×

সারাদেশ

প্রশাসনের নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সাংবাদিক আরিফুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২০, ০৭:০০ পিএম

প্রশাসনের নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সাংবাদিক আরিফুল

হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। ছবি: ভোরের কাগজ

অবশেষে রহস্য জনকভাবে জামিন পেলেন বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার (১৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টায় তাকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: সুজাউদ্দৌলা তার জামিন মঞ্জুর করেন। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় আরিফুলের জামিনের জন্য কোন আবেদন করা হয়নি। তার জামিনকে ঘিরে সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভিন স্ব-প্রণোদিত হয়ে জামিনের ব্যবস্থা করেছেন। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভিনসহ এ ঘটনায় জড়িতদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ খবরে সাংবাদিকরা স্বস্তি প্রকাশ করলেও তাদের শুধু প্রত্যাহার নয় দেশের প্রচলিত আইনে বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

গুরুত্বর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে আমার বাড়ির দরজা ভেঙ্গে আমাকে প্রথমে আঘাত করে আরডিসি। তিনি আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন এবং টেনে হেচড়ে বের করে নিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত এবং চোখ বেঁধে ফেলেন। এরপর ইনকাউন্টার দেয়ার কথা বলে আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। আমি অনেক আকঁতি-মিনতি করি। আমার প্রাণ ভিক্ষা চাই তাদের কাছে। এরপরও তারা ক্ষান্ত হচ্ছিলেন না।

আমাকে বার বার বলতেছিলেন, কলমা পড়ে নে কলমা পড়ে নে। এ সময় আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ পাড়তে থাকে। এরপর এক জায়গা থেকে ঘুরিয়ে আমাকে আবারও ডিসি অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে কোন রকম হাত দিয়ে চোখের বাঁধন আলগা করে দেখি যে আমি ডিসি অফিসে। এরপর আমাকে আবার শক্ত করে চোখ বেঁধে আমাকে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে আরডিসি’র নেতৃত্বে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং নির্যাতন করা হয়। আরডিসি নিজেই আমাকে মার দিয়েছেন। আমাকে বিবস্ত্র করে আমার ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। এরপর আমার কাছ থেকে ৪টি সিগনেচার নেয়া হয়েছে চোখ বাঁধা অবস্থায়। কিসের সিগনেচার নিয়েছে সেটা আমি এখন পর্যন্ত জানি না। এরপর তাড়াহুড়া করে তারা আমাকে কারাগারে নিয়ে যায়। আমাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার চিহ্ন আমার সারা শরীরে রয়েছে।

জামিনের আবেদন করেছেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে আসার পূর্ব পর্যন্ত যা হয়েছে সব আমার অমতে হয়েছে। আমাকে ফোর্স করে করা হয়েছে।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট আনসার সদস্যদের নিয়ে তার শহরের চড়ুয়া পাড়ার বাড়িতে যায়। একপর্যায়ে জোড় পুর্বক দরজা ভেঙে তার ঘরে প্রবেশ করে তার স্ত্রী-সন্তানের সামনেই তাকে মারধর করে ধরে নিয়ে আসে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে এসে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারনের পর আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা রাখার অভিযোগে তাকে ১ বছরের কারাদণ্ড দেয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। জামিন পাওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অমানুষিক ও বর্বর নির্যাতনের বর্ণনা দেন নির্যাতিত সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম।

আহত অবস্থায় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের জামিন নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবরে জেলা প্রশাসকসহ জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হাসপাতাল চত্ত্বরে আসেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় হাসপাতালে এসে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তার সহকর্মী সাংবাদিক ও তার পরিবারের সদস্যরা।

আরিফুলের বড় বোন শিক্ষিকা রিজিকা বেগম জানান, আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জামিনের কোন আবেদন করা হয়নি। তারা আমার ভাইকে মারার উদ্দেশ্যে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সাংবাদিকদের তৎপরতায় তা পারেনি। আমি আমার ভাইয়ের ওপর নির্যাতনের বিচার চাই।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব জানান, সাংবাদিকরা আরিফুলের নি:শর্ত মুক্তির দাবি করে আসলেও আদালত ২৫ হাজার টাকা মুচলেকায় মামলাটি চলমান রেখে তার জামিন প্রদান করেন। এ অবস্থায় সাংবাদিক ও এলাকাবাসী আরিফুলের নি:শর্ত মুক্তিসহ মামলা প্রত্যাহার ও জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App