×

সম্পাদকীয়

আবারো আক্রান্ত সাংবাদিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২০, ০৯:৩১ পিএম

আমাদের দেশে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিল ইসলাম রিগানকে মধ্যরাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মধ্যরাতে আদৌ কোনো কার্যক্রম চালানো যায় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমন নির্মম ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ। ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং জড়িতদের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না গেলে প্রশাসন তথা সরকারের ওপরই জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলবে। জানা যায়, শুক্রবার মধ্যরাতে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফের বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে বসতঘরের দরজা ভেঙে প্রথমে মারধর, তারপর টেনেহিঁচড়ে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রাত আড়াইটায় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে দেয়া হলো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। আরিফ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংল ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি। সাংবাদিক আরিফের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে অনিয়মের সংবাদ পরিবেশন এবং ফেসবুকে দুর্নীতি সংক্রান্ত পোস্ট দেয়ার কারণে উনি ক্ষুব্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এই ঘটনায় সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গতকাল জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে কুড়িগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে জামিন দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের কারণে তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। সে অনুযায়ী রাতের বেলা কোনো নাগরিককে ঘর থেকে তুলে এনে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা করাটা অবৈধ। বলাই বাহুল্য, বর্তমানে সাংবাদিকদের জীবন চরম অনিরাপদ। দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হিসেবে সাংবাদিকতায় নিয়োজিতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’। একদিকে এমন আইন ও নানারকম ভয়ভীতি-হুমকির কারণে সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত হয়ে উঠছে; আরেকদিকে, শারীরিকভাবে হামলা ও হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। এসব হামলা-নির্যাতন সাংবাদিকতা পেশাকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে এবং তথ্য প্রকাশে বাধা দেয়ার মধ্য দিয়ে তা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকেও খর্ব করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জেলা প্রসাশক যা করলেন প্রতিশোধস্পৃহা কেবল নয়, জনগণকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়েছে। যে কারণেই আরিফের ওপর নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটুক না কেন, দায়ীদের কঠোর আইনের আওতায় এনে ত্বরিত বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App