×

জাতীয়

পরিবহন সীমিত, যাত্রীও কম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২০, ১২:২৮ পিএম

পরিবহন সীমিত, যাত্রীও কম

পরিবহন

করোনা সংক্রমণের পর সম্প্রতি প্রবাসীরা এসে যেসব এলাকায় বিপুল সংখ্যায় অবস্থান করছেন, সেসব এলাকা দ্রুত ‘লকডাউন’ করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। ইতোমধ্যে আংশিক লকডাউন হয়ে গেছে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা। বন্ধ হয়ে গেছে রাজশাহী থেকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গে বাস যোগাযোগ। সীমিত হয়ে পড়েছে সারাদেশের পরিবহন সেক্টর। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। পরিস্থিতি ভয়াবহ হলে প্রয়োজনে পরিবহন বন্ধ করবে সরকার- এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দেশে এখনো ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি দাবি করে হোম কোয়ারেন্টাইনের ওপরই জোর দিচ্ছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

দেশে শুক্রবার (২০ মার্চ) পর্যন্ত ২০ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এর মধ্যে মারা গেছেন একজন। ইতোমধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন প্রকাশ্য জনসমাবেশ বাতিল করেছে। করোনা আতঙ্কে বন্ধ হয়েছে পর্যটন স্পটগুলোও। এছাড়া দেশের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি বিমানের অধিকাংশ ফ্লাইটই বাতিল করা হয়েছে।

সরকারপক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছে, যেখানে সংক্রমণ পাওয়া যাবে, প্রয়োজনে সেখানেই ‘লকডাউন’ করা হবে। প্রয়োজনে আন্তঃজেলা যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই লকডাউন করতে হবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে তাদের আটক করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো উদারতা ও দয়া-মায়া দেখানো যাবে না। এছাড়া প্রয়োজনে লকডাউন করতে হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি বাসে যাত্রী চলাচলে সতর্ক করা হচ্ছে। প্রতিটি বাস মালিককে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি বাস জীবাণুমুক্ত করে যাত্রী পরিবহন করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে যাত্রী কমে গেছে। এরপরও যদি প্রয়োজন হয়, আমরা ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে আন্তঃজেলা যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে বাংলাদেশ করোনা ভাইরাস পরাজিত করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কাদের।

পরিস্থিতি ভয়াবহ হলে সংক্রমণ রোধে পরিবহন বন্ধ করবে সরকার- এমন ইঙ্গিত দিয়ে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা প্রতিটি ট্রেন ও স্টেশনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। এই মুহূর্তে কমলাপুর, বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেটসহ বড় বড় রেল স্টেশনে যাত্রী প্রবেশ করার আগে হ্যান্ড মেশিনে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে,

তারপর ট্রেনে উঠতে বলা হচ্ছে। এসব স্টেশনগুলোতে চিকিৎসকসহ রেলওয়ে স্টাফরা সহযোগিতা করছেন। করোনার সংক্রমণ যদি খুবই খারাপ অবস্থায় যায়, তখন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে।

এদিকে যদি কারো জ্বর, সর্দি ও কাশি থাকে তাহলে কোনো ধরনের ট্রান্সপোর্ট (গণপরিবহন) ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, সর্দি-কাশিমুক্ত হলে ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া যাত্রী পরিবহনের আগে বাস, ট্রেন ও স্টিমারকে অবশ্যই পরিবহন জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পরিবহন জীবাণুমুক্তকরণ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। যেসব যাত্রী গণপরিবহন ব্যবহার করবেন তাদের অবশ্যই হাত হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হ্যাক্সাসল দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে গাড়ি বা ট্রেন ও স্টিমারে উঠতে হবে। তবে ইতোমধ্যেই যাত্রী ৭৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। বাংলাদেশ বাস পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসে প্রতিটি বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও টিস্যু পেপার রাখা আছে। যেসব যাত্রী গাড়িতে উঠবে তারা আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করবে। করোনা আতঙ্ক ও সতর্কতার কারণে বাসযাত্রী কমে গেছে বলে জানান তিনি।

এদিকে পরিবহন সেক্টরসহ সারাদেশ ‘লকডাউন’ হলে খাদ্যসংকটসহ নানারকম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন দেশের স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা। পরিবর্তে হোম কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতিকেই গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহেতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার কয়েকটি লেভেল রয়েছে। সারাদেশ শাটডাউন করার মতো লেভেলে এখনো আমরা পড়ি না। এ ক্ষেত্রে নিজেদের সচেতনতার বিকল্প নেই। প্রয়োজন ছাড়া কারোরই বাইরে বের হওয়া উচিত নয়।

এই মুহূর্তে হোম কোয়ারেন্টাইনের বিকল্প নেই মন্তব্য করে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, পরিবহন বন্ধ করে দেয়াসহ সারাদেশ ‘লকডাউন’ হলে আরো নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। অরাজকতা বেড়ে যাবে, খাদ্য সংকট দেখা দেবে। আমি মনে করি, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কয়েকবার ভাবা উচিত। দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিটি যানবাহনকে যাত্রী পরিবহনের আগে জীবাণুমুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App