×

অর্থনীতি

করোনার প্রভাবে বেড়েছে নিত্যপণ্য মজুদের হিড়িক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২০, ০৯:৪৬ এএম

করোনার প্রভাবে বেড়েছে নিত্যপণ্য মজুদের হিড়িক

নিত্যপণ্য/ ফাইল ছবি

বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলেছে। বন্ধ করা হয়েছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে চলমান ও অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্যমেলা। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠান অফিসে না এসে ঘরে বসেই কাজ করার নির্দেশনা দিচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। এমন পরিস্থিতিতে দেশে আরেকটি দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে- এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জনজীবনে। আর তাই নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য দ্রব্য বেশি বেশি মজুদের হিড়িক পড়েছে। এই ‘সুযোগে’ অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বাজারে সব পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে কোনো পণ্য অতিরিক্ত কেনার প্রয়োজন নেই।

জানতে চাইলে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যে বাড়তি কেনাকাটা করছে, এটা কোনো সমাধান না। কারণ করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট সমস্যা কতদিন থাকবে, তা আমরা কেউ বলতে পারছি না। তাই ১০ দিন বা এক মাসের খাবার মজুদ করে ঘরে রেখে দিলে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং সমস্যা বাড়বে। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের উচিত, এ বিষয়ে নজরদারি করা।

একাধিক বাজার, বিভিন্ন শপিংমল, পাড়া-মহল্লায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ মানুষ চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, লবণসহ নিত্যপণ্য বেশি বেশি কিনছেন। একইসঙ্গে কিনছেন প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধসহ বিভিন্ন জীবাণুনাশক ও শিশুদের ডায়াপার। রাজধানীর সুপার শপ ‘স্বপ্ন’-এর এক কর্মকর্তা বলেন, গত সপ্তাহ থেকেই ক্রেতারা বেশি পরিমাণ পণ্য কিনছেন। বেশি কিনছেন চাল, ডাল, আটা, শুকনা মরিচ, লবণ, গুঁড়ো দুধ, শিশুখাদ্য, ডায়াপার, জীবাণুনাশক ওষুধ ইত্যাদি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে এখনো হয়নি। আমরা যদি শুধু শুধু বাড়তি কেনাকাটা করে বাসায় রেখে দেই তাহলে বাজারে ঘাটতি দেখা দিবে। স্বাভাবিকভাবে হয়তো এক সপ্তাহের বাজার মজুদ করা যায়, এর বেশি দরকার নেই। আর সরকারের কাছে দাবি থাকবে, অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ‘সুযোগ’ কাজে লাগিয়ে মজুদ করতে না পারে।

জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করেছে সরকার। স্থলবন্দরগুলোতে আমদানি-রপ্তানি আগের তুলনায় অনেকটা কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, আরেকটি দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে দেখা দিতে পারে। এ আশঙ্কা থেকেই সাধারণ মানুষ সাধ্য অনুযায়ী পণ্য কিনছেন। এতে ব্যবসায়ীরাও জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে চালের দামে এর প্রভাব বেশি পড়েছে। বাজারে সব ধরনের চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে, স্বপ্ন সুপার শপে বেশ কিছু পণ্যের দাম সম্প্রতি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ক্রেতা। রামপুরা মহানগর প্রজেক্টের স্বপ্ন সুপার শপে বাজার করতে আসা আতিয়া মুস্তারী নামে এক গৃহিণী বলেন, একদিন আগে ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ একদিন পরেই ৫২ টাকা হয়ে গেছে। একইভাবে চাল, আলুসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়েছে ‘স্বপ্ন’।

এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারেও বেড়েছে মানুষের কেনাকাটা। রাজধানীর মতিঝিলে কলোনির বাজারে ব্যাবসায়ী রাজু হোসেন জানান, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আটা, লবণ, শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে বেশি। গত কয়েকদিন ধরেই বেশি করে পণ্য কেনার বিষয়টি দেখা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পাইকারি বাজার থেকে পণ্য পেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পণ্য সংকটের কোনো আলামত বা সংবাদ পাইনি।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা জানান, পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি অনেক ভালো রয়েছে। সংকটের কোনো সম্ভাবনা নেই। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ারও কোনো কারণ নেই। এদিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ায় জনগণ আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পণ্য ক্রয় করছে। কিন্তু সরবরাহে কেনো ঘাটতি নেই, পাইকারি বাজারে কোনো পণ্যের দামও বাড়েনি। এ সময় তিনি আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান।

বুধবার (১৮ মার্চ) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুল আজম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) বাবলু কুমার সাহা, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রি. জে. মো. জাহাঙ্গীর।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে নিত্যপণ্য আমদানিতে কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য কিনে অযথা অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন না। বাজারে কোনো পণ্যে মজুদ ও সরবরাহে ঘাটতি নেই বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। বরং অন্যান্য বছরের চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আমদানি বেশি হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপণ্য বিক্রয়ের সক্ষমতা কয়েকগুন বাড়ানো হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম থেকেই টিসিবি ন্যায্যমূল্যে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি শুরু করবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার তদারকি ইতোমধ্যে জোরদার করেছে। এর আগে লবণ নিয়ে অপপ্রচার রোধে দেশের প্রচার মাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আগামী দিনগুলোতেও আমরা প্রচার মাধ্যমের সহযোগিতা চাই। পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে, মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App