×

সারাদেশ

সিলেটে অবাধে ঘুরছে বিদেশফেরতরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২০, ১১:০৬ এএম

সিলেটের গোলাপগঞ্জের রায়হান (ছদ্মনাম) সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন গত ১৭ মার্চ। নিয়মানুযায়ী এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও তা মানছেন না। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যাচ্ছেন হাট-বাজারেও। গত এক সপ্তাহে তার মতো আরো ২৫ জন প্রবাসীর গোলাপগঞ্জ আসার খবর রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের কাছে। সবার অবস্থা একইরকম।

করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের ১৪ দিন বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও অনেক প্রবাসীই ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ সম্পর্কে অবগত নন। সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত সিলেট জেলাজুড়ে ৫৬৫ জন বিদেশফেরত ব্যক্তির হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা। তবে বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। মধ্যপ্রাচ্যফেরত ৩ প্রবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, হোম কোয়ারেন্টাইন কী সেটাই তারা জানেন না। বিমানবন্দর থেকে তাদের একটি নির্দেশনা দিলেও এ সম্পর্কে তারা খুব একটা অবগত নন। এ কারণেই তারা অবাধে হাট-বাজারে যাচ্ছেন, চলছেন নিজেদের ইচ্ছামতো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘নজরদারি’র কথা বলা হলেও কার্যত তাদের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কোনো ধরনের যোগাযোগই করা হয়নি বলেও জানান তারা।

এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, আমরা করোনা প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেখানেই খবর পাচ্ছি বিদেশফেরত প্রবাসীরা অবাধে চলাফেরা করছে, সেখানেই লোক পাঠানোর চেষ্টা করছি। তবে এখন পর্যন্ত কতজনের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে তার সঠিক হিসাব দিতে পারেননি তিনি।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে ২৫ জন বিদেশফেরত লোকের তালিকা রয়েছে। তারা হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন কিনা- তা এখনো নিশ্চিত নই, তবে খোঁজ নিয়ে তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সিলেটের আরেক প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা বিয়ানীবাজার। গত চারদিনে এখানে বিদেশফেরতের সংখ্যা প্রায় ৬০ জন। এদের সবার হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই মানছেন না এসব নিয়ম। অবাধে ঘুরছেন হাঁট-বাজারে। জনসমাগম এড়িয়ে চলার কথা থাকলেও এসব ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন তারা। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি- ওই ৬০ জন প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টাইনেই আছেন।

এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মাহবুব ভোরের কাগজকে জানান, নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই আমরা নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক প্রবাসী আমাদের নজরদারিতে রয়েছেন। আমরা এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। এরপরও যদি কেউ না মানেন তবে আমরা কঠোর হব। নিয়মানুযায়ী জেল-জরিমানা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরই কাজ শুরু করে দিয়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত তার কাছে ৪ জন প্রবাসীর তথ্য রয়েছে, সবাইকেই হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. দেবপদ রায় জানিয়েছেন, যারা গত কয়েকদিনে বিদেশ থেকে ফিরেছেন তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকেই মাঠে নামবে পাঁচটি টিম।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একজন সন্দেহভাজনও যদি হোম কোয়ারেন্টাইন না মানেন তিনি নিজে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকবেন, তেমনি ঝুঁকিতে ফেলবেন নিজের পরিবার ও আশপাশের লোকদের। তাই এ ব্যাপারে তাদের সতর্ক হওয়াটা জরুরি। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে তালিকা পাঠিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ ব্যাপারে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App