×

জাতীয়

শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত সহসাই

Icon

nakib

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২০, ০৯:৫৮ এএম

করোনা আতঙ্কে অনেক অভিভাবক সন্তানকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী উপস্থিতি অর্ধেকে নেমে এসেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে করোনা সংক্রমণের একাধিক ঘটনা শনাক্তের পর বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি জোরালো হয়েছে। এই দাবিকে পোক্ত করতে গতকাল রবিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে উচ্চ আদালতে রিটও হয়েছে। সংক্রমণের আশঙ্কায় ক্যাম্পাস বন্ধের দাবিতে অনশনে বসেছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ক্লাস বর্জন করেছেন। জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্লাস বর্জনের পথে। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ রাখার বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। সহসাই আসতে পারে এমন ঘোষণা। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এমন আভাস মিলেছে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যেও। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতের অপেক্ষায়। করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের বিষয়ে গতকাল কথা বলেন সরকারের এই তিন মন্ত্রী। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গতকাল বিকালে ফেসবুকে লিখেছেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে সরকার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এই ঝুঁকি বিশ্লেষণের একটি অংশ। প্রতিনিয়ত অবস্থা বিশ্লেষণ হচ্ছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে আমরা বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়েই এগুচ্ছি। সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর চোখ রাখতে ও তা মেনে চলতে বলেন তিনি। এর আগে সকালে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ ১৮টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে এক বৈঠক শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় নেবে, এ সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরপরই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে স্কুল-কলেজ বন্ধের যে দাবি উঠেছে তা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনায় আছে। আমাদের ভাবনায়ও আছে। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। এর আগে রোববার সকালে দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের প্রেক্ষাপটে সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ চেয়ে হাইকোর্ট রিট করা হয়েছে। এ রিটে দেশের স্থল, নৌ এবং বিমানবন্দরও বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এদিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস সাময়িক বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। গতকাল ডাকসু ভবনে এক বৈঠক শেষে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ডাকসুর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক বন্ধের আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা মনে করি বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থীবান্ধব। তাই বিশ্বব্যাপী এ মহামারি মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের দাবি পূরণ করবে। তবে সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে বিশ^বিদ্যালয়ের ৪৬টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদের অধিকাংশ বিভাগেই মিডটার্ম পরীক্ষা চলছিল। এসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে। এদিকে করোনা ভাইরাসের মহামারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে অনশন অব্যাহত রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী। গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তারা অনশনে বসেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট) সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রত্যেক বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধিরা (সিআর) গত শুক্রবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকে গত দুদিন তারা ক্লাসে যাননি। এরইমধ্যে শিক্ষার্থীদের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে ক্লাস বর্জন অব্যাহত রাখবেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি এখনো। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে আতঙ্কে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দ্রুত ক্যাম্পাস বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নিলে ক্লাস বর্জনের কথা ভাবছেন তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারি নির্দেশনা ছাড়া আপাতত তাদের করার কিছু নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App