×

সাহিত্য

মুজিব বর্ষের স্পিরিট ব্র্যান্ড ‘বাংলাদেশ’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২০, ০৯:২৯ এএম

মুজিব বর্ষের স্পিরিট ব্র্যান্ড ‘বাংলাদেশ’

মুজিব মানেই বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক, সমৃদ্ধ ও মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুজিব জন্মশতবর্ষে বিশ্বব্যাপী নানা আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান জানাবে জাতি। শপথ নেবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের। স্বাধীনতার স্থপতির স্বপ্নের পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। মুজিববর্ষে তাই ব্র্যান্ডিং হবে ‘বাংলাদেশ’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির শিখরে উন্নীত করার মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো সম্ভব। সরকারের পরিকল্পনাও তাই। অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল কর্মযজ্ঞ ও জনগণের দোরগোড়ায় প্রত্যাশিত সেবা পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের অর্জন ও সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরা হবে বিশ্ববাসীর সামনে।

সরকারপক্ষের মতে, মুজিববর্ষ উদযাপনের স্পিরিট ‘বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড। এ জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম, ইতিহাস, সাফল্য, উন্নয়ন ও অর্জন সবকিছুই ফোকাসে আসবে। ‘বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকে তুলে ধরতে এই মাহেন্দ্রক্ষণকে কাজে লাগাতে চায় সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের উন্নয়নের রূপরেখাই ব্র্যান্ড ‘বাংলাদেশ’ এর মূলমন্ত্র। রূপকল্প-২০২১, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, সাক্ষরতায় শতভাগ অর্জন, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রতিশ্রুতিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নাগরিক সেবা পৌঁছে দেয়া, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। মুজিববর্ষে নানা আয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্যের চিত্র তুলে ধরা হবে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোও অনুরূপ কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে তুলে ধরবে।

সম্প্রতি সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা এক বক্তৃতায় বলেন, আমরা ২০২১-৪১ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে রেখে আমরা ২১০০ সালে ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছি। গ্রামের অর্থনীতিকে আমরা আরো শক্তিশালী করছি। গ্রামের অর্থনীতি যত শক্তিশালী হবে, বাংলাদেশ তত এগিয়ে যাবে। আমাদের শিশুরা যেন উন্নত জীবন পায়, তারা যেন বিশে^র দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী দেশ- এই পরিচয়ে বসবাস করতে পারে সে জন্য আমরা নানা পরিকল্পনা করেছি।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ‘বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডের ফোকাস করার এটাই মোক্ষম সময়। ‘বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকে আমরা ফোকাস রাখব- বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত। আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা অভিমুখে এগিয়ে যাব, এটিই এই মুজিববর্ষ উদযাপনে আমাদের স্পিরিট, আমাদের থিম।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, করোনার কারণে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভিডিওর মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরে সংযোগ থাকবে। বড় গণজমায়েত না হলেও অনুষ্ঠানে কিছুটা নতুনত্ব আনা হয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ উন্নয়নের মহাযজ্ঞ সম্পর্কে বহির্বিশ্ব অবগত। বছরব্যাপী নানা আয়োজনের মাধ্যমে দেশের এই অর্জন তুলে ধরা হবে।

মুজিববর্ষে ব্র্যান্ড ‘বাংলাদেশ’কে স্বাগত জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ভাসছে দেশ। সুযোগসন্ধানীদের ভিড়ে কোণঠাসা সত্যিকারের মুজিবপ্রেমীরা। লুটপাট, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারকে বিব্রত করাই এদের মূল উদ্দেশ্য। উন্নয়ন-সাফল্য ধরে রাখার জন্য আওয়ামী লীগকে ‘হাইব্রিড’মুক্ত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ-আদর্শের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে সোনার বাংলা গড়ায় অবদান রাখলেই ‘বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড সম্ভব।

জানতে চাইলে ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, মুজিব মানেই সারা বিশ্বের শোষিত মানুষের নেতা। এটি বিশ্ব আগে থেকেই অবগত। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্নও বিশ্ববাসী জানে। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম করছেন তার উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য সবাইকে বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শে উজ্জীবিত হতে হবে।

তিনি বলেন, মুজিববর্ষ এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে বিশ্বে অনেক প্রচার হয়েছে। করোনা বিপর্যয়ের কারণে দেশে এবং বিদেশের জমকালো অনুষ্ঠান আপাতত সীমিত হয়েছে; কিন্তু চেতনার দিক থেকে কোনো বিঘি্নত হয়নি। এছাড়া মুজিববর্ষে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ব বঙ্গবন্ধু ও তার বাংলাদেশকে জানবে। এতে একদিকে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে, অন্যদিকে বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়নের ধারাকে বিশ্বের অন্যান্য দেশও অনুসরণ করবে।

এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ‘ব্র্যান্ড’। বিশ্বের অনেক দেশে উন্নয়নের রোল মডেল। তবে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন ভারত-পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে রয়েছে বলে যে মন্তব্য করেছেন, সে ক্ষেত্রে আমরা এখনো পৌঁছতে পারিনি। বড় ধরনের আর্থিক সংস্কার এখনো বাকি আছে। অবশ্য বড় বড় অনেক প্রকল্প এখনো বাস্তবায়নাধীন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেই ব্র্যান্ড ‘বাংলাদেশ’ সম্ভব। সেদিন খুব দূরে নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App