×

মুক্তচিন্তা

দখলে কাবু সাঙ্গু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২০, ০৯:২৩ পিএম

নদীমাতৃক বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার একটি নদী ‘সাঙ্গু’। ‘শঙ্খ’ নামেও এটি পরিচিত। ২৯৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ও প্রায় ১১৯ মিটার প্রস্থের সর্পিলাকার পাহাড়ি নদীটি চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। সাঙ্গু নদী পর্যটন নগরী পার্বত্য জনপদ বান্দরবানের প্রধানতম নদী। জেলা শহরটি এ নদীর তীরেই অবস্থিত। ফলে এখানকার বাসিন্দাদের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সাঙ্গুর সম্পর্ক অনেক পুরনো ও অবিচ্ছেদ্য। বর্তমান সময়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ভরা বসন্ত চললেও এখনো জেলার অভ্যন্তরে অনেক মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নদীপথ। এছাড়া অনেকের নিত্য ব্যবহারের পানির প্রধান উৎস এটি। এই নদীটি একদিকে যেমন জীবন ও জীবিকার পথ সুগম করছে তেমনি এটাকে কেন্দ্র করেই সমৃদ্ধ হচ্ছে জেলার পর্যটন সম্ভাবনা। অবারিত সবুজ পাহাড়ের সঙ্গে সাদা মেঘেদের মিতালি, স্বচ্ছ পানির ঝরনা, বিশাল সব পাথর আর রোমাঞ্চ জাগানিয়া বিপজ্জনক সর্পিলাকার উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তার সঙ্গে শহরের মাঝখানে কিংবা দুই পাহাড়ের মাঝে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে শান্তভাবে বয়ে চলা সাঙ্গু নদী উন্মোচন করেছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দ্বার। যার স্পর্শে সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ি জেলার স্থানীয় অর্থনীতিতে এক কথায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কিন্তু নদীর ধারে বসবাসরত বাসিন্দাদের অনৈতিক সুবিধা লাভের চেষ্টা, লোভ আর চরম অসচেতনতায় গুরুত্বপূর্ণ নদীটি দিন দিন তার জলুস হারাচ্ছে। দখল আর দূষণের নিত্য আঘাতে পরিবর্তন হচ্ছে এর আসল সৌন্দর্য। নদীর ধারে মলমূত্র ত্যাগ, নোংরা ময়লা-আবর্জনার স্তূপ আর বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাষণের সরাসরি লাইন সব মিলিয়ে মারাত্মক দূষণের শিকার নদীটি। সেইসঙ্গে পরিত্যক্ত পলিথিন আর প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে নাব্যও হুমকির মুখে। এর সঙ্গে কতিপয় প্রভাবশালী মহল দ্বারা প্রতিনিয়ত চলছে বালু উত্তোলন। কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু তদারকি ও আইনের মারপ্যাঁচে প্রভাবশালীদের দখলের কবলেও কাবু সাঙ্গু। কেবল বান্দরবান জেলা শহরের বাজার এলাকার অংশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে মারাত্মক দূষণ আর অবৈধ দখলের দৌরাত্ম্য স্পষ্ট হবে। একটা সময় শুষ্ক মৌসুমে নদীর চর ছিল শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ। বিভিন্ন বয়সের স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই হাঁটা ও ব্যায়ামের জন্য ভিড় করতেন নদীর ধারে। কিন্তু সেসব এখন অনেকটাই অতীত। দখল আর দূষণের জোরে সেসব এখন প্রায় অতীত বললেই চলে। ভরা বর্ষার পর নদীর ধারে উর্বর পলি জমা হতো। তাতে অনেকেই বিভিন্ন ফসল বুনে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ময়লা-আবর্জনার স্তূপের কারণে এখন সেটাও কমে আসছে। নদীর ধারের অনেকেই তাদের আবাসিক ও ব্যবসায়িক স্থাপনা কিংবা ভবনের বর্জ্য পদার্থ সরাসরি নদীতে ফেলছেন। মারাত্মক দূষণ ও নাব্য নষ্টের প্রভাবে সাঙ্গু নদীতে থাকা মাছের বৈচিত্র্য আজ কমতির তালিকায়। নদীর ধারের অনেক লোকের নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের পানির একমাত্র উৎস সাঙ্গু নদী। কাপড় ধোয়া, গোসল করা ও নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এর পানি। এছাড়া বাজারের গণশৌচাগারে ব্যবহার করা হচ্ছে নদীর পানি। শহরে পুকুরের সংখ্যা কমে যাওয়ার দরুন এর পানি শহরের অনেক খাবার হোটেলেও ব্যবহার করা হচ্ছে! ফলে সংশ্লিষ্টদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তাও প্রশ্নের মুখে। এই জেলার মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সাঙ্গু নদীর নাড়ির সম্পর্ক। এই সম্পর্ক ধ্বংস করে পাহাড়ি জনপদের সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা খুব একটা জুতসই হবে না এটা নিশ্চিত। তাই নদীমাতৃক দেশের পাহাড় কন্যা পার্বত্য নগরী বান্দরবানের অফুরন্ত সম্ভাবনার বিকাশমান পর্যটন শিল্পকে গতিশীল ও টেকসই করতে সাঙ্গু নদীকে দখল ও অনিয়ন্ত্রিত দূষণের কবল থেকে মুক্ত এবং নিয়ন্ত্রণহীন বালু উত্তোলন রোধ করে এর নাব্য নিশ্চিত করার আশু কার্যকর পদক্ষেপ কাম্য। সহকারী শিক্ষক ভাগ্যকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বান্দরবান। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App