×

পুরনো খবর

বিদেশফেরতদের নিয়ন্ত্রণ করাই মূল চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২০, ১১:৩৯ এএম

বিদেশফেরতদের নিয়ন্ত্রণ করাই মূল চ্যালেঞ্জ

বিদেশ ফেরত বাংলাদেশিদের হাতে সিল মেরে দেয়া হচ্ছে।

স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ মানছেন না বিদেশফেরত নাগরিকরা। নির্দেশ অমান্য করায় ইতোমধ্যে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু নির্দেশ অমান্যকারীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। এই হিসাব অনেকটা অলক্ষ্যেই থেকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন। আক্রান্তদের কয়েকজন বিদেশফেরত। তাদের মাধ্যমেই সংক্রমিত হয়েছেন ওই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা।

এই ভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্তরে অর্থাৎ লোকাল ট্রান্সমিশন পর্যায়ে রয়েছে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হলে তা হবে তৃতীয় স্তর। বিদেশফেরত নাগরিকদের যদি এখনই নজরদারিতে আনা সম্ভব না হয় এবং কমিউনিটিতে ট্রান্সমিশন যদি শুরু হয় তাহলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সরকার একটি জাতীয় নীতিমালা করেছে। সেখানে কার কী দায়িত্ব তা নির্ধারণ করা আছে। এই কাজ যদি ভালোভাবে করা যায়, তাহলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা যদি হোম কোয়ারেন্টাইন সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে সংক্রমণ চলতেই থাকবে। এ জন্য কার্যকরি কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনের দিকে আমাদের বেশি জোর দিতে হবে। এটি সম্ভব হলে সংক্রমণের গতি কমানো যাবে।

স্বাস্থ অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, এখন আমরা ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে আছি। যে ধরনের অব্যবস্থাপনা আমরা দেখেছি তা যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাবে। পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা এখনই বলা যাবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৬৫ পৃষ্ঠার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় করা জাতীয় নীতিমালার অংশ হিসেবে বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। এই কমিটির প্রথম কাজ হচ্ছে, বিদেশ থেকে কারা এসেছে, তারা কোয়ারেন্টাইনের শর্ত ঠিকমতো মেনে চলছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা। এর কর্মপরিধিতে বলা রয়েছে, যদি কেউ শর্ত না মানে, তা

প্রশাসনকে জানাতে হবে। এসব বিষয় সমন্বয় করবেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। স্বাস্থ্য দপ্তর বা সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন বিদেশফেরতদের তালিকা সংরক্ষণ করে কমিটিগুলোকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে তা পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮-এ আক্রান্ত ব্যক্তি বা যাদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে তাদের সাময়িক বিচ্ছিন্নকরণের বিধান রয়েছে। বিগত এক মাসে দেশে আসা প্রবাসীদের চিহ্নিত ও কোয়ারেন্টাইন করার সহজ পদ্ধতির সাত দফা প্রস্তাবনার সুপারিশ করেছে সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স।

সংগঠনের পক্ষ থেকে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে এই প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জনস্বাস্থ্য আইন বিশেষজ্ঞ এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত দেশে আক্রান্তদের সবাই বিদেশ থেকে আসা আত্মীয়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম জানাচ্ছে, বিগত এক মাসে দেশে আসা অনেক প্রবাসীকেই বাড়িতে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই পালিয়ে থাকছেন। তাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইনে রাখা গেলে এ ভাইরাসের প্রকোপ কমবে। কেননা ভারতের কেরালা যোগাযোগ ট্রেসিং ইউনিট ও আক্রান্তের চলাচলের ম্যাপ তৈরির মাধ্যমে এ ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ করেছে।

প্রস্তাবনায় যা আছে : ইমিগ্রেশন পুলিশ এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কাছ থেকে বিগত এক মাসে যারা দেশে প্রবেশ করেছেন তাদের পাসপোর্ট নম্বর, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা। গণমাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সেসব নাগরিক বিগত ৩০ দিনের মধ্যে দেশে প্রবেশ করেছেন তাদের সিভিল সার্জন/উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা/স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যোগাযোগ করতে বলা। যারা সরকারের এ নির্দেশ অমান্য করবে তাদের পাসপোর্ট লক করে দেয়া, ফলে তারা আর দেশের বাইরে যেতে পারবে না।

নির্দেশনা অনুসারে যোগাযোগ করে আগত ব্যক্তিরা তাদের পাসপোর্ট নম্বর, মোবাইল নম্বর, বর্তমান অবস্থান, শারীরিক অবস্থা, কোথায় কোথায় গিয়েছেন এ সংক্রান্ত তথ্য নির্দিষ্ট ফরমেটে দেবেন। এসব তথ্য দেয়ার জন্য গুগল ফরম ব্যবহার এবং স্বল্প শিক্ষিতদের সহযোগিতার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক বা ইউনিয়ন পরিষদে ডেস্ক চালু করা যেতে পারে। এসব তথ্য সংগ্রহ করে সহজেই যোগাযোগ ট্রেসিং ইউনিট ও আক্রান্ত ব্যক্তির চলাচলের ম্যাপ করা সম্ভব হবে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট এলাকা লক করা বা জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সহজে দেয়া যাবে। সিভিল সার্জন/উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা/কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা বিদেশফেরত ব্যক্তিরা যোগাযোগ করলে কী বলবেন, তারা নির্দেশনা দেবেন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এন্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, বিভিন্ন বন্দর দিয়ে যারা দেশে প্রবেশ করছেন তাদের সবাইকে একটি হেলথ কার্ড দেয়া হয়। সেখানে তার পাসপোর্স নম্বর, মোবাইল নম্বর, ঠিকানসহ বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ করতে হয়। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বিদেশফেরত নাগরিকদের তালিকা তৈরি করার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই এই রেজিস্ট্রেশন কাজ সম্পন্ন হলে কোনো এলাকায় কত জন বিদেশি নাগরিক আছেন তা জানা সম্ভব হবে।

নতুন সংক্রমিত তিন : দেশে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন তিনজন। তাদের মধ্যে একজন নারী, দুজন পুরুষ। এদের একজন পুরুষের বয়স ৭০।? তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি আইসিইউতে আছেন। নতুন আক্রান্ত তিনজন আলাদা পরিবারের সদস্য। এদের মধ্যে দুজনের বিদেশফেরত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন। গতকাল শুক্রবার বিকালে আইইডিসিআরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

তিনি জানান, আইসোলেশনে আছেন ৩০ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৪৪ জন। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এক ব্যক্তিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করার প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই ব্যক্তি এখানে অন্তর্ভুক্ত নন। তার নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করা হবে।

ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার পেলেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা : করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ প্রয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে একটি চিঠি দিয়েছেন।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সব সিভিল সার্জন ও সব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে আইনটির প্রয়োগ করতে পারবেন। এর ফলে স্থানীয়ভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সম্ভব হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App