×

আন্তর্জাতিক

নজিরবিহীন সংকটে বিশ্ব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২০, ১১:২৬ এএম

নজিরবিহীন সংকটে বিশ্ব

আতঙ্ক বিশ্বে

গভীরতর সংকটের দিকে হাঁটছে গোটা বিশ্ব। পরিত্রাণের পথ মিলছে না কোনোদিকে, সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না কোনো দেশ। মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানেই বিশ্বের ১৬০ দেশে আঘাত হেনেছে এই অদৃশ্য ঘাতক। আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে প্রতিদিনই। গতকাল পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ, মারা গেছেন প্রায় সাড়ে ১১ হাজার।

করোনার ধাক্কায় ইতিহাসের ভয়াবহতম মন্দার মুখে রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। করোনার নির্মম ছোবলের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না উন্নত, উন্নয়নশীল কিংবা অনুন্নত কোনো দেশই। সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্তের দরজা বন্ধ রেখেছে প্রায় প্রতিটি দেশ। থমকে গেছে জনজীবন। বন্ধ হয়ে গেছে অগ্রগতি আর উৎপাদনের প্রধান হাতিয়ার- ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা, স্কুল-কলেজ আর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দরজা। এখনো খোলা আছে শুধু চিকিৎসালয় আর হাসপাতালগুলো। মানুষও হুমড়ি খেয়ে ছুটছে সেখানে। কেউ কেউ যাচ্ছে তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে কিনা- সে পরীক্ষা করতে। কেউ কেউ যাচ্ছে রোগ শনাক্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিতে। কিন্তু সেই অর্থে এর কোনো চিকিৎসাও নেই। করোনা পরিবারের এ ভাইরাসটি প্রকৃতিতে ‘নতুন’ হওয়ার কারণে এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ তৈরি করতে পারছে না আমাদের শরীর। পক্ষান্তরে করোনা ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার করতে পারেননি বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। সব মিলিয়ে অনিশ্চিত এই পরিস্থিতির কারণে নিদারুণ আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে গোটা বিশ্ব।

কারো জানা নেই করোনা ভাইরাসে ইতোমধ্যে কে আক্রান্ত হয়েছে, আর কে হয়নি। কার দেহ থেকে কার দেহে ছড়িয়ে পড়ছে এই ঘাতক ভাইরাস। চিকিৎসক আর বিশেষজ্ঞরা শুধু ব্যক্তিগত সচেতনতা আর সতর্কতা বজায় রাখার কথা বলছেন, যাতে অন্তত কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা যায় সংক্রমণ। করোনার হামলায় বিপর্যস্ত এ বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা সামাল দিতে গিয়ে ভেঙে পড়ার মুখে রয়েছে গোটা বিশে^র চিকিৎসা অবকাঠামো। হিমশিম খাচ্ছেন বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক আর চিকিৎসাকর্মীরা। অভূতপূর্ব এ মহাসংকট সামাল দিতে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এক সর্বাত্মক যুদ্ধেই নামতে যাচ্ছে গোটা মানবজাতিকে। বিবিসি, এনডিটিভি, রয়টার্স।

সর্বশেষ চীনে করোনা পরিস্থিতি বিগত সপ্তাহে কিছুটা উন্নতি ঘটলেও দারুণ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইউরোপ। এই মহাদেশে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইতালিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ইতোমধ্যেই ছাড়িয়ে গেছে চীনকে। সেখানে এখন মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৩২ জন। যা করোনার উৎসস্থল চীনের মৃতের সংখ্যার চেয়ে কম, ৩ হাজার ২৫৫ জন। অথচ ইতালিতে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল চীনে প্রথম মৃত্যুর দেড় মাসেরও বেশি সময় পর। সে দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪২৭ জন। অন্যদিকে চীনের হুবেই প্রদেশে গতকালও নতুন কোনো করোনা আক্রান্ত রোগীর খবর মেলেনি। তবে স্পেনে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়েছে। ইতালি, চীন, ইরানের পর করোনায় সর্বাধিক মৃত্যুর তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে আছে এ দেশটি। সেখানে এখন আক্রান্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

করোনা মোকাবিলার কাজে একটানা পরিশ্রমের জেরে ‘ক্লান্ত’ হয়ে পদত্যাগ করেছেন নেদারল্যান্ডসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রুনো ব্রুইনস। পার্লামেন্টে কোভিড-১৯ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়ার পরদিনই দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি। করোনার বিস্তার ঠেকাতে সৌদি আরবের মক্কা-মদিনা বাদে দেশের সব মসজিদের দরজা বন্ধ হয়েছিল আগেই। এবার মক্কার মসজিদে আল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীতেও নামাজ স্থগিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে করোনার বিস্তার ঠেকানোর মরিয়া চেষ্টায় দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছে শ্রীলঙ্কা। সে দেশে স্থগিত হয়ে গেছে আগামী মাসের পার্লামেন্ট নির্বাচন। শ্রীলঙ্কায় তিন দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ৬৫ হওয়ায় গতকাল শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে এ ঘোষণা আসে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া দেশজুড়ে এ কারফিউ বলবত থাকবে আগামী সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত।

কারফিউর মধ্যে কেবল গণপরিবহন ও জরুরি সেবার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের ক্ষেত্রে বিমান টিকেট দেখাতে হবে। এছাড়া আগামী মাসে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট নির্বাচন স্থগিত করে দিয়েছে সে দেশের নির্বাচন কমিশন। যদিও প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ে রাজাপাকসে নির্বাচন পেছানোর পক্ষে ছিলেন না। তিনি ভেবেছিলেন, নির্বাচনে তার দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে; যার সুবাদে তিনি সংবিধান পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। ভারতে করোনারোধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্রের বেশকিছু শহরের সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধভ ঠাকরে এ নির্দেশ দেন বলে জানায় এনডিটিভি।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে এবার আক্রান্ত হয়েছেন সে দেশের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের দুজন সদস্য। এটাই সে দেশে কোনো আইনপ্রণেতার শরীরে কোভিড-১৯ এর প্রথম উপস্থিতি। সেখানে ইতোমধ্যেই মারা গেছেন ১৪০ জনের বেশি। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন আইন জারি করে বলেছেন, এখন থেকে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ পাবেন সে দেশের নাগরিকরা। এছাড়া আগামী জুন মাসে হতে যাওয়া জি-৭ সম্মেলনে নিজের সশরীরে উপস্থিতির কর্মসূচিও বাতিল করে দিয়ে তিনি ভিডিও-মাধ্যমে ওই সম্মেলনে যুক্ত হওয়ার কথা বলেছেন। অন্যদিকে ভ‚মধ্যসাগর তীরবর্তী ধনী দেশ মোনাকোর প্রিন্স আলবার্টের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। নিজেকে আইসোলেশনে নিয়ে নিজের আবাসিক দপ্তর থেকেই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

অন্যদিকে করোনার কারণে ভয়াবহ মন্দার মুখে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এ ব্যাপারে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, আজ এক নজিরবিহীন সংকটের মধ্যে পড়েছে গোটা বিশ্ব। আপনারা একজোট হয়ে জরুরিভিত্তিতে সমন্বিত উদ্যোগ নিন। এখানে সাধারণ কোনো কৌশল কাজে আসবে না। এমন এক মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছি আমরা- যার মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে অতীতের সব রেকর্ড। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকারকেও তিনি স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App