×

মুক্তচিন্তা

আমরা কথা ও কাজে এক হব কবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২০, ০৯:২০ পিএম

দীর্ঘ চর্চার মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উন্নত হয়। কিন্তু প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চায় আমাদের ব্যাপক অনাগ্রহ। আমরা গণতন্ত্রকে একদিনের ভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ করছি বলেই ভোটব্যবস্থাটাও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারছি না। আমরা ভালো কথা বলে খারাপ হওয়ার প্রতিযোগিতা করি। বিতর্ক এড়ানো নয়, বিতর্কে জড়ানোই আমাদের অধিক পছন্দ। আমরা বৃত্ত ভাঙার কথা বলে বৃত্তবন্দি হওয়ার পথে ধাবিত হই। আমরা কথা ও কাজে এক হব কবে?
ডিসেম্বরের শেষ দিন থেকে শুরু, এখনো পৃথিবীজুড়ে এক ভয়াবহ আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে যাত্রা শুরু করে করোনা দাপটের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে ১৭৮টি দেশ ও অঞ্চলে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই লাখের মতো মানুষ। মৃত্যুবরণ করেছেন ১০ হাজারের উপরে। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবা কবে থামবে, এই মরণব্যাধি মানবজাতিকে কোন সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত কত মানুষের প্রাণ সংহার করবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। করোনার কার্যকর প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে এই সুযোগে নানা টোটকা ব্যবস্থার কথা ব্যাপক প্রচার পাচ্ছে। এই ভয়ঙ্কর ব্যাধি নিয়ে গল্পকাহিনী, গুজবও কম ছড়াচ্ছে না। করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি বড় সংকটের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনায় যত মানুষ মারা যাবেন, তার চেয়ে বেশি মানুষ করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক দুর্যোগে প্রাণ হারাতে পারেন বলেও কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন। করোনার কারণে দেশে দেশে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে তাতে এখন বিশ্ব বলতে গেলে প্রায় অবরুদ্ধ। অনেক দেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সীমান্ত বন্ধ করেছে, বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। কারফিউ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। অনেক দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে না গিয়ে ঘরে বসে কাজ করতে হচ্ছে অনেককে। করোনা ভাইরাসের সূচনা চীন থেকে। চীনেই বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে। তবে চীন দ্রুততম সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেও সক্ষম হয়েছে। চীন করোনা মোকাবিলায় আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়েছে। পুরো হুবেই প্রদেশ অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। মাত্র ৬ দিনে ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করেছে। চীন দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা যা পারে অন্যরা তা পারে না। করোনায় এখন পর্যন্ত বেশি বিপর্যস্ত দেশ সম্ভবত ইতালি। ইতালিতে মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। বাংলাদেশও করোনা আক্রান্ত। কয়েকজন করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। সংখ্যা বাড়ছে। একজনের মৃত্যুও হয়েছে। মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কতটুকু প্রস্তুত, স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন আছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে এই রোগ তার দাপট দেখাচ্ছে কিন্তু এই সময়কালে বাংলাদেশ কী কী প্রস্তুতি নিয়েছে তা অনেকের কাছেই স্পষ্ট কিংবা দৃশ্যমান নয়। বিদেশ প্রত্যাগতদের দ্বারা করোনা ছড়াবে, এটা জানা সত্তে¡ও এ ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। রোগ নির্ণয় ও শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে বিদেশ প্রত্যাগতদের একপ্রকার ‘দায়মুক্তি’ দিয়ে কার্যত সারাদেশে বিপদ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ডাক্তার, নার্স এবং মেডিকেল স্টাফদের জন্য যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকার খবরও আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সমাজিক সমাবেশ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেনা তত্ত¡াবধানে দুটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চালু করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা এলাকাকে লকডাউন বা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। যেখানে প্রয়োজন সেখানেই লকডাউন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। একজনের মৃত্যু সংবাদ প্রচারের পর খাদ্যদ্রব্য মজুতের হিড়িক পড়ে গেছে। হুজুকপ্রবণতাও আমাদের দেশে এক ধরনের বাড়তি সংকট তৈরি করতে পারে। শুধু নিজে বাঁচার চেষ্টা না করে সবাইকে নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করাই যে জরুরি, সেটা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। সতর্ক থাকতে হবে, নিরাপদ থাকতে হবে তবে সেটা আরেকজনকে অনিরাপদ করে নয়। আমাদের কাজেকর্মে নানা ফাঁকফোকর থাকে। সরকারি কাজে থাকে সমন্বয়ের অভাব এবং দায়সারা মনোভাব। সংকটের ব্যাপকতা ও গভীরতা বিবেচনা করে কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে। করোনার কারণে আমাদের সামনে কী কী বিপদ আসতে পারে তা নিরূপণ করে মোকাবিলার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দিতে পারেন। তিনি জাতিকে আশ্বস্ত করবেন যে, তার সরকার মানুষের সঙ্গে আছে কথায় নয়, কাজে। করোনার কারণে খাদ্য ঘাটতি হবে না, যারা নানা কারণে কর্মহীন কিংবা চাকরিচ্যুত হবেন তাদের জন্য সরকার কী করবে, তা প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে উল্লেখ করবেন। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষেরই বা কী হবে? পোশাক শিল্প, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার কীভাবে তাদের সহায়তা দেবে তাও জানাতে হবে। যারা এই সরকারের আমলে নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন, বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা যেতে পারে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা সরকারের পাশে দাঁড়াবে আর যাদের সামর্থ্য নেই তাদের পাশে দাঁড়াবে সরকার এই নীতি কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। সরকারপ্রধানকে এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, গার্মেন্টস খাতসহ বেসরকারি খাতে কেউ চাকরিচ্যুত হলে সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবে। মুজিববর্ষ উদযাপনে সংযম দেখাতে হবে। মানুষ যেন জাতির পিতার প্রতি বিরাগ না হয়ে ওঠে। ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় জলকালো আলোকসজ্জা ও আতশবাজি পোড়ানোর মাধ্যমে মুজিববর্ষ উদযাপন শুরু হয়েছে। এই জাঁকজমক কারো কারো পছন্দ হয়নি। মুজিববর্ষ পালনের কর্মসূচি কাটছাঁট করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই। এই জন্য যে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে তার থেকে কিছু অর্থ করোনা মোকাবিলায় ব্যয়ের ঘোষণা দিলে মানুষ খুশি হবে। আতশবাজির জন্য কত টাকা ব্যয় হয়েছে, সেই অর্থ কীভাবে সংগৃহীত হয়েছে, তা যদি মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে কিছু বিভ্রান্তি দূর হবে। যে কোনো মূল্যে মানুষের মনে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষ কেন মনে করছে যে, সরকার তথ্য গোপন করছে? অবিশ্বাস বা আস্থাহীনতা থেকেই মানুষ গুজবে কান দেয়। সবকিছুতে স্বচ্ছতা থাকলে গুজবের সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়। যে কোনো দুর্যোগকালে গুজব মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। করোনা মোকাবিলায় কোন দেশ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা আমাদের নীতিনির্ধারকদের জানতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে দ্রুত। সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের পরিচালক ভারনন লি বলেছেন, ‘আমরা ভাইরাসের সংক্রমণের চেয়ে এক-দুই ধাপ এগিয়ে থাকতে চাই। আপনি যদি ভাইরাসের পেছনে ছোটেন, তাহলে সব সময় পিছিয়েই থাকবেন।’ আমরা চাইব, আমাদের সরকার আগে থেকেই সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ঘটনার পেছনে না ছুটে অগ্রগামী অবস্থানে থাকার চেষ্টা করবে। দুই. দেশের রাজনীতি, বিশেষ করে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের অনেকেরই আফসোস-অনুশোচনার শেষ নেই। রাজনীতিবিদদের কেউ কেউও রাজনীতি নিয়ে কৌতুক-বিদ্রুপ করতে ছাড়েন না। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি, এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম দুটি কথা প্রায়ই বলতেন ১. রাজনীতির মধ্যে পলিট্রিক্স ঢুকে গেছে, ২. এখন ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করছেন আর রাজনীতিবিদরা ব্যবসা করছেন। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের সুযোগ কম। এক সময় রাজনীতিবিদ বলতে আমাদের চোখের সামনে এমন মানুষের ছবি ভেসে উঠত, যারা সরল-সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত, ভোগ-বিলাসবিমুখ, মানুষের দুঃখ-বেদনায় কাতর, জেল-জুলুম নির্যাতনকে হাসিমুখে বরণ করে নিতে প্রস্তুত একদল মানুষ এখন আর রাজনীতিতে তেমন মানুষ আর খুব একটা দেখা যায় না। জীবনে কিছু চাওয়া-পাওয়ার জন্য যারা রাজনীতি করেননি, রাজনীতি করে বিত্তবৈভব না বাড়িয়ে যারা বরং দিন দিন নিঃস্ব হয়েছেন, তাদের এখন মনে করা হয় ব্যর্থ মানুষ, রাজনীতিতে তারা এখন বাতিল বলে গণ্য। দেশের জন্য যাদের বুকভরা ভালোবাসা আছে, মানুষের দুঃখ মোচনের সংগ্রামে শামিল থাকার মতো একটি দরদি মন আছে কিন্তু পকেট বোঝাই টাকা নেই রাজনীতিতে তারা এখন অপাঙ্ক্তেয়। রাজনীতি এখন কালো টাকার মালিক ও দুর্বৃত্তদের কবলে চলে যাচ্ছে। আমাদের জাতীয় সংসদ এখন ধনী কিংবা ব্যবসায়ীদের ক্লাবে পরিণত হচ্ছে। বিত্তহীন অথচ সৎ ও শিক্ষিত এমন প্রার্থীকে কি কোনো রাজনৈতিক দল মনোনয়ন দিতে আগ্রহী হয়? ভোটাররাও কি এমন মানুষদের ভোট দিতে চান? যাদের অঢেল টাকা আছে, নির্বাচনে যারা দুহাতে টাকা খরচ করতে পারেন, দলের তহবিলে যারা দিতে পারেন মোটা অঙ্কের চাঁদা, মস্তান-পেশিধারীদের যারা পোষ মানাতে পারেন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তাদেরই তো এখন কদর বেশি। পৃষ্ঠপোষকতা করব কালো টাকার মালিক ও দুর্বৃত্তদের আর রাজনীতি কেন অধঃপতিত হচ্ছে সে প্রশ্ন তুলে হাহুতাশ করব এই স্ববিরোধিতা দূর না হলে রাজনীতি ভালো হবে কীভাবে? আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাও একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে সৎ থাকতে দেয় না। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একজন প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের যে সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে কোনো বড় দলের প্রার্থীরা এই ব্যয়সীমার মধ্যে থাকেন না। কোনো কোনো প্রার্থী কয়েক কোটি টাকা ব্যয়েও কার্পণ্য করেন না। অথচ নির্বাচন কমিশনের কাছে যে হিসাব দাখিল করা হয় সেটা নির্ধারিত ব্যয়সীমার মধ্যেই থাকে। নির্বাচন কমিশন তা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়। এজন্য কারো মানসিক অস্বস্তি বা গ্লানিবোধ নেই। এই যে একজন মানুষ সংসদে প্রবেশ করছেন অসত্য তথ্য দিয়ে তিনি পরবর্তী সময়ে সত্য কথা বলবেন, সৎ আচরণ করবেন সেটা কীভাবে আশা করা যায়? নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে কীভাবে? আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও সমস্যার গভীরে প্রবেশ না করে কিছু ওপরভাসা সাময়িক বিষয় নিয়ে অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টি করতেই পছন্দ করে। ক্ষমতায় যাওয়াই যাদের প্রধান লক্ষ্য তারা সমস্যা সমাধানের শর্টকাট পথ খোঁজে। নির্বাচন কমিশন যদি দুর্বল এবং অকার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবেই থেকে যায় তাহলে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নির্বাচনী আইন প্রার্থীদের কঠোরভাবে মেনে চলতে বাধ্য করার মতো শক্ত মেরুদণ্ড যদি নির্বাচন কমিশনের না থাকে তাহলে নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপি দূর হওয়ার সম্ভাবনা কমই থাকবে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থিতা বাতিলের দৃঢ়তা যদি নির্বাচন কমিশন দেখাতে পারে তাহলে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনকে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন ও পক্ষপাতমুক্ত করার ব্যাপারে আদৌ কতটুকু সিরিয়াস? ক্ষমতা প্রত্যাশী রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গিয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের অনুক‚লে ব্যবহার করার বাসনা থেকেই কমিশন শক্তিশালী করার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয় না। আমরা চাই সৎ, শিক্ষিত, জনদরদি মানুষ সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসুক। কিন্তু ভোটারদের মধ্যে কি এ ধরনের প্রার্থীদের ভোট দেয়ার মতো সচেতনতা গড়ে উঠেছে? কোনো রাজনৈতিক দলের কি ভোটার সচেতন করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ আছে? এখন দেখা যাচ্ছে ভোটাররাও টাকাওয়ালা প্রার্থীর দিকেই ঝুঁঁকে থাকেন। সাধারণ ভোটারদের অনেকেই মনে করেন, ভোটের আগেই তাদের যতটুকু ‘দাম’, ভোটের পর আর তাদের খোঁজখবর কেউ রাখে না। তাই ভোটভিক্ষুকদের কাছ থেকে ভোটের আগে যদি নগদ কিছু পাওয়া যায় অথবা শাড়িটা-লুঙ্গিটা জুটে যায় তাহলেই যেন ভোটাররা বর্তে যান। সৎ ও যোগ্য প্রার্থী, তার পয়সা বা পেশিশক্তির জোর না থাকলেও তাকেই যে নির্বাচিত করা উচিত এটা সাধারণ ভোটাররা মনে না করলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না। যারা কোটি টাকা ব্যয় করে নির্বাচনে জেতেন, তাদের তো নির্বাচনের পর প্রথম কাজ হয়ে দাঁড়ায় ওই টাকাটা যে কোনোভাবে সুদে-আসলে তুলে আনা। ফলে এলাকার উন্নয়ন বা মানুষের দুঃখকষ্ট তার কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। তার ব্যস্ত সময় কাটে সেসব জায়গায় ধরনা দিয়ে, তদবির করেÑ যেসব জায়গায় টাকা বানানোর উপায় আছে। সংসদে উপস্থিত থাকা, আইন প্রণয়নে ভ‚মিকা রাখার কথাও তার মনে থাকে না। জাতীয় সংসদে মাঝেমধ্যেই কোরাম সংকটের কথা শোনা যায় তার পেছনেও প্রধান কারণ সম্ভবত এটাই যে, তার কাছে রাজনীতির চেয়ে ব্যবসাটাই বড়। দীর্ঘ চর্চার মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উন্নত হয়। কিন্তু প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চায় আমাদের ব্যাপক অনাগ্রহ। আমরা গণতন্ত্রকে একদিনের ভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ করছি বলেই ভোটব্যবস্থাটাও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারছি না। আমরা ভালো কথা বলে খারাপ হওয়ার প্রতিযোগিতা করি। বিতর্ক এড়ানো নয়, বিতর্কে জড়ানোই আমাদের অধিক পছন্দ। আমরা বৃত্ত ভাঙার কথা বলে বৃত্তবন্দি হওয়ার পথে ধাবিত হই। আমরা কথা ও কাজে এক হব কবে? বিভুরঞ্জন সরকার : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App