×

সারাদেশ

সাংবাদিককে তুলে নিয়ে ‘জেলে‘ দিলেন ডিসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২০, ০৪:৫৩ পিএম

সাংবাদিককে তুলে নিয়ে ‘জেলে‘ দিলেন ডিসি

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম

অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে বাসা থেকে শুক্রবার (১৩ মার্চ) দিবাগত রাতে দরজা ভেঙ্গে তুলে নিয়ে যায় জেলা প্রশাসকের মোবাইল কোর্ট। রাত ২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে মিথ্যা মাদক মামলায় তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রাতেই জেল হাজতে পাঠায়।

আরিফুলের পারিবারিক সুত্র জানায়, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট আনসার সদস্যদের নিয়ে তার বাড়িতে যায়। এক পর্যায়ে জোড় পূর্বক লাথি মেরে দরজা ভেঙে তার ঘরে প্রবেশ করে, সেখানেই স্ত্রী সন্তানের সামনে আরিফুলকে বেধড়ক মারধর করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিকের বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা রাখার অভিযোগ করে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

তার স্ত্রী জানান, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে খাওয়া শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় হঠাৎ কে বা কারা দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে আমার স্বামী ফোনে স্বজনদের বিষয়টি জানান। এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে তারা ঘরে ডুকে আমার স্বামীকে মারধর শুরু করে। আমি বাধা দিতে গেলে তারা আমাকেও মারতে উদ্যত হয়। পরে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। শুধুমাত্র আনসার সদস্যদের নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারেন কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইন অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার আগে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সহযোগিতা নেবেন। কিন্তু এখানে তা পালন করা হয়নি।

কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি মাহফুজুর ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ডিসি অফিসের লোকজন সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নিয়ে এসে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম তার ফেসবুক পেজে  “মুজিব বর্ষের প্রাক্কালে কুড়িগ্রামে নিয়োগ বাণিজ্যের জনশ্রুতি চলছে! ঘটনা কি সত্যি?” এরকম একটি পোষ্ট দেন। সেই পোষ্টে চাকুরী প্রার্থী ও সুধি মহল বিভিন্ন ধরণের মতমত প্রদান করেন। (উল্লেখ্য তার এ পোষ্টটি দেয়ার সময় থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।)

এছাড়াও কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল ইসলাম এ বিষয়েও বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন।

এ বিষয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে রিন্টু বিকাশ চাকমা ও জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে এসে তার নামে মাদকের মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হলেও কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান জানান, তার নামে ইতোপূর্বে মাদক সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দুলাল বোস জানান, আমার জানা মতে সাংবাদিক আরিফুল মদ-গাঁজা তো দুরের কথা কোনো দিন সে একটি সিগারেটও স্পর্শ করেনি। বরং যারা ধুমপান করে তাদেরকে বিভিন্ন সময় তিরস্কার করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App