×

পুরনো খবর

বঙ্গবন্ধু কী করেছিলেন আমাদের জন্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২০, ১২:১৯ পিএম

বঙ্গবন্ধু কী করেছিলেন আমাদের জন্য

বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ মজিবুর রহমান।

ভাবিনি মুজিববর্ষ দেখে যাব। ভাবিনি, এরকম বাংলাদেশ দেখে যাব। না, ভাবার কারণ, আমাদের জেনারেশনের গত শতকের ষাটের দশক থেকে এক ধরনের ভায়োলেন্সের মধ্যে দিন যাপন করেছি এবং এখনো করছি। এ পরিস্থিতিতে মৃত্যু যে কোনো সময় হাজির হতে পারে। কিন্তু সে মৃত্যু এখনো এগিয়ে যেতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধুর উত্থান বিকাশ মৃত্যু সব শেখ মুজিববর্ষ আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে। এক জীবনে এত কিছু দেখা। ইতিহাসের সাক্ষী হওয়া সবার ভাগ্যে জোটে না। আর যে বাংলাদেশে দেখেছি, অধিকাংশ মানুষ ক্ষুধার্ত সে দেশে তারই কন্যার হাত ধরে দেখছি পদ্মা সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে। বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফেরেন, তখন অনেকে বলেছিলেন, তিনি যেন প্রধানমন্ত্রী না হন। তিনি থাকবেন সবার অভিভাবক হয়ে। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যারা দেখেনি তাদের বোঝানো যাবে না বাংলাদেশের অবস্থা তখন কী ছিল? আসলে কিছুই ছিল না, ছিল ভায়োলেন্স, খাদ্যাভাব, বিশৃঙ্খলা। সবাই স্বাধীন। এ মনোভাব যখন সবার তখন কি মুজিব ছাড়া কেউ পারতেন সেই বাংলাদেশ শাসন করতে? বাঘের পিঠে সওয়ার হতে? পারতেন না। ভারতীয় সৈন্য ফেরত যেত, যেত না। এখনো জার্মানি, জাপান, কোরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য যায়নি। ৭০ বছর হয়ে গেল। অস্ত্র কি জমা পড়ত? পড়ত না। স্বীকৃতি কি এত সহজে আসত? আসত না। অনেকে বলেছেন, তিনি ভালো প্রশাসক ছিলেন না। কেন ছিলেন না, সে প্রশ্নের জওয়াবও তারা দিতে পারবেন না। আমিতো গবেষণা করে দেখেছি, আজকের বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান, বেসিক আইন তিনিই করে দিয়েছিলেন। আজ বাংলাদেশে যত প্রতিষ্ঠান কার্যকর দেখছি এবং অনেক আইন ও পুনর্বাসন প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সরকারই গ্রহণ করেছিল। আমরা সেগুলো বেমালুম ভুলে গেছি। একদিক শূন্য থেকে দেশ গড়া, আন্তর্জাতিক চাপ, মানুষের মহাপ্রত্যাশা সব মিলে সরকারকে ব্যতিবস্ত করে তুলেছিল। কিন্তু তার মধ্যেই এইসব প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি গড়া হয়েছিল। আমি এখানে তার ৮৫টির তালিকা দিচ্ছি-

বঙ্গবন্ধুর সরকার আমলে গৃহীত পদক্ষেপ... ১. অস্থায়ী শাসনতন্ত্র আদেশ জারি, ১১ জানুয়ারি ১৯৭২, বাংলা ২৭ পৌষ, বা ১৩৭৮ ২. আদমজী জুট মিল উদ্বোধন, ১৯৭২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ ৩. আমদানি নীতি ঘোষণা, ১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল ৪. ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন, ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট-১৯৭৫ পাস হয় ১৪ জুলাই ১৯৭৫ ৫. গণপরিষদ অধিবেশন জারি, ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল ৬. গণপরিষদ আদেশ জারি, ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ ৭. চতুর্থ সংশোধনী, ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ ৮. জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ গঠন, ২৫ জানুয়ারি ১৯৭২ ৯. জাতীয় পতাকা চূড়ান্তকরণ, ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি ১০. জাতীয় রক্ষীবাহিনী, ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ ১১. জাতীয় সঙ্গীত চূড়ান্তকরণ, ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২ ১২. জাতীয়করণ, ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ ১৩. তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন, ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর ১৪. তৃতীয় সংশোধনী, ২৮ নভেম্বর ১৯৭৪ ১৫. বাকশাল, ১৯৭৫ সালের ৬ জুন ১৬. দ্বিতীয় সংশোধনী, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ ১৭. নির্বাচন কমিশন আদেশ জারি, ২৩ মার্চ ১৯৭২ সালে প্রদত্ত এবং সরকারি হ্যান্ড আউটে ১৮. ন্যাশনাল ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন প্রদানের নির্দেশ, ১২ জানুয়ারি ১৯৭৩ ১৯. পরিত্যক্ত সম্পত্তি প্রসঙ্গ, ১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির ১৬ নম্বর আদেশবলে ২০. পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি জেলায় বিভক্ত ১৯৭৫, দৈনিক ইত্তেফাক, ২৮ জানুয়ারি ১৯৭৫ ২১. প্রথম জাতীয় শোক দিবস, ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২ ২২. প্রথম বাংলায় গেজেট প্রকাশ, ১৪ জানুয়ারি ১৯৭২ ২৩. প্রথম বাজেট, ১৯৭৩ সালের ২ জুন ২৪. বাংলাদেশ সরকার (চাকরি) আদেশ ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির ৯নং আদেশ, ১৯৭২) ২৫. বাংলাদেশ সরকার (চাকরি বাছাই) আদেশ, ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির ৬৭নং আদেশ, ১৯৭২) ২৬. বাংলাদেশ সরকার (চাকরি বাছাই (সংশোধনী) আদেশ, ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির ৯২নং আদেশ, ১৯৭২) ২৭. প্রেস এন্ড পাবলিকেশনস অর্ডিন্যান্স বাতিল, ২৮ আগস্ট ১৯৭৩ ২৮. বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক, ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২ ২৯. বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, ১৯৭৩ ৩০. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ, ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদশ ৩২-এর মাধ্যমে ৩১. বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ২৭নং আদেশবলে ১৯৭৩ সালে ৩২. বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন, ১৭ এপ্রিল ১৯৭২ ৩৩. বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ, ১৯৭২, ২৪.১.১৯৭২ ৩৪. বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, ১৯৭৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৩৫. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে ৩৬. বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর ৩৭. বাংলাদেশ ব্যাংক (জাতীয়করণ) আদেশ পাস, ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ (রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ২৬, ১৯৭২) ৩৮. বাংলাদেশ ভূমি মালিকানা (সীমিতকরণ) আদেশ ১৯৭২, রাষ্ট্রপতির ৯৮নং আদেশবলে ৩৯. বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, ১৯৭৪ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লায় ৪০. বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ৪১. বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক, ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ১২৯ নং আদেশবলে ৪২. বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল, ১৯৭২ সালের মার্চ ৪৩. বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী (অবসর) আদেশ ১৯৭২ ৪৪. বাংলাদেশ হাইকোর্ট আদেশ জারি, ১৯৭২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ৪৫. বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন, ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির ৭নং আদেশবলে ৪৬. বাংলাদেশ হৃত সম্পত্তি পুনরুদ্ধার আদেশ ১৯৭২, ১৯৭২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ৪৭. বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ১২৬ নম্বর আদেশবলে ৪৮. বীমা করপোরেশন আদেশ জারি, ২৬ মার্চ ১৯৭২ ৪৯. বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসন ও বঙ্গবন্ধু, ১৯৭২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ৫০. বেতবুনিয়া উপকেন্দ্র স্থাপন, ১৪ জুন ১৯৭৫ ৫১. মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর, রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৯৫ ৫২. মুক্তিযুদ্ধের পদক প্রদান, ১৫.১.১৯৭৩ ৫৩. মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব, ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৫৪. যৌথ নদী কমিশন, ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে ৫৫. রাষ্ট্রপতি সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, ২৫ জানুয়ারি ১৯৭২ ৫৬. রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব (তৃতীয় সংশোধনী) আদেশ, ৫ আগস্ট ১৯৭২, রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৯৫ ৫৭. শিপিং কর্পোরেশন গঠন, ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি ৫৮. শিল্পকলা একাডেমি, ১৯৭৪ সালে ৩১নং ১৯৭৪ অ্যাক্টের ৫৯. সংবিধানের প্রথম সংশোধনী ১৫.৭.১৯৭৩ ৬০. সরকারি অফিসে বিলাসিতা বন্ধে নির্দেশ, ১৯৭২, দৈনিক আজাদ ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ ৬১. সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য নির্দেশ, ১৯৭২ সালের ২৫ এপ্রিল ৬২. সশস্ত্র বাহিনী পুনর্গঠন, ১৯৭২, ৬.৩.৭২, ৮.৪.৭২ ৬৩. সস্তায় রেডিও-টিভি দেওয়ার ব্যবস্থা, ২ জুলাই ১৯৭৫ ৬৪. সিভিল সার্ভেন্ট ট্রেনিং একাডেমি স্থাপন, দৈনিক পূর্বদেশ, ৯ এপ্রিল, ১৯৭৩ ৬৫. স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বেতন কমিশন, ১৯৭২ সালের ১৩ জুলাই ৬৬. প্রশাসন ও চাকরি পুনর্গঠন কমিটি, ১৯৭২ সালের ১৫ মার্চ ৬৭. বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বি আই বি এম), ১৯৭৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ৬৮. বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ, ১৯৭২ ৬৯. বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, ১৯৭২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি ৭০. বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (বিমক), ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির ১০ নম্বর আদেশবলে ৭১. বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, ১৯৭২ সালের ৪৬নং আদেবলে ৭২. ঢাকা কর্পোরেশন সৃষ্টি, ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৭৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ ৭৪. ঘোড়দৌড় নিষেধ করে আদেশ, ১৯৭২ সালের ১৫ জানুয়ারি ৭৫. আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ সালের ১৯ জুলাই ৭৬. জাতীয় প্রতীক, ১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ৭৭. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ১৯৭৩ ৭৮. সাধারণ ক্ষমা, ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর ৭৯. বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি ইনস্টিটিউট, ১৯৭৩ ৮০. বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন, ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি আদেশবলে ৮১. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর ৮২. বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা, ১২৮, ১৯৭২-এর অধীনে ১৯৭২ সালের অক্টোবর ৮৩. শিশু আইন, ১৯৭৪ সালের ২২ জুন চিন্দ্রেন অ্যাক্ট ৮৪. ২৯ ব্যাংক বীমা কোম্পানি সরকারি খাতে গ্রহণ, ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি ৮৫. ২৩ মার্চ ৭১ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছুটি এছাড়া, তেল গ্যাস উত্তোলনের নীতি, স্থল, জল-এর সীমা নির্ধারণ, ছিটমহল বিনিময়, স্বাধীন নির্জোট পররাষ্ট্র নীতি। কতো বলব! আমরা এগুলো ভুলে গেছি। আমিতো মনে করি বাংলাদেশ সৃষ্টিই শুধু নয়, এই রাষ্ট্র যাতে টিকে থাকে এবং শক্ত ভিত্তির ওপর গড়ে ওঠে সে ব্যবস্থাও তিনি করে গিয়েছিলেন। আত্মবিশ্বাস আর সাহসও ছিল তাঁর। দলের ব্যাপ্তি, মানুষের প্রতি ও নিজের প্রতি আস্থা তা আরো বাড়িয়েছিল। সে কারণে ছয় দফাকে এক দফায় পরিণত করতে পেরেছিলেন। আর এটিই ছিল তাঁর অস্পষ্ট ছবি বা স্বপ্ন। এ লক্ষ্যে যে তিনি অবিচল ছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁর যে সাহস ও আত্মবিশ্বাস ছিল তা ফুটে ওঠে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময়। ১৯৭২ সালে, পাকিস্তান থেকে মুক্ত হওয়ার পর তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে ফিরলেন শেখ মুজিব। এখন তার ভূমিকা আর আন্দোলনকারীর নয়। এখন তার ভূমিকা যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন ‘সোনার বাংলা’র তা পূরণ করার এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত সে লক্ষ্যেই অক্লান্তভাবে কাজ করে গেছেন। ঐ সময়ের মধ্যেই দেশের পুনর্গঠন শুরু হয় এবং আমরা সংবিধান লাভ করি। বঙ্গবন্ধু বা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল দেশকে একটি সংবিধান প্রদান। আর কোনো দেশে এরকম একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এত দ্রুত একটি সংবিধান প্রদান সম্ভব হয়েছে বলে জানা নেই। এ সংবিধানে রাষ্ট্রের চারটি মূলনীতি ঘোষণা করা হয়েছিল, তৎকালীন পরিস্থিতিতে তা খানিকটা র‌্যাডিক্যালও বলা যেতে পারে। সংবিধানের মূলনীতিসমূহ ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। মূলত মুক্তিযুদ্ধ যে ক’টি কারণে হয়েছিল সংবিধানের মূলনীতিতে তাই বিধৃত হয়েছিল বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতা। যে কারণে, প্রতিক্রিয়াশীলরা প্রথমেই মূলনীতিসমূহ, বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আঘাত হেনেছিল। এছাড়া সংবিধানে বিস্তৃত হয়েছিল একজন মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ, রাষ্ট্রের দর্শন। অন্যকথায় এভাবে বিষয়টি দেখা যেতে পারে, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক সিভিল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। আর ১৯৭২ সালের সংবিধান বিধৃত হয়েছিল সিভিল সমাজের প্রতিষ্ঠানসমূহ। এককথায় এই সংবিধান বাংলাদেশে সিভিল সমাজের ভিত্তি দৃঢ়ভাবে পত্তন করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আমি মনে করি এ সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে, তা হলো রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ। ধর্মমাশ্রিত রাজনৈতিক দলসমূহ নিষিদ্ধকরণ। সমাজতান্ত্রিক বা সাম্যবাদী রাষ্ট্র ছাড়া আর কোনো রাজনীতিবিদ এমন কাজ করার দুঃসাহস দেখাতে পারেননি। আর ‘ধর্ম’ যেভাবে এখন অধর্মের ভিত্তিতে গ্রাস করছে সবাইকে তাতে মনে হয় এ সাহস আর কেউ দেখাতে পারবে না। শেখ মুজিবের হত্যার প্রায় তিন দশক পর মানুষ আবার অনুভব করেছে, শেখ মুজিব কী ছিলেন। কেন তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি পেয়েছিলেন। মানুষ আজ বুঝতে পেরেছে, তিনি বাঙালিকে বড় করতে চেয়েছিলেন, আর মানুষকে বড় করার একটি পথ নিরস্ত্র মানুষের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া। তাঁর হত্যার পর কতদল ও কতজন শাসন করল বাংলাদেশ কিন্তু মানুষের মন থেকে তো তাকে মোছা গেল না, যে চেষ্টা এখনো অব্যাহত। কারণ, আজ আমরা দেখছি, আমরা একবারই সে মর্যাদা পেয়েছিলাম, সে পথ একবারই উন্মুক্ত হয়েছিল আমাদের জন্য ১৯৭১ সালে, যখন শেখ মুজিবুর রহমান নামে একজন নিরস্ত্র বাঙালির নেতৃত্বে আমরা সব ধরনের সশস্ত্রদের হটিয়ে দিয়েছিলাম। এ জন্য আমি গর্বিত, আমার উত্তরসূরিও হবে গর্বিত। বাঙালি ও বাংলাদেশ নামটিই বেঁচে থাকবে সে জন্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App