×

প্রবাস

ঝুঁকির মুখে প্রবাসী বাংলাদেশিরা

Icon

nakib

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২০, ০৯:৪৩ এএম

ঝুঁকির মুখে প্রবাসী বাংলাদেশিরা

প্রবাসী বাংলাদেশি

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আবির্ভাবের মাত্র ৩ মাসের মাথায় বিশে^ এ পর্যন্ত মারা গেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে ৩ দেশে মারা গেছেন ৫ জন প্রবাসী বাঙালি। গত শুক্রবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতালির মিলানে মারা গেছেন এক বাংলাদেশি। বৃহস্পতিবার রাতে নিউইয়র্কে মারা গেছেন ২ জন প্রবাসী বাঙালি। এর আগে যুক্তরাজ্যে মৃত্যু হয়েছে আরো ২ বাংলাদেশির। মহামারিরূপে আক্রান্ত দেশগুলোতে প্রবাসী বাঙালির সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঝুঁকির মুখে রয়েছেন তারা। অন্যদিকে আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন প্রবাসীরা। করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে অবরুদ্ধ থাকা একাধিক প্রবাসী বাঙালির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস এখন বাংলাদেশি কমিউনিটিতে রীতিমতো আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। অনেক প্রবাসীর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর লোকমুখে শোনা গেলেও ঠিক কতজন বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন এর সঠিক পরিসংখ্যান কেউ জানেন না। সবাইকে শুধু মৃতের সংখ্যা জানানো হচ্ছে। আর মৃতের পরিবার জানতে পারছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কে মৃত্যুবরণকারী ২ বাংলাদেশি কুইন্সের বাসিন্দা ছিলেন। এস্টোরিয়া এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব একজন গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান। হার্টের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর কুইন্সের একটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। অন্যজন কুইন্সের উডসাইডের বাসিন্দা ছিলেন। পেশায় গ্রিন ক্যাবের চালক ছিলেন। তার বয়স ৫০ বছর। এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা খান শওকত তার মৃত্যুর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৮ দিন রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকার পর গত ১৩ মার্চ যুক্তরাজ্যে ষাটোর্ধ্ব আফরোজ মিয়া নামে এক প্রবাসী বাঙালি মারা যান। এর আগে ২৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে প্রথম প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। এদিকে বিশে^র কোন দেশে কতজন বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, সৌদি আরবে ১২ লাখ, যুক্তরাজ্য ৯ লাখ ৫০ হাজার, মালয়েশিয়া ১০ লাখ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১১ লাখ, কুয়েতে দেড় লাখ, কাতার ২ লাখ, ইতালি ২ লাখ, ওমান ১ লাখ ৩০ হাজার, সিঙ্গাপুর ১ লাখ ৪১ হাজার, বাহরাইন ৪৫ হাজার, অস্ট্রেলিয়া ৩০ হাজার, কানাডা ৪০ হাজার, জাপান ৫০ হাজার, দক্ষিণ কোরিয়া ৩৫ হাজার, গ্রিস ১১ হাজার, ইন্দোনেশিয়া ৮ হাজার, স্পেন ১৭ হাজার, জার্মানি ১৯ হাজার এবং চীনে ২ প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। এছাড়া সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, অষ্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, মেক্সিকো, রোমানিয়া, পর্তুগাল, রাশিয়া, নিউজিল্যাণ্ড, ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি বসবাস করছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনা ভাইরাস মহামারিরূপে ছড়িয়ে পড়া দেশগুলোতেই প্রবাসী বাঙালিদের সংখ্যা বেশি। ঝুঁকির মুখে থাকা প্রবাসী বাঙালিরা একদিকে নিজেদের অবস্থান নিয়ে যেমন শঙ্কায় রয়েছেন, তেমনি চিন্তিত দেশের জন্যও। মৃত্যুপুরী ইতালির আলবা শহরে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঘরে অবরুদ্ধ রয়েছে বাংলাদেশি এক পরিবার। পরিবারের গৃহকর্ত্রী পলি দেবনাথ ভোরের কাগজকে জানান, এক মৃত্যু উপত্যকায় রয়েছি আমরা। জানি না কখন কে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ব। কবে, কীভাবে এই অবরুদ্ধ অবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব কেউ জানে না। একদিকে এখানে মৃত্যু আতঙ্ক, অন্যদিকে সারাক্ষণ মাথায় রয়েছে দেশে থাকা আত্মীয়স্বজনদের অবস্থা। এত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি কোনোদিন। নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি ও নিউইয়র্ক মেইল টুয়েন্টি ফোর ডট কমের সম্পাদক তুহিন সানজিদ ভোরের কাগজকে জানান, বৃহস্পতিবার থেকে নিউইয়র্ক লকডাউন হয়ে গেছে। এখানে ২১ জন বাংলাদেশি প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকারসহ বিভিন্ন সূত্র শুধু আক্রান্ত ও মৃত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা জানাচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃত মানুষের পরিচয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া কঠিন। তবে কমিউনিটি নেতারা বলছেন, সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কাতারের দোহায় ইলেক্টনিক্স পার্টসের ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম মিন্টু ভোরের কাগজকে বলেন, কাতারে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪২৭ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রবাসীরাও রয়েছেন। তবে সঠিক সংখ্যা নেই। লেবার ক্যাম্পগুলো আগেই লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। এখন পুরো দেশই প্রায় লকডাউন। শুধু খাবার ও ওষুধের দোকান খোলা। এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৭ মার্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন এভারেস্ট বিজয়ী বাংলাদেশি ওয়াসফিয়া নাজরীন। গতকাল শনিবার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ কথা জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App