ্যান্ড সেনিটাইজারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ীরা ১৩০ টাকার হেকসিসোল ৩০০ টাকায় ও ২০০ টাকার সেফলিন ২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। তাও আবার তিন-চার দিন ধরে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। ৫০ টাকার মাস্ক ২০০ টাকা, ২০০ টাকার মাক্স ৮০০ টাকা, ৪ হাজার ৫০০ টাকার এক্স-রে ফিল্মের বক্স ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাঁচামালের দামও বেড়েছে। জেলার বড় বড় প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতেও জ্বর, সর্দি, হাঁচি, কাশিতে আক্রান্ত এ রকম কোনো রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই সরকারি হাসপাতালের ওপর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খলিল উল্ল্যাহ জানান, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোববার ভর্তি রয়েছে ৬২৩জন রোগী ও আউটডোরে সেবা নিয়েছেন দেড় হাজারের বেশি রোগী। প্রাইভেট হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি ও অউটডোর সেবা বন্ধ করে দেয়ায় সরকারি হাসপাতালের ওপর চাপ পড়েছে। ফলে এখানের চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সিভিল সার্জন ডা. মোমিনুল রহমান জানান, সরকারি হাসপাতালগুলোতে যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হঠাৎ করে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো জ্বর, সর্দি, কাশি রোগী ভর্তি বন্ধ ও আউটডোর সেবা বন্ধ করা অমানবিক। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে সব ধরনের রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে ও প্রয়োজনে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বেগমগঞ্জে এক প্রবাসীর রক্ত পরীক্ষা করে নেগেটিভ পাওয়ায় তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৪২৫ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App